"হিন্দুত্ব-- "গীতা সার"
মৃনালানন্দ হিন্দু
বৈদিক শাস্ত্র বলছেন—রিপু (মানুষের প্রবৃত্তি), মন, বুদ্ধি, অহংকার। এর মধ্যে রিপু,মন, বুদ্ধি প্রকৃতি থেকে আসে। এছাড়া অন্যটি হচ্ছে অহংকার= চিত্ত। এখানে অহংকার শব্দের অর্থ “অহং বা অহম” অর্থ্যাত “আমি”—এই আমিই সেই আমি, এই বোধ। এই ‘অহং বা অহম হচ্ছে মানুষের ‘চৈতন্য শক্তি’। সাংখ্য দর্শন বলে, চৈতন্য শক্তি হচ্ছে “অক্ষর পুরুষ” বা আত্মা। বাকি সব ক্ষর পুরুষ বা প্রকৃতির থেকে উদ্ভুত ‘মায়া” বা মরিচীকা। এই ক্ষর= যা ক্ষয় হয়ে যায়, যার শেষ আছে, তার থেকে যদি অন্তরস্ত “অক্ষর পুরুষ” এর উপস্থিতি নিজের চিত্তে উদয় হয় তখন সেই মানুষ মায়ার বেড়াজাল থেকে উদ্ধার পেয়ে “মোক্ষ লাভ” করে।
জীবাত্মা এবং পরমাত্মা এক এবং অভিন্ন। জীবাত্মা “ক্ষুদ্র আমি”- দেহ মনের অধীন, পরমাত্মা= বিশ্ব ব্যাপি ‘চৈতন্য শক্তি’-স্বাধীন এক সত্ত্বা।
মানুষের (জীবাত্মার) অন্তরস্থ চৈতন্য শক্তির সঙ্গে প্রকৃতির থেকে আসা বুদ্ধি, মন যখন এক সাজুয্যে চলে না তখনই তৈরী হয় সংঘাত। বুদ্ধি মনকে চালায়। তাই বুদ্ধি যখন চৈতন্য র সঙ্গে যুক্ত থাকে তখন সেই বুদ্ধি মনকে সঠিক পথে চালিত করতে পারে। মন (সারথী) সঠিক ভাবে চললে, তার হাতের বল্গা দিয়ে সে নিজের মধ্যে যে রিপুর ক্রিয়া হয় তাকে সংযত রাখতে পারে। রিপুকে দমন করে রেখে ,তার প্রবল অশুভ ঋনাত্মক শক্তিকে পরাভুত করতে পারলে ‘জীবন রথ’ সঠিক ভাবে চলে, জীবন যুদ্ধে মানুষ জয়ী হয়। অন্তরস্থ চৈতন্য শক্তির (ধনাত্মক শক্তি) সংগে বুদ্ধিকে (রথী) যুক্ত করাই মানব জীবনের সাধনা, যোগ সাধনা।। জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যোগ।
প্রশ্ন হচ্ছে, জীবাত্মা তো পরমাত্মার এক ক্ষুদ্র সংষ্করন। তাহলে এই দুইয়ের যোগ স্বাভাবিক ভাবেই কেনো হয় না?
এখানেই এসে যায় কপিল মুনির সাংখ্য দর্শনের কথা। মানুষের পাঁচ জ্ঞান ইন্দ্রিয় , পাঁচ কর্ম ইন্দ্রিয় মানুষকে যে বুদ্ধি জোগায়,মানুষ সেই বুদ্ধিতেই চলে। নিয়ম নীতি কেনো মানবো, ভালো হয়ে লাভ কি? মন্দ হলে যদি আমার মন যা চায় তাই পাই, তাহলে ভালো হয়ে কি হবে? আমার তো অনেক কিছুই চাই, অনেক আরাম আয়েষ, শারিরীক সুখ, আনন্দ চাই। ভালো হয়ে থাকলে কি এসব পাওয়া যাবে? যাবে তো না, তাহলে ঐ সব বস্তাপচা ধার্মিক কথা শুনে কি হবে?? ওসব বিগত যৌবন বৃদ্ধ দের জন্য।
মানুষের বুদ্ধি চলে তার নিজ নিজ প্রকৃতির গুনে। প্রকৃতির গুন যা শোনায় তাই শুনি। যা দেখায় তাই দেখি, যা করতে বলে তাই করি। আর সেই কর্মের ফল ভোগ করি। এখানেই ন্যায় নীতির প্রশ্ন এসে যায়।
তাই আগেই লিখেছি, শ্রী কৃষ্ণ গীতায় আমাদের জীবনের দুই দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রথম নৈতিক এবং পরে দার্শনিক। বিজ্ঞান যেখানে শেষ হয়, দর্শন সেখান থেকে শুরু হয়। মানুষের জীবনের সুখ দুঃখের সমাধান বিজ্ঞান দিতে পারে না ,পারে নি। তাই দার্শনিক স্তরে তার সমাধান চাই। মানুষের রোগের সৃষ্টি নৈতিক পর্যাশেয়ে, সমাধান আধ্যাত্মিক স্তরের। আধ্যাত্মিকতা বিহীন হয়ে মানুষ তাই ‘রোগ ভোগে জরা জীর্ন’। জড় বিজ্ঞান রোগের হদিশ খুজে পায় না, নিদান ও তাই নেই। মানুষের রোগ সৃষ্টি আধ্যাত্মিকতা বিহীন অনৈতিক জীবন শৈলীতে, নিদান তাই খুজতে হবে সেই “দার্শনিক স্তরে , আধ্যাত্মিকতায়।
আমরা ধীরে ধীরে সেই দিকে এগুবো।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................