৭১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে, ভারতে বিদেশী আক্রমন।

“মোগলীস্তান” 
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

ভুমিকা
 
আমরা বিশেষ করে হিন্দুরা, ইতিহাস পড়ি না। ভালো করে জানতেও চাই না আমাদের ভুত এবং ভবিষ্যত। আমাদের পুর্ব পুরুষদের ইতিহাস জানলে, কি করে একদা সনাতনী বৈদিক সভ্যতার এই সুতিকাগার, ভীন দেশী এবং সম্পুর্ন ভাবে সতন্ত্র এক সাংষ্কৃতিক এবং আধ্যত্মিক ভাব ধারার দ্বারা এক মিশ্র সংষ্কৃতিতে পরিনত হলো, যে মিশ্র সংষ্কৃতি প্রাচীন বৈদিক সভ্যতাকে কোনো ভাবেই উন্নত করে নি বরং এক নিম্ন স্তরের অমানবিক ভাবধারার সৃষ্টি করলো সেটা আমরা ভাবিনা ,জানিনা জানার চেষ্টাও করিনা। জানলে হয়তো সম্বিত ফিরতো, প্রতিরোধের একটা সম্মিলিত প্রচেষ্টা শুরু হতো। 

ধর্ম একটি জাতির সংষ্কৃতির অঙ্গ। ধর্মাচারন মানুষের প্রাত্যহিক জীবন নিয়ন্ত্রিত করে। তাই ,যে যাই বলুন, ধর্ম কে বাদ দিয়ে জীবন চলে না। ধর্মীয় প্রথা আমাদের  শেখায়, কি পরবো,কি আহার করবো, কি ভাবে সমাজে অন্যের সংগে ব্যাবহার করবো। সব ধর্মই তার নিজ নিজ মতাবলম্বীদের প্রাত্যহিক জীবনের চলার নিয়মাবলী শেখায়। তাই ধর্মই মানুষের জীবনের নিয়ন্তা। যারা ধর্মকে সমাজের জঞ্জাল বলেন তারা ধর্ম কে অবজ্ঞা করতে গিয়ে নিজ সমাজ টাকেই অবজ্ঞা করেন। 

গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “যে ধর্মকে রক্ষা করে, ধর্ম তাকে রক্ষা করে”। আমাদের এই সনাতনী বৈদিক সভ্যতার সুতিকাগারে জন্ম লাভ করেও হিন্দুরা আজ আর তাদের নিজস্ব ধর্ম কে রক্ষা করে না। এটাই বর্তমান ভারতের এক প্রধান সমস্যা। আমরা যারা লিখি তাদের কাজ মানুষকে স্মরন করিয়ে দেওয়া,তাদের নিজ কর্তব্য। আর কর্তব্য কর্ম করা বা না করা সম্পুর্ন নিজ নিজ ভাওবনা চিন্তার ব্যাপার।  সকলের শুধু এটাই মনে রাখা উচিত, শ্রী কৃষ্ণের আর একটি উক্তি, “ স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়, পরধর্ম ভায়াবহ”। 

৭১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে, ভারতে বিদেশী আক্রমন। সেটা আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে। আক্রমন করলো কারা?? আমাদের দেশ থেকে প্রায় ৪ হাজার মাইল দূরে, মরুভুমির দেশে প্রচারিত হওয়া এক বিশেষ ধর্মীয় মতের অনুসারি। তাদের ভাবনা চিন্তা, প্রাত্যহিক জীবন যাত্রা প্রনালী, খাদ্যাভাস, পোশাক আষাক, মুখের ভাষা, কথা বলা এবং উপাসনা পদ্ধতি আমাদের সনাতনী বৈদিক জীবনা যাত্রার সম্পুর্ন বিপরীত। কোনো কিছুতেই সামান্য তম মিল কেউ কোথাও খুজে পাবেন না।  এই দুই বিপরীত মেরুর সংষ্কৃতি কি করে এক সংগে সহাবস্থান করে???? এক কথায় অসম্ভব।

যারা এলো, তারা একে একে যুদ্ধ, হানাহানি, বীভৎষতার অজানিত এবং অদৃষ্টপুর্ব উদারন ভারতীয় সনাতনি হিন্দু সমাজ কে সেই প্রথম দেখালো। সমাজে সব সময়, স্থানীয়স্তরে কিছু লোভী, অন্যের সঙ্গে চক্রান্তকারী, নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজের মাতৃভুমিকে বিলিয়ে দেবার মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ থাকে। তারা পেলো এক বিদেশী শক্তির সাহায্য এবং প্ররোচনা। নিজ লোভ,বাসনা চরিতার্থ করার জন্য সেই হিন্দু গুলো হয়ে গেলো এক একজন বিভীষন। 

দেশীয় বিভীষণ দের সহায়তায়, বিদেশী হিংস্র শ্বাপদ দের বিজয় মিছিলের সংগে স্বগৌরবে উড়তে থাকলো এক ভীন দেশী অপসংষ্কৃতির পতাকা আর সেই সংগে চললো গৈরিক ধ্বজের অবমাননা। একে একে, হাজার বছরের অসংখ্য নাম জানা না জানা বিদ্বান জ্ঞানী গুনীর সাধনা লব্ধ জ্ঞান বিজ্ঞান লুপ্ত হয়ে শুরু হলো ।। আভাগানাস্থানের (ঋষি আভাগানার আশ্রম,বর্তমান আফগানিস্তান), মাতা গান্ধারীর রাজ্য থেকে শুরু করে কাশ্যপ মুনির আশ্রম কাশ্মীর, তক্ষশীলা, পুরুষপুর (পেশোয়ার), নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়।, সব গুড়িয়ে মাটির সংগে মিশে গেলো। 

ভারতের তদানীন্তন রাজারা তাদের প্রান দিয়ে চেষ্টা করলেন এই বিদেশী ধ্বংস লীলা রুখে দিতে। প্রান হারালেন সিন্ধুর রাজা দাহির। তার রানী রানী বাই নিজ মান সন্মান রক্ষার জন্য দুর্গ প্রাকারে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। এক সঙ্গে ৬০০০ হাজার মহিলা আগুনে ঝাপ দিয়ে তাদের স্বামীদের সঙ্গে মিলিত হলেন স্বর্গে। হিন্দু রাজাদের সেই বীরত্ব, হিন্দু মহিলাদের আগুনে ঝাপ দিয়ে মরা (সেই থেকে শুড়ূ হলো সতীদাহ প্রথা) এবং বিষ পান করে স্বামীদের সংগে স্বর্গ বাসের মিছিল চললো হাজার বছর ধরে। যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রান দিলেন লক্ষ লক্ষ হিন্দু যোদ্ধা। নিজ সাম্রাজ্য (পাঞ্জাব থেকে কাশ্মীর অবধি বিস্তৃত ,শাহী সাম্রাজ্য) গজনীর মাহমুদের ‘আব্বা ‘ সুবুক্তিগীন এবং পরে  রক্ত পিপাসু মাহমুদের দ্বারা লুন্ঠিত হলো প্রায় ৩০ বছর ধরে। রাজা জয়পাল তার সর্বশক্তি দিয়ে সেই উন্মাদ আগ্রাসন ঠেকিয়ে গেলেন ৩০ বছর ধরে। পরিশেষে নিজের ১৪ জন সেনাপতির এক জন বিদেশীদের সংগে হাত মিলিয়ে তাদের ধর্ম গ্রহন করে রাজা জয়পালের রাজ্য বিদেশীদের হাতে তুলে দিতে সক্রিয় সাহায্য করে পুরষ্কার পেলেন সেই বিজিত সাম্রাজ্যের এক অংশের রাজা হিসাবে। 

রাজা দাহিরের দেবল (করাচী) দুর্গ বিন কাশীমের হাতে তুলে দিয়েছিলো ৪ জন (বৌদ্ধ /হিন্দু পুরোহিত) রাতের অন্ধকারে দুর্গের গোপন দরজা খুলে দিয়ে। আর তার ৩৩০ বছর পর আফগানী বর্বর দের হাতে রাজ্য তুলে দিলো রাজা জয় পালের এক সেনাপতি, যার হিন্দু নাম ছিলো “সুখপাল”, মুসল্মান হবার পর নাম হলো ‘নোয়াশা শাহ’। নিজ সাম্রাজ্য মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পেরে রাজ জয়পাল আগুনে আত্মাহুতি দিয়ে প্রান ত্যাগ করেন কিন্দু তার স্বাধীনতা বিলিয়ে দেন নাই। তার ছেলে রাজা আনন্দ পাল, আরো বহু বছর সুলতান মাহমুদের সংগে স্বাধীন্তা সংগ্রাম চালিয়ে, কাশ্মীর রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন,পারেন নি।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted