ভারতভূমিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা এক রমণীর কথা ।

প্রেমজিভাই মেঘজিভাই ঠক্কর । গুজরাটি । কট্টর হিন্দু । নিরামিষভোজী । তিনি ছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নার ঠাকুরদা । হ্যাঁ ওই বাবার বাবা । দাদা। 
প্রেমজিভাইয়ের  ছিল  মাছের  ব্যবসা ।  আত্মীয় - স্বজন , পাড়া - পড়শী সবাই এই ব্যবসার কারণে তাঁকে " একঘরে " করে রেখেছিল । সে আমলে হত  এমন কান্ড । ছোট ছোট ব্যাপারে গ্রামের কারো কারো ধোপা , নাপিত বন্ধ হয়ে যেত । নিরামিষাশী মানুষ মাছের ব্যবসা করবে এ কেউই ভালো চোখে দেখেনি । তিনি  মাছের ব্যবসা বন্ধ করে দিলেন , তবু বাকিরা তাঁকে অচ্ছুৎ করে রেখে দিলেন । খুব রাগ হল তাঁর । রাতারাতি সপরিবারে তিনি চার ছেলেকে নিয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করলেন । এ গেল গোড়ার ইতিহাস । 

       এ গল্প তবে দিনা  জিন্নার । 

         এই অস্থির সময়ে আমাদের ফ্রেন্ডলিস্টের অনেক  মুসলিম  ভাই বোন  ভাবছেন এবং লিখছেনও  , এই কি আমার দেশ ? এ কার দেশ আসলে ?  ...... ডাক্তারও আছেন তার মধ্যে  ,   ..  হয়তো মনের মধ্যে ক্ষোভ ও না , অনেকটা দুঃখও এসে জমা হচ্ছে  । তাঁরা লিখছেন বলেই জানতে পারছি , তাঁদের একজন হিন্দুভাই এসে বলছেন , --- " ডাক্তারবাবু সোমবার মেয়ের অপারেশনের সময় আপনি থাকছেন তো ? আপনাকে খুব ভরসা করি , আপনি যেদিন থাকবেন সেদিনই অপারেশন হবে ।  
 তো তাঁরা মিটিং মিছিল এ যেতে পারছেন না ।   মন দিয়ে এমার্জেন্সি ডিউটি করছেন । পড়ে ভালো লাগে । চোখে অল্প জল আসে না তা নয় ..........

সেইজন্য এই  দিনা' র কথা । 

ভারতভূমিকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসা এই রমণীর কথা । 

মহম্মদ আলী জিন্নার একমাত্র কন্যা , একমাত্র সন্তান , একমাত্র উত্তরাধিকারী । 1919 সালের 15ই আগস্ট লন্ডনে  জন্ম । তাঁর ভারতভূমির প্রতি কোন টান থাকারই কথা নয় । বাবা পাকিস্তানের সর্বেসর্বা হতে চলেছেন । তখন 1943 । স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হবার পর ছেলে নাসলি কে নিয়ে একা । অর্থনৈতিকভাবে বেশ বিপর্যস্ত ।

 ওপারে অর্থাৎ পাকিস্তানে যাওয়া মাত্র  পাওয়ার , পজিশন , মানি সবই তাঁর আয়ত্তে আসবে । কিন্তু তিনি যাননি । প্রিয় শহর বম্বে ছেড়ে তিনি নড়েননি । 

1938 সালে পার্সি ছেলে পছন্দ করেন দিনা । নাম নেভিল ওয়াদিয়া । জিন্না বেঁকে বসেন । এ বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না । মুসলিম কন্যার সাথে পার্সি বিয়ে ? অসম্ভব । মেয়ের বিয়েতে আশীর্বাদ করতে  আসেননি জিন্না । ড্রাইভার আব্দুল হাইয়ের হাত দিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে কাজ সারেন । অল্পবয়সে মাতৃহারা এই কন্যাটিই সব ছিল জিন্নার । তিনি আর তাঁর বোন ফাতিমা এই দুজনের কাছে বেড়ে উঠেছিল মেয়ে । বাড়িতে সেকুলার ভাবধারা বজায় ছিল । 

           তবু বাপের লাডলি স্বাধীনতার প্রাক্কালে পিতাকে জানিয়ে দেন অমোঘ দৃঢ় স্বর । তিনি ভারতেই থাকছেন । তাঁর বাবা তখন শেষ চেষ্টা করেন , লাহোর , করাচি সম্বলিত মুসলিমদের জন্য  এক স্বপ্নের দেশের মায়াকাজল পরানোর চেষ্টা করেন ............ দিনা বলেন ,"  তুমি কি বম্বে থেকে আমার মায়ের কবর নিয়ে যেতে পারছ পাকিস্তানে ? "  ...." bombay is my city , আমার শহরের নাম বম্বে । "  শেষ কথা বাবার সাথে ।

 আক্ষরিক অর্থেই ভগ্ন হৃদয়ে পিতাকে বিদায় দেন । তিনি পার্টিশনের পর আর দেখতে যাননি কেমন হল সেই দেশ , তাঁর বাবার  স্বপ্নের পার্টিশন , স্বপ্নের পাকিস্তান । গেছিলেন তার পরের বছর 48 এ । বাবাকে শেষবিদায় জানাতে । জিন্নার শেষকৃত্যে ।

একদিনের জন্য গিয়েছিলেন । পিতার পাকিস্তানের বিপুল  সম্পত্তির কণামাত্র দাবি করেননি । ফেরত আসেন বোম্বে তে । 

  1946 এ দেখা হয়েছিল দু বছরের নাসলির সাথে তাঁর দাদু জিন্নার । নিজের মাথার একটা ছাই রঙের টুপি পরিয়ে দিয়েছিলেন নাতির মাথায় । জিন্না তাঁর ডায়রিতে লিখেছেন এটি তাঁর জীবনের খুব স্পেশাল একটা দিন । 

       47 সালে দিনার ছেলে নাসলি মাত্র তিন বছরের । তবু  বম্বেতেই মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন দিনা ওয়াদিয়া । বিচ্ছেদ হলেও জিন্না পদবীতে আর ফেরত আসেননি । সারাজীবন রয়ে গেছিলেন ওয়াদিয়া হয়ে । কার মেয়ে দেখতে হবে না ? অনমনীয় জেদ আর অধ্যবসায় সম্বল করে ব্যবসায় গতি আনলেন , এমন মানুষ করলেন ছেলেকে , আজও ভারতের ধনীদের তালিকায় প্রথম দশে জ্বলজ্বল করে নাসলি ওয়াদিয়ার নাম । দিনা ওয়াদিয়া চুপচাপ অন্তরালে থাকলেন ।  নাসলি ওয়াদিয়া মহম্মদ আলী জিন্নার একমাত্র ওয়ারিশ ।

মূলতঃ বম্বে ডাইং এর মালিক তাঁরা । আরো অনেক ব্যবসা আছে ।  

নাসলির দুই ছেলে জাহাঙ্গীর আর নেস ওয়াদিয়া । প্রীতি জিন্টা সংক্রান্ত ঝামেলায় জড়ানো নেসকে আমরা অনেকেই দেখেছি । কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অন্যতম মালিক নেস ওয়াদিয়া । 

    " লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান " এই  আওয়াজ তোলা  মহম্মদ আলি  জিন্নার সমস্ত উত্তরাধিকারী  ভারতবর্ষে ।  পাকিস্তানে  কেউ  নেই ........ tryst with destiny !!!

লিখেছেন  Soma de Chowdhury .

এর সবটাই সত্যি । বাজার চলতি কোন বানানো ঘটনা নয় ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted