ইতিহাসের পাতায় নেই !
জন্ম ১৯০৬-এর ১৮ জুন। ছোট থেকেই মেধাবী | কেমিস্ট্রিতে এমএসসি পাশ | শান্তশিষ্ট স্বভাব । নাম অনিল দাস | এম এস সি করার পর তাঁর আত্মীয় পরিজনদের আব্দার মেনে সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় না বসে লেগে পড়লেন 'শ্রীসঙ্ঘের' সংগঠনের কাজে । তাঁর পরিবারের অনেকেই দেশের কাজে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন । রক্তের 'দোষ' যাবে কোথায় !
১৯৩০ এ মাস্টারদা সূর্য সেনের চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখলের পর ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয় । অনিল দাস আত্মগোপন করে পরবর্তী বিপ্লবী পরিকল্পনার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দিনের আলোয় নীলক্ষেত ,রামনা ,ঢাকাতে সদলবলে একটি ট্রেনে রীতিমত ডাকাতি করে প্রচুর অর্থ লুঠ করেন । ব্রিটিশ পুলিশের শ্যেনদৃষ্টি বেশীদিন এড়াতে পারেননি অনিল। বছর দুই লুকিয়ে ছিলেন এখানে ওখানে। কিন্তু ১৯৩২-এর ৬ জুন বরিশাল যাওয়ার পথে ধরা পড়ে যান। ঢাকা সেন্ট্রাল জেল ও কুখ্যাত 'লালবাগ কিলা'তে একটি সেল এ একা জল ও খাবার ছাড়া রেখে দিয়ে অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় । ১৩ জুন মা জেলে গিয়ে দেখলেন ছেলে অনেক শীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ১৭ জুন আবার মঞ্জুর হল ছেলেকে দেখতে মায়ের আবেদন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মা-কে দেখতে দেওয়া হল না। জেল কর্তৃপক্ষ প্রথমে জানালেন, ছেলে ভাল আছে। সে দিনই পরে জানা গেল ছেলে আর নেই। শেষ দেখাও দেখতে দেওয়া হয়নি মা-কে। মনোনীত চিকিৎসককে দিয়ে ময়না তদন্ত করানোর অনুমতি প্রার্থনা করলেন মা। সেটা মঞ্জুর হলেও রূপায়িত হয়নি। অনেক চেষ্টা করেও সেই তদন্ত-রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেননি পুত্রহারা জননী। আজীবন লালন করে গিয়েছেন সেই অব্যক্ত ব্যথা।
তাঁর মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকা ('অমৃতের মৃত্যু') , অমৃতবাজার পত্রিকা , অ্যাডভান্স , লিবার্টি , বসুমতী , বঙ্গবাণী , ইস্টবেঙ্গল টাইমস , বাংলার বাণী ইত্যাদি সংবাদপত্রে জুন থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৩২ এই সময়ের মধ্যে ।
অনিলের কথা এই প্রজন্মের কেউ জানে না।পালন হয় না জন্মদিন-মৃত্যুদিন। দেশপ্রিয় পার্কে আছে অনিল চন্দ্র দাসের আবক্ষমূর্তি। অনিল দাসের বেদির পাথরে অনেক কষ্টে পড়া গেল অনিল চন্দ্র রায়ের স্মৃতিচারণ— “কন্টকবনে বসিয়া হাসিলে/ কুসুমের মধুহাসি। / দীর্ণ বুকের রন্ধ্র ভরিয়া/ বাজাইয়ে গেলে বাঁশি।/মরণের বীণে তুলিলে বন্ধু/জীবনের ঝঙ্কার,/ পথিক বন্ধু, পথের দিশারী/ জানাই নমস্কার।“
অনিল চন্দ্র দাসকে আমার শ্রদ্ধা ও প্রণাম |
লেখক - অভীক মণ্ডল
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................