দাঙ্গা কাকে বলে? ভারতে দাঙ্গা হয়, বাংলাদেশে নয়। কারণ বাংলাদেশে হিন্দুরা শুধু মার খায়।

ফেইসবুকে দেখছি ভারতীয় মুসলিমদের কেউ কেউ বলছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যারা সরব তারা যেন এখন ভারতের মুসলিমদের উপর নির্যাতন দেখে কথা বলে। অর্থাৎ ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক ভালো। হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা বাংলাদেশে ভারতের চেয়ে অনেক ভালো থাকে...।

জাস্টিফাইড অত্যন্ত খারাপ জিনিস। নির্যাতন নিপীড়ন ছোট বড় হয় না। সব সাম্প্রদায়িকতাকে সমান ঘৃণা করতে হবে। এর বাইরে ভারতের মুসলিমদের ভাগ্যবান মনে করা উচিত কারণ ভারতের সেক্যুলার শক্তি তাদের পাশে আছে। মিডিয়া, শিল্পী, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষ সবাই হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। সবাই স্বীকার করছে ভারত হিন্দুত্ববাদী হয়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীলরা এর ঠিক উল্টো। বাংলাদেশে কেউ সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্বই স্বীকার করে না। দেশে যখন হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন হয় তখন বুদ্ধিজীবীরা বলে হিন্দুরা নয় মুসলমানরাই এদেশে নির্যাতিত হয় বেশি কারণ এখানে মুসলমানরা ৯০ শতাংশ। এই একই তত্ত্ব হাজির করে ভারতে যদি কেউ বলে ভারতে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ কাজেই তারা নির্যাতিত হয় বেশি তখন শুনতে কেমন লাগবে? নাসিরনগর হামলার পর সরকারের একজন মন্ত্রী হিন্দুদের দায়ী করে বলেছিলেন, মা*লাউনরাই বেশি বাড়াবাড়ি করেছে ...।

বাংলাদেশের একটি সাম্প্রদায়িক হামলারও বিচার হয়নি। এগুলো নিয়ে কথা বলার মত কেউ নেই। দেশের মিডিয়াগুলো প্যান ইসলামিক নয়ত মৌলবাদী সমর্থক। মূলধারার মিডিয়া রোহিঙ্গা নির্যাতনের ছবি বলে তিব্বতের ভূমিকম্পের ছবি ছেপেছে। এই ছবিতে দেখা যায় তিব্বতের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ভূমিকম্পে মৃত লাশ সরাচ্ছে। এই ছবিকে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা হত্যা করে বৌদ্ধরা লাশ ফেলে দিচ্ছে। গোটা পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে এই মিথ্যা প্রচারণার পর পুলিশ প্রহরা বসাতে হয়েছিল। এখন দিল্লির ঘটনা নিয়ে কালের কন্ঠ পত্রিকা উশকানিমূলক শিরোনাম করছে যাতে বাংলাদেশের ইসলামিকরা হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়। ভারতের মূলধারা মিডিয়া সুশীল সমাজ সেখানে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। ভারতে তাই উগ্র হিন্দুত্ববাদ জয়ী হবে না। বাংলাদেশে প্রগতিশীলতার কথা বললে জঙ্গিদের টার্গেট হতে হয়। ব্লগারদের প্রাণ দিতে হয়েছে এখানে। সরকার মৌলবাদের পক্ষ নিয়েছেন নির্লজ্জের মত। আপনারা ভারতে মোদিকে দেখেন বাংলাদেশ পাকিস্তানের শাসকদের দেখেন না? আমাদের ব্লগারদের দেশ ছাড়া হতে হয়েছে। প্রিয়া সাহা সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলে মিডিয়া বুদ্ধিজীবীদের রোষানলে পড়েছিল। দেশের সংস্কৃতি শিক্ষা সেক্টরে মৌলবাদীদের দাবীতে ইসলামীকরণ ঘটেছে। বাউল ফকির লালন অনুসারীদের জেল জরিমানা হচ্ছে। ভারতে যদি হিন্দুত্ববাদের উত্থান ঘটে থাকে তাহলে এখানে কিসের উত্থান ঘটেছে? এই যে ভারতীয় মুসলিম এক্টিভিস্টরা এখন বাংলাদেশের নাস্তিকদের দুষছেন তারা নাকি ভারতের সাম্প্রদায়িকতায় নিশ্চুপ। এর কি আসলেই কোন ভিত্তি আছে? বরং তাদের বিরুদ্ধেই বলা যায় তিন তালাক ইস্যুতে তারা চুপ ছিলো। মাদ্রাসা শিক্ষা নিয়ে তারা কথা বলে না। ভারতে তথাকথিত মুসলিম শাসন নিয়ে তাদের প্যান ইসলামিজমই মোদির মত দানবের জন্ম দিয়েছে। যারা ইসলামিক পার্সোনাল ল নিজেদের কমিউনিটির জন্য জারি রাখতে চায় তারাই আসলে ভারতকে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত রাখতে চায়। ভারতের প্রগতিশীল মুসলিমরা বলুন তাদের ধর্ম ইসলাম নয় মানবতা তাদের ধর্ম। টুপি বোরখা পরে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী সমাবেশে গিয়ে তারা কি বুঝাতে চায়? বাংলাদেশে আমরা যে দানবের বিরুদ্ধে লড়ছি সেই দানবকে যখন ভালো মানুষ সেজে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে শামিল হতে দেখি তখন সতর্ক না করে পারি না। হিন্দুত্বের বিনাশ চাই কিন্তু তার উপর প্যান ইসলামের বিজয় দেখতে চাই না।

এই কথাগুলো বলতে চাইনি যখন দিল্লি জ্বলছে সাম্প্রদায়িক আগুনে। কিন্তু দুদেশের সাম্প্রদায়িকতাকে জাস্টিফাই করা হলে অপ্রিয় কথাগুলো বলতেই হয়। পৃথিবীর সব সাম্প্রদায়িক দানবের বিনাশ না হলেও দমন হোক। তার উপর বিজয়ী হোক মানবতাবাদ। সেক্যুলার সমাজ ও মানসিকতার চর্চা শুরু হোক ...।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted