আজ মানুষ যেখানে একটা মেম্বারের পদ ছাড়তে চায়না, সেখানে রাম পিতা দশরথের একটি কথায় পুরো অযোধ্যার রাজত্ব ছেড়ে দিলেন।

৫৬৭ বিসি'তে লুম্বিনিতে জন্ম নেয়া বৌদ্ধকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো- শুধু এমন একটি শব্দ বলুন যা পুরো মানব জাতির জন্য কল্যাণকর। বৌদ্ধ ধ্যানমগ্ন কন্ঠে বলেছিলেন- "কমপেশান, শুধুই কমপেশান, জীবের প্রতি জীবের দয়া"।

লু'র অধিবাসী কনফুসিয়াসের কাছে একই প্রশ্ন জানতে চাওয়া হলে উনি বলেন- "কোঅপিরেশান, পরষ্পরকে সহযোগিতা, পরষ্পরের প্রতি সহমর্মিতা।"

মথুরায় কৃষ্ণকে যখন বলা হয়- মানবতার কল্যাণের জন্য শুধুমাত্র একটি ধারণার কথা বলুন। উনি মৃদু হেসে বলেছিলেন, "শুধুই ভালোবাসা"।

অযোধ্যার রামও বলেন- "সদাচার, ন্যায়পরায়ণতা"। নাজারাতের জেসাসের কাছেও জানতে চাওয়া হলে উনি বলেন- "মানুষের সেবা"।

সেই ৫৬৭ বিসি থেকে শুরু হয়ে অবশেষে ৫৭০ সালে মক্কায় জন্ম নেয়া মুহাম্মদ (সাঃ) যে ধর্ম দিয়ে গেলেন তা পুরোটাই তো বিশ্ববাসীর কল্যাণ আর শান্তির জন্য। সেজন্য ইসলাম ধর্মকে বলা হয় একমাত্র শান্তির ধর্ম।

রোহিঙ্গাতে মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিলো। ছবিটিতে দেখা যায়- বৌদ্ধ একটা আসনের ওপর বসে আছেন। সেই আসনের ভিতর লুকায়িত অসংখ্য মারণাস্ত্র। ছবিটা দেখে খুব খারাপ লেগেছিলো। যে বৌদ্ধ রাজসিংহাসন ছেড়ে দিয়ে মানুষের মুক্তির অন্বেষণে পথে নামলেন- সেই মহান মানুষটিকে আমরা অস্ত্রের যোগানদাতা হিসাবে উপস্থাপন করছি। বৌদ্ধ কি অস্ত্রের সাপ্লাইয়ার ছিলেন, নাকি শুধু মানুষের লাভের জন্য শান্তির যোগানদাতা ছিলেন? তবে রোহিঙ্গার কিছু পথভ্রষ্ট বৌদ্ধদের কারণে কেন তাঁর ওপর কালিমা লেপন করছি?

রাবণ যখন কোনো অবস্থাতেই সীতাকে অপহরণ করতে পারছেন না- তখন রাবণের মন্ত্রী পরামর্শ দিলেন- এটাতো খুবই সহজ একটা কাজ। আপনি রামের ছদ্মবেশ নিয়েই তো সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে আসতে পারেন। রাবণ বললেন- তুমিতো একটা মহামূর্খ। রামের ছদ্মবেশ নিলেই তো আমার মন থেকে সব হিংসা, ঘ্বণা, লালসা, কামভাব দূর হয়ে যায়। এসব যদি দূরই হয়ে যাবে তবে আর সীতাকে নিয়ে এসে লাভ কি?

মানুষ যেখানে একটা মেম্বারের পদ ছাড়তে চায়না, সেখানে রাম পিতা দশরথের একটি কথায় পুরো অযোধ্যার রাজত্ব ছেড়ে দিলেন। পিতা কেন এই আদেশ দিলেন সেই প্রশ্নটাও করলেন না একবার। হায়! যে রাম পুরো অযোধ্যা ছেড়ে দিলেন- তার অনুসারীরা একটা মসজিদ দখলের লোভ সামলাতে পারলেন না।

হুদাইবিয়ার সন্ধিতে শান্তিচুক্তি স্থাপনে যখন কুরাইশরা বলছিলো- চুক্তিপত্রে মুহম্মদ আল্লাহর নবী লেখা হলে সেই চুক্তিপত্র আমরা মানবো না। মুহাম্মদ (সাঃ) আলী (রাঃ) কে বললেন- চুক্তির কোন জায়গায়- আমি আল্লাহর নবী লেখা আছে তা দেখিয়ে দাও। বিশ্বনবী হয়েও 'নবী" লেখা অংশটুকু নিজ হাতে কেটে দিলেন শুধুমাত্র শান্তি স্থাপনের জন্য। অথচ সেই নবীর উম্মতেরা একটা বাঁশঝাড়ের চুক্তি মন মতো না হলে মেনে নিতে পারেনা, রক্তারক্তি করে-হানাহানি করে।

যে কোনো ধর্মের অনুসারীরা যখন বাজে কীর্তিকলাপ করে, মসজিদ ভাঙ্গে, মন্দির ভাঙ্গে, গীর্জা ভাঙ্গে- তখন এইসব ধর্মপ্রচারকদেরই অবমাননা করা হয়। 

পৃথিবীর কোনো ধর্মপ্রচারকরাই অশান্তি, নিষ্ঠুরতা, হিংসা, জুলুম, বিদ্বেষের কথা বলেননি। কেউ কাউকে হিংসা, ঘৃণা করতেও বলেননি। এমন কোনো নজির পৃথিবীর ইতিহাসে কোথাও নাই। আল্লাহ, ভগবান, খোদা, গড, তারা কেউ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, মুসলমানও না। স্বর্গ, নরক, বেহেস্ত, দোযখেরও কোনো জাত নেই। তাদেরকে নিয়ে কাড়াকাড়ি করে, মারামারি করারও কোনো দরকার নেই। 

আবার ধর্মের ভাষা সংস্কৃত, ফার্সি, উর্দু, ইংরেজি , হিব্রু , আরবী কিছুই না। ধর্মের একটাই ভাষা আর সেটা হলো মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা। 

Memory From Arif Mahmud

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted