জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের সময়ে এসে আমাদের বিশ্বাস করতে হয় চাঁদে গিয়ে আজান শোনা যায়।

যারা মনে করছেন বাবু নগরীর পায়ে পচন ধরার আসল কারন কাদিয়ানীদের পিছে লাগা তারা যেমন কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন,
তেমনি যারা মনে করেন চীনে করোনা ভাইরাসের মূল কারন উইঘুর মুসলিম নির্যাতন তারাও কুসংস্কারে ডুবে আছেন।

কুরআন এবং হাদিসে স্পষ্ট বলা আছে যার যার কর্মফল আখিরাতে ভোগ করবে।  শেষ বিচারের দিন বা ডে অব জাজমেন্ট বলতে একটা ব্যাপার যে আছে তা বর্তমান ইন্টারনেট ধর্ম ব্যবসায়ীদের কল্যাণে মানুষ ভুলেই গেছে।

আর তাই তারা হুটহাট একে ওকে অপবাদ দিচ্ছে, জান্নাতি জাহান্নামি বানিয়ে দিচ্ছে।  বিষয় টা শুধু একার্মিং না, ভীষণ লজ্জার ও বটে।

কোন মানুষ যদি দুনিয়ায় তার কৃতকর্মের জন্যে ফল ভোগ করতো তাহলে চেঙ্গিস হালাকু হিটলাররা মানুষের কেল্লা দিয়ে পিরামিড বানাতে পারতো না। আমেরিকা জাপানে এটম বোমা হামলা করে টিকে থাকতে পারতো না।
তুর্কিরা ১৫ লাখ আর্মেনিয়ান অথবা পাকিস্তান ৩০ লাখ নিরস্ত্র বাঙালি মারতে পারতো না।
ইসরায়েলিরা হাজার হাজার প্যালেস্টাইনি মারতে পারতো না। 
আমেরিকা ও মারতে পারতো না ইরাকি সোমালিয়ান বা আফগানিদের। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা খড়া ভূমিকম্প ও একই সূত্রে গাঁথা। 
সুনামি তে সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ইন্দোনেশিয়া আচেহ বা সুমাত্রার মুসলমান। 
এই সুনিমা হয়েছে সমুদ্রের নিচে গভীর তলদেশে ভূমিকম্পনের ফলে।

কিন্তু আমি আপনি বিশ্বাস করি জিন্সের প্যান্ট পরার কারণে ভূমিকম্প হয়েছে নেপালে। 
একই রকম ভূমিকম্প হয় পাকিস্তানের কাশ্মীরে, তুর্কিতে, ইরানে। কিন্তু খুঁজে খুঁজে বের করেন কারা অমুসলিম। 

অস্ট্রেলিয়ার বুশ ফায়ার হয়ে যায় আল্লাহর গজব। ঈমানের পরিক্ষা। 
আবার দুইদিন পর তারা প্রচার করে  মুসলিমদের মিলিত প্রার্থনায় বৃষ্টি হয়ে আগুন নিভে যায়।  

অথচ ১৯৯৭ সনে মিনায় হজ্জের সময় আগুন লেগে ৩৪০ জন হাজি মারা যায়, আগুনে পুড়ে আহত হয় অন্তত এক হাজার হাজি।

এছাড়া ও বিভিন্ন সময়ে হাজিদের তাঁবুতে আগুন লেগে অনেক হাজি মারা গেছে।  গুগলে সার্চ দিলে লিংক সহ পাবেন।

২০১৫ তে মক্কায় এক মসজিদে ক্রেন ভেঙে মসজিদের ছাদ ধবসে প্রায় ১৫০+ হাজি মারা যায়। 
একই বছরে হজ্জের সময় শয়তান কে পাথর মারতে গিয়ে  পদদলিত হয়ে মারা গেছে ৯০০+ হাজি। ( মতান্তরে ১৫০০+) 
তখনকার সময়ে যারা নিউজ পড়তেন তাদের জানার কথা। 

এমন আরো অসংখ্য উদাহরণ আছে যা আপনার চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিবে বন্যা খড়া ভূমিকম্প ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোন মানুষের কৃতকর্মের ফল না।
এটা প্রকৃতি।  এটা হিন্দু মুসলিম ইহুদি খ্রিষ্টান চিনে না। সবাইকে সে গ্রাস করে।

আপনি  জিওগ্রাফি বুঝেন?  মানে ভূগোল? 
পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্কতম অঞ্চলে বাস করে মুসলমানরা। 
পশ্চিম আফ্রিকার মরক্কো সাব সাহারা থেকে ধরে সৌদি আরব ইয়েমেন পর্যন্ত রুক্ষ মরুভূমি। 
মাঝেমধ্যে কোথাও কোথাও মরোদ্যান বা অল্প স্বল্প নদী আছে! 
তাও মিশরের নীল নদ, ইরাকের ইউফ্রেটিস টাইগ্রিস  (দজলা ফোরাত)  নদী ছাড়া বড় কোন নদী নেই।

কিন্তু সমগ্র আরব বিশ্ব এর মাঝেই বাস করে। মাইলের পর মাইল ধূধূ শুষ্ক উষ্ণ মরু।
চলাচলের রাস্তা নেই, উট ছাড়া বালির উপর পা ও রাখা দায়।

সেই শুষ্ক তপ্ত মরুর বুকে বাস করাটাই তো একটা অভিশাপ।  
কিন্তু দেখুন আজকে জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষের ফলে সেখানে গাড়ি চলছে! সমুদ্রের পানি রিফাইন করে পানের যোগ্য করা সম্ভব হয়েছে। 
শুধু তাই না, শুষ্ক মরুতে হচ্ছে কৃষি।  হচ্ছে অত্যাধুনিক শহর। 
অথচ আজ থেকে এক দেড়শ বছর আগে ও তারা ছিলো বেদুঈন। 
মেষপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বিজ্ঞান পেট্রোলিয়াম আবিষ্কার না করলে তারা সেই বিন্দুতেই আটকে থাকতো। 

অথচ বিশুদ্ধ পানির বিপুল সমারোহ,  উর্বর মাটি,  গাছপালা বৃক্ষ বেষ্টিত সবুল শ্যামল দেশে জন্মেও আপনি মনে করেন সৃষ্টিকর্তা আপনার প্রতি অবিচার করেছে। 
আপনার জন্ম নেয়ার দরকার ছিল রুক্ষ মরুভূমিতে। 

অথচ পুরো দুনিয়াটাই যে উনার সৃষ্টি সে ধারণা নেই আপনার।  আপনি মনেপ্রাণে আরব হতে চান। এটা কি কুসংস্কার নয়???

শেষ করছি আবারও বর্তমান সময়ের আলোচিত  টপিকস দিয়ে। 
করোনা ভাইরাস যদি সৃষ্টি কর্তার অভিশাপ হয় তবে তা শুধু চীনাদের মারতো, কেনো তার ভয়ে বাঙালি, পাকিস্তানি, ইন্দো, মালয়ি অথবা আরব মুসলমানরা শঙ্কিত হবে???

কারন ভাইরাস ধর্ম চিনে না। 

আর আপনি এর মাঝেই মুজিজা খুজেন? তাহলে ধরেন বাজি.... আজ থেকে কোন বাচ্চাকে টিকা ভ্যাক্সিনেশন করাবেন না। যদি এদের মধ্যে ৫০% ও কোন প্রাণঘাতী রোগে মারা না যায় তাহলে আপনি সঠিক আছেন। 
পারবেন? পারবেন না।

কারণ আতুর লুলা লেংড়া হলে তো ফতোয়া দিতে সুবিধা হয়," নিশ্চয়ই এটা কোন পাপের ফল।  " 

Are you serious??  পাপের ফল ভোগ করবে যে পাপ করছে! নিষ্পাপ শিশু কেনো??

আবার ধর্মেই ফিরে যাচ্ছি....
বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর পুত্র মারা গেছে জন্মের পর পরেই.. পুত্রশোকে সবাই বিলাপ করছে! আকাশে চাঁদ সেদিন মেঘে ঢাকা...... কতিপয় পাড়াপ্রতিবেশি নিকটাত্মীয়রা বলাবলি করতে  লাগলেন.."আহা দেখো দেখো  নবীজীর  পুত্রশোকে চাঁদ ও আজ শোক  প্রকাশ করছে বুঝি! "

নবী করিম (সাঃ) তৎক্ষনাৎ সাবধান করে দিয়ে বললেন কারো পুত্র বিয়োগে চাঁদ বা সূর্য বা প্রকৃতি তাদের আচরণ পরিবর্তন করে না।  এইসব কুসংস্কার।  সাবধান তোমরা কুসংস্কারে বিশ্বাস করো না।

অথচ জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের সময়ে এসে আমাদের বিশ্বাস করতে হয় চাঁদে গিয়ে আজান শোনা যায় এবং চাঁদে কারো ছবি ভেসে উঠে।  
আফসোস দেশে এখন এমন মুসলমান এবং তাদের অনুসারীর সংখ্যাই বেশি।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted