একটি জ্বলন্ত মিথ্যাচার ও প্রবঞ্চনার ইতিহাস ।

বিজেপি ও হিন্দু জাতীয়তাবাদ, একটি জ্বলন্ত
মিথ্যাচার ও প্রবঞ্চনার ইতিহাস ।
----------------------------------------
গত এক দশক ধরে ভারতীয় জনতা পার্টির
জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী । যদিও সম্প্রতি সেই
জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়েছে, তা সাম্প্রতিক
নির্বাচন গুলির দিকে তাকালেই বোঝা যায় । তবুও
এই যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা, তার প্রধান কারিগর
হিসেবে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, ভারতরত্ন
মাননীয় শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, বিশিষ্ট বিজেপি
নেতা লালকৃষ্ণ আদবানি, প্রয়াত নেত্রী সুষমা
স্বরাজ, অমিত শা এবং নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী
কে বিশেষভাবে মনে রাখা হয় । সাধারণভাবে মনে
করা হয় ভারতের বুকে হিন্দুত্ববাদী এবং হিন্দু
জাতীয়তাবাদী রাজনীতির কাণ্ডারী, ভারতীয় জনতা
পার্টি । কিন্তু আজকে এই লেখার মাধ্যমে আমরা
কিছু বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখবো ।
গত ৭০ বছরের রাজনীতির পরত গুলো কে
বিশ্লেষণ করলে, এর মধ্যেকার সত্য ইতিহাস,
আমাদের নানান দ্বিধা কাটাতে সহায়ক ভূমিকা নেবে
প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক প্রাক স্বাধীনতা সময়ে,
ভারতের মূল রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে, হিন্দু
জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের রূপরেখা, ঠিক কোন
দলের মধ্যে পাওয়া যায় ? দেশ স্বাধীন হওয়ার
আগে সর্বপ্রথম, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা,
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, মুসলিম লীগ ও কৃষক
প্রজা পার্টি, এই চারটি দলের ভূমিকা দেখতে পাওয়া
যায় । এই চারটি দলের মধ্যে একমাত্র অখিল
ভারত হিন্দু মহাসভার দলীয় সংবিধানে, এখনো
পর্যন্ত ভারতবর্ষে তৈরি হওয়া সবকটি রাজনৈতিক
দলের মধ্যে, ব্যতিক্রমী হিসেবে, অখন্ড হিন্দু
রাষ্ট্র গঠনের সংকল্প ও উদ্দেশ্য, লিখিত রূপে
পাওয়া যায় । হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন একমাত্র
রাজনৈতিক দলের সংবিধান যাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও
উদ্দেশ্য হিসেবে অখন্ড হিন্দু রাষ্ট্রের কথা, দলীয়
সংবিধানে লিখিত রূপে গৃহীত হয়েছে এবং একই সাথে
স্বাধীনতার আগে যে অখন্ড ভারত ভূমি ছিল,
তাকেই প্রকৃত ভারত বর্ষ হিসেবে স্বীকার করা
হয়েছে এই সংবিধানে । তাই বলা যেতে পারে,
পরাধীন ভারতবর্ষে হিন্দু জাতীয়তাবাদের উন্মেষ
ঘটেছিল, অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার বিভিন্ন
মনীষীদের হিন্দুত্ববাদী এবং জাতীয়তাবাদী
কাজকর্মের নিরিখে । কিন্তু ১৯৪৮ সালের ৩০
শে জানুয়ারি পন্ডিত নাথুরাম গডসে, মোহনদাস
করমচাঁদ গান্ধীকে বধ করার পরে, সারা দেশজুড়ে
হিন্দু মহাসভার এই হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে,
তার প্রধান ও প্রবল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী,
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং তৎকালীন কংগ্রেসী
প্রধানমন্ত্রী নেহরু ব্যাপক প্রচার শুরু করেন
এবং তার নির্দেশে সারা দেশজুড়ে সেইসময় হিন্দু
মহাসভার কমবেশি ৪৪,০০০ কর্মকর্তাকে
গ্রেফতার করা হয় এবং এর সদস্যদের
সামাজিকভাবে বয়কট ও তাদের জল, বিদ্যুৎ, রেশন
সহ প্রায় সব রকম বেঁচে থাকার সুবিধা থেকে
বঞ্চিত করা হয় । এমনকি যদি কেউ হিন্দু
মহাসভার সমর্থক ছিলো একথা জানা যেত, সেই
সময় প্রকাশ্যে তাকে হেনস্থা, মারধর এমনকি তার
বাড়ির মহিলাদের লাঞ্ছিত ও শ্লীলতাহানির মত
ঘটনাও ঘটেছিল বেশ কিছু ক্ষেত্রে । সারা দেশ জুড়ে
হিন্দু মহাসভার সেই সময় একাধিক স্থাবর-
অস্থাবর সম্পত্তি ছিল, যা এই সূযোগে দখল করে
নেয় কংগ্রেসের বিভিন্ন স্থানিয় কার্যকর্তা ও
সূযোগ-সন্ধানী দখলদাররা । ফলে কার্যত আর্থিক
ও প্রতিষ্ঠানিক দিক থেকে হিন্দু মহাসভার
মেরুদন্ড ভেঙে দিয়েছিল নেহেরু ব্রিগেড । এমত
অবস্থায় হিন্দু মহাসভার তৎকালীন রাষ্ট্রীয়
অধ্যক্ষ ড: শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, হিন্দু মহাসভার
পরিযোজনায়, হিন্দু জাতীয়তাবাদ এর মূলগত
আদর্শকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ও এর সদস্যদের
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য তখন থেকেই
পাশাপাশি আরো একটি হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক
দলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । আর তাই
১৯৫১ সালের ২১ শে অক্টোবর, জাতীয়
কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলিম তোষণ
রাজনীতির প্রতিষ্পর্ধাকারী, হিন্দু জাতীয়তাবাদী,
'ভারতীয় জনসংঘ' নামের একটি রাজনৈতিক দলের
প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরের বছরেই ১৯৫২ সালে
তিনটি লোকসভা আসনে জয়ী হয় জনসঙ্ঘ । কিন্তু
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ১৯৫৩ সালের ২৩ শে জুন
কাশ্মীরে, হিন্দু মহাসভার মূল হিন্দু জাতীয়তাবাদী
আন্দোলন, 'এক দেশ-এক প্রধান-এক নিশান', কে
বাস্তবায়িত করতে গিয়ে, শেখ আব্দুল্লাহ এর হাতে
বন্দী হন শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী এবং তাকে হত্যা
করা হয় । ১৯৭৫ সালের আগে পর্যন্ত ভারতীয়
জনসংঘের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অত্যন্ত উজ্জ্বল
এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এই দলের
ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল । কিন্তু
১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা
গান্ধী ইমার্জেন্সি জারি করেন এবং ভারতীয়
জনসংঘ দলের অধিকাংশ নেতাকে গ্রেপ্তার করেন ।
এরপর ১৯৭৭ সালে এমার্জেন্সি প্রত্যাহারের
পরে, ভারতীয় জনসঙ্ঘ, ভারতীয় লোক দল,
কংগ্রেস (অন্যান্য) ও সমাজবাদী পার্টি মিলে
একত্রে জনতা দল প্রতিষ্ঠা করে ও সর্বপ্রথম
ভোটে জিতে অকংগ্রেসী সরকার গঠন করেন ।
বিদেশ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী হন,
ভারতরত্ন অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং তথ্য ও
সম্প্রচার মন্ত্রী হন লালকৃষ্ণ আদবানি, কিন্তু
জনতা দল এর ১৯৮০ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির
পর এই দলের অধিকাংশ সদস্য বেরিয়ে গিয়ে
ভারতীয় জনতা পার্টি প্রতিষ্ঠা করে । তাই যারা
প্রচার করে বেড়ান বিজেপি, অখিল ভারতীয়
জনসঙ্ঘের উত্তরসূরি হিসেবে ও ডঃ শ্যামাপ্রসাদ
মুখার্জীর হিন্দু জাতীয়তাবাদের আদর্শ ও
অনুপ্রেরণায় গঠিত হয়েছে তারা আদতে মিথ্যা কথা
বলেন । শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ১৯৫১ সাল
পর্যন্ত অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার রাষ্ট্রীয়
অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন এবং পরবর্তী ১ বছর
৮ মাস তিনি ভারতীয় জনসঙ্ঘের অধ্যক্ষ হিসেবে
ছিলেন । আর তাই খোদ কলকাতার বুকে
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির মূর্তি ভেঙে দিয়ে
বামপন্থীরা তার ভাবাদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করলেও,
সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিজেপির মধ্যে তেমন
কোনো হেলদোল লক্ষ্য করা যায় না । ড:
শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী যদি সত্যিই তাদের অন্তরের
মর্মবাণী হতো, তবে হয়তো এই অভিনয় করার
প্রয়োজন হতো না । পরবর্তী সময়ে ভারতীয়
জনসঙ্ঘ অন্যান্য আরও তিনটি দলের সঙ্গে মিশে
নতুন একটি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, যা
'জনতা দল' নামে পরিচিত । এই জনতা দল থেকে
ভেঙে আবার ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতিষ্ঠা হয়
। তাই ভারতীয় জনতা পার্টি কোনভাবেই ভারতীয়
জনসঙ্ঘের উত্তরসূরি হিসেবে দাবি রাখতে পারেনা
। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, ভারতীয় জনতা
পার্টির প্রতিষ্ঠার পরেও ভারতীয় জনসঙ্ঘ তার
নিজের স্বকীয়তা বজায় রেখে, রাজনৈতিক মঞ্চে
একটি অনিয়মিত রাজনৈতিক দল হিসেবে আজও তার
স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃতি বজায় রেখেছে, নিজেদের নাম
পরিবর্তন করে বা বিলয় ঘটিয়ে, ভারতীয় জনতা
পার্টি হয়ে যায়নি । এর একটি উল্লেখযোগ্য
দৃষ্টান্ত হলো, ২০০০ সালের ১৭ ই জানুয়ারি,
ভারতীয় জনতা পার্টির গান্ধীবাদীতা ও গোপনে
সেক্যুলার ভাবধারা পোষণের বিরোধিতা করে,
ভারতীয় জনসঙ্ঘের প্রাক্তন সভাপতি, শ্রদ্ধেয়
বলরাজ মাধোকজী, তৎকালীন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক
সংঘের অন্যতম প্রধান শ্রী রাজেন্দ্র সিংহ কে
চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন যে, তিনি যেন আবার
নতুন করে ভারতীয় জনসঙ্ঘকে ঢেলে সাজানোর
ব্যাপারে সাহায্য করেন । কিন্তু মাধোকজী
ভারতীয় জনসঙ্ঘকে আবার পূনরুত্থান করার
বিষয়ে যে একেবারেই একা ছিলেন তা নয়,
দৃষ্টান্তমূলক ভাবে সেই সময় বিজেপির
হিন্দুত্ববাদী মনোভাবসম্পন্ন কিছু নেতা ও সংঘ
পরিবারের কিছু প্রভাবশালী নেতার সাথে একযোগে
এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন তিনি । কিন্তু পরবর্তী
সময়ে বিজেপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিশেষ
করে অটল বিহারি বাজপেয়িজী সঙ্ঘ পরিবারকে কথা
দেন যে, তারা হিন্দু মহাসভার দীর্ঘকালীন হিন্দু
জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গুলিকে যেমন রাম মন্দির
নির্মাণ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন ও কাশ্মীর
থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ ও ৩৫-এ বাতিলের দাবি
সংক্রান্ত আন্দোলনগুলিকে বজায় রাখবেন, ফলে
বলরাজ মাধোকজী তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে
নেন ।
বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন গুলির
সূচনা কিন্তু দলটির জন্মলগ্নের অনেক পরে কিছুটা
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় । এর ছাপ পাওয়া যায়
দলটির দলীয় সংবিধানে লিখিত তার উদ্দেশ্য,
বিশ্বাস ও মূলভিত্তি রূপে তার আদর্শের মধ্যে ।
জনসঙ্ঘের থেকে নয়, বাস্তবে ভারতীয় জনতা
পার্টির জন্ম হয়েছিল জনতা দলের সেক্যুলার
ভাবধারা থেকে । তাই বিজেপির দলীয় সংবিধানে,
অনুচ্ছেদ তিন এ, এর মূলগত দর্শণ বা আদর্শ
সম্পর্কে বলা হয়েছে- "একাত্ম মানবতাবাদ" হবে
এই দলের মূল আদর্শ ।
Article- ।।। - Basic Philosophy.
_____________________
"Integral Humanism" shall be
basic philosophy of the party.
এখন এই "একাত্ম মানবতাবাদ" বা "Integral
Humanism" কি ? এটি হল আজীবন
জনসঙ্ঘের সদস্য ও রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ পন্ডিত
দীনদয়াল উপাধ্যায় এর প্রবর্তিত একটি থিয়োরি
বা মতবাদ । কি বোঝানো হয়েছে এতে ? বিশ্বকবি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "নানা ভাষা, নানা মত, নানা
পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান", তার
বিখ্যাত কবিতার কয়েক ছত্রের মধ্যে দিয়ে,
ভারতবর্ষের নানান বৈচিত্র্যের মধ্যে যে ঐক্যের
সন্ধান করেছিলেন সংক্ষেপে, পন্ডিত দীনদয়াল
উপাধ্যায় তার একাত্ব মানবতাবাদের মধ্যে দিয়ে
তাকেই বিস্তৃতভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । কিন্তু
এইযে বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের কথা বারবার
আমাদেরকে স্মরণ করানো হয়, এর মধ্যেও থেকে
গিয়েছে কিছু বিতর্কমূলক বিষয় যেমন, যদি দুটি
মতবাদ পরস্পর পরস্পরের একেবারেই বিপরীত
মেরুতে অবস্থান করে ? যেমন ধরে নেওয়া যাক,
পুলিশ, আইন ও শাসন ব্যবস্থার মতবাদ আর
কালোবাজারি, চুরি, ডাকাতি রাহাজানি, ধর্ষণের
মতবাদ, যদি দুটির মধ্যে সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা
করা হয় ! যদি একই বাটিতে দুধ এবং তামাকের
মতবাদকে এক করা হয় ! তবে কি তাদের মধ্যে
ঐক্য ঘটানো বাস্তবে সম্ভব ? ঠিক একই কথা
প্রযোজ্য, ভারতবর্ষের বাস্তবের মাটিতেও । এই
ভারতেই উদ্ভূত বিভিন্ন সম্প্রদায়, বর্ণ ও
মতবাদ এর মধ্যে হাজারো ভিন্নতা থাকলেও, এদের
মূলগত সুর একই ঐক্যতানে বাধা । কিন্তু
ভারতবর্ষের বাইরে থেকে যে সমস্ত আসুরিক
মতবাদ এদেশে এসে তার ডালপালা বিস্তার করতে
সচেষ্ট হয়েছে, যেমন ইসলাম, কমিউনিজম,
মাওইজম্, খ্রিস্টীয় মতবাদ প্রভৃতি, সেগুলো কি
ভারতবর্ষের আপাত বৈচিত্রের মধ্যে নিজেদের
আসুরিক ভাবধারা নিয়ে ঐক্য তৈরি করতে পারবে ?
বাইরে থেকে আসা মতবাদ গুলি বলছে যদি তোমার
সাথে কেউ ভিন্নমত পোষণ করে তোমার আদর্শ
অনুপ্রাণিত না হয় তবে সে তোমার শ্রেণীশত্রু, সে
বিধর্মী, কাফের, তাই তাকে নির্বিচারে হত্যা করো
। তার অস্তিত্ব তোমার অস্তিত্বের জন্য
বিপদজনক, তাই ছলে-বলে-কৌশলে, তোমার বিপরীত
মতাদর্শ গুলিকে ধ্বংস করো, নিশ্চিহ্ন করো ।
অন্যদিকে ভারতবর্ষে উদ্ভুত বিভিন্ন সম্প্রদায়
ও মতবাদ গুলি, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে
হরণ করে না । আদর্শগত মিল না থাকলেও
পরস্পরের রক্ত পান করার জন্য যুযুধান হয়না ।
তাই 'একাত্ম মানবতাবাদ' বা 'বৈচিত্রের মধ্যে
ঐক্য' শুধুমাত্র সম্ভব ভারতবর্ষে উদ্ভুত,
বিভিন্ন মত-পথ ও আদর্শ গুলির সমন্বয়ের
মাধ্যমে, কোন বহির্বিশ্ব থেকে আসা আসুরিক
মতবাদকে নিয়ে নয় ।
ভারতীয় জনতা পার্টির সংবিধানে বর্ণিত, অনুচ্ছেদ
৪ এ, দলের দায়বদ্ধতা প্রসঙ্গ, আরো চমকপ্রদ ।
এখানে বলা হয়েছে,
"দল সব সময় দায়বদ্ধ থাকবে, জাতীয়তাবাদ,
জাতীয় ঐক্য, গণতন্ত্র, 'গান্ধীবাদী সমাজবাদ ও
'ধনাত্মক বা উপকারী ধর্মনিরপেক্ষতা' যাকে দল
বর্ণনা করছে 'সর্ব-ধর্ম-সমভাব' হিসেবে এবং
আদর্শগত রাজনীতি, এইসকল বিষয়ে । রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রেও
দল সর্বদা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে ।
Article- IV - COMMITMENTS-
______________________
The party shall be committed to
Nationalism and National
integration, Democracy,
'Gandhian Socialism', 'Positive
Secularism', that is "Sarva Dharma
Sambhav" and Value based
politics. Party stands for
decentralization of economic and
political power.
আমরা কমবেশি জাতীয়তাবাদ, জাতীয় ঐক্য,
গণতন্ত্র, এই কথা গুলির মোটামুটি অর্থ সবাই
জানি, কিন্তু খুবই কৌতূহলের উদ্যোগ করে, যখন
ভারতীয় জনতা পার্টির সংবিধানে বর্ণিত দুটি
নীতির উপর দৃষ্টিপাত করি, এক 'গান্ধীবাদী
সমাজবাদ' এবং দ্বিতীয়টি হল, 'উপকারী
ধর্মনিরপেক্ষতা' যাকে এই সংবিধান সব ধর্মের
মধ্যে একতা অথবা সব ধর্মের আদর্শকে
সমানভাবে গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছে, আর এই
নিয়েই আবার নতুন করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে
। একটু আগেই বলা হয়েছে, ভারতবর্ষের বাইরে
থেকে আগত মতবাদগুলো, বিশেষ করে ইসলাম এবং
কমিউনিজমের মত মতবাদ গুলিকেই, তাহলে কি
সর্ব-ধর্ম- সমভাবের আদর্শে আমাদেরকে
আত্মস্থ করতে হবে ? আসুরিক মতবাদের মধ্যে
নিজেদের বিলয় ঘটাতে হবে ? নাকি আসুরিক মতবাদ
গুলিকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করে, নিজেদের কে
তাদের আসুরিক ভাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ?
"সর্ব-ধর্ম-সমভাব" বলতে ভারতীয় জনতা
পার্টির সংবিধানগত আদর্শ ঠিক কি ? এ বিষয়টি
স্পষ্ট নয়, তবে আপাতভাবে এটি ইংরেজি, হিন্দি ও
বাংলায় পড়লে যা অর্থ দাঁড়ায় তা হল, ভারতবর্ষের
বুকে তরবারির জোরে, কূটকৌশলে বা ছলে-বলে-
কৌশলে, যেকোন উপায়ে আগত, লালিত-পালিত,
বিকশিত যেকোনো ধর্মমতের আদর্শকেই
আমাদেরকে, নিজেদের সনাতন ধর্মমতের সমান
মর্যাদা এবং সমান মানবিক ভাবনার নিরিখেই
সম্মান জানাতে হবে, কিন্তু প্রশ্ন হল বাস্তব
বুদ্ধি কি একে সমর্থন করে ?
একই ভাবে মনে দ্বিধা-দ্বন্দের উপস্থিত হয়
বিজেপির রন্ধে রন্ধে গৃহীত "গান্ধীবাদী
সমাজবাদ" আদর্শটি কে নিয়ে, কারণ "হিন্দু
জাতীয়তাবাদ" এবং "গান্ধীবাদী সমাজবাদ" দুটি
আদর্শ পরস্পরের মধ্যে কোন ভাবেই মিল খায় না
। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী তাঁর রাজনৈতিক
জীবনের ঊষালগ্ন থেকেই যে সমাজের স্বপ্ন
দেখেছিলেন তার সাথে হিন্দু জাতীয়তাবাদের কোন
সম্পর্ক নেই । গান্ধীর রাজনৈতিক আদর্শ ও
আন্দোলন মূলত মুসলমানদের জন্য আগাগোড়াই
নিবেদিত ছিল । যিনি মুসলমানদের দ্বারা হিন্দু
নারীদের ধর্ষণ প্রসঙ্গে, সেই ধর্ষণকারী
মুসলমানের পায়ে চুমু খেয়ে, ধর্ষণকে বৈধতা দেন
এবং একইসাথে হিন্দু নারীদের দুটি দাঁতের মধ্যে
জিহবাকে জোরে কামড়ে, শারীরিক যন্ত্রণা ভুলে
থাকার চেষ্টা করার মধ্যে দিয়ে, ধর্ষণকে স্বীকার
করে নেওয়ার পরামর্শ দেন এবং একইসাথে হিন্দু
জাতীয়তাবাদের অন্যতম প্রধান মুখ চীরনমস্য
স্বামী শ্রদ্ধানন্দকে, রশিদ নামের একজন
মুসলিমের দ্বারা হত্যাকে সঠিক বলে বর্ণনা করেন
এবং এর স্বপক্ষে রশিদের সুরক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে
পড়েন, তিনি আর যাই হোন না কেন, হিন্দু
জাতীয়তাবাদের শত্রু ছাড়া অন্য কিছু নন্ । তাই
নিজেদের সেক্যুলার ভাবধারাকে গোপন রাখার চেষ্টা
করলেও মধ্যে মধ্যে গান্ধীর চশমার মধ্য দিয়ে
কিংবা গডসেজীকে দেশপ্রেমিকের আখ্যা দিলে,
সাধ্বী প্রজ্ঞার মত সাংসদকে নিরাপত্তা পরিষদের
সদস্য পদ থেকে বহিস্কার করে, পরবর্তী সময়ে
আরও কঠোর শাস্তির ভয় দেখিয়ে, বিজেপি গান্ধীর
জন্য কেঁদে ভাসায়, এমনকি সময়ে সময়ে তা কংগ্রেস
দলের চোখের জলকেও হার মানায় ।
অন্যদিকে ভারতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে, হিন্দু
জাতীয়তাবাদ প্রচারিত ও জনপ্রিয়তা অর্জন
করেছিল যাদের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে, সেই
স্বামী মাধবাচার্য, রায়বাহাদুর চন্দ্র নাথ মিত্র,
স্যার প্রতুল চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বাবু নবীন
চন্দ্র রায়, ঋষি রাজনারায়ণ বসু, শ্রী নবগোপাল
মিত্র, হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ,
বালগঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, বিপিন
বিহারী পাল, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, মহারাজা
মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য,
স্বামী শ্রদ্ধানন্দ, শঙ্করাচার্য্য স্বামী ড:
কৃতকোঠি, রাজা নরেন্দ্র নাথ, ড: বালকৃষ্ণ
শিবরাম মুঞ্জে, শ্রী রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, ভাই
পরমানন্দ, বৌদ্ধ ভিক্ষু উত্তম, শঙ্করাচার্য
ভারতীকৃষ্ণ তীর্থ, স্বতন্ত্রতা বীর বিনায়ক
দামোদর সাভারকার, ডঃ কেশবরাম বলিরাম
হেডগেওয়ার, শ্রী নির্মল চন্দ্র চ্যাটার্জী প্রমুখ
মনিষীদের কারোর ঠাঁই হলোনা, বিজেপি সরকারে
আসার পর থেকে কোন জনকল্যাণমূলক সরকারি
প্রকল্পের নামকরনের মধ্যে অথবা স্মৃতিবিজড়িত
বৃহৎ কোনো মর্মর মূর্তির মাধ্যমে তাদের
অবদানকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে । বরং বহু ক্ষেত্র
থেকে এই অভিযোগ উঠছে যে বর্তমান বিজেপির
প্রধান দুই কান্ডারী অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র
মোদি, দুজনেই গুজরাটের বাসিন্দা হওয়ার কারণে
মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ও সরদার বল্লভ ভাই
প্যাটেল এই দুই গুজরাতি মনিষীকে তারা সর্বাধিক
গুরুত্ব দিয়েছেন, অনেকটা স্বজন পোষণ করার
মতোই । যে বিজেপি নিজেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী
বলে প্রচার করে বেরায়, তাদেরকে কংগ্রেস দলের
মূল আদর্শগত নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী
এবং সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেলের ভাবমূর্তিকে
ধার করতে হলো অথবা বলা যেতে পারে হাইজ্যাক
করতে হলো, তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ
করার উদ্দেশ্যে । এটা হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সাথে
একটা বিশ্বাসঘাতকতার শামিল । ১৯৮০ সালে
জন্মলগ্নের পর থেকেই, ভারতীয় জনতা পার্টি তার
পূর্বসূরী জনতা দলের সেক্যুলার ভাবমূর্তি চর্চা
করে আসছিল রাজনৈতিক ময়দানে, কিন্তু ১৯৮৪
সালে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর খুন
হওয়ার পরে ভারতীয় জনতা পার্টি সহ একাধিক
কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দল তাদের গুরুত্ব
হারায় এবং এই সময় নিজেদের হারিয়ে যাওয়া মাটি
ফিরে পেতে মরিয়া ভারতীয় জনতা পার্টি, আঁকড়ে
ধরে হিন্দু মহাসভার দীর্ঘদিনের মূল আদর্শ ও
আন্দোলনের ভাবাদর্শ হিন্দু জাতীয়তাবাদকে এবং
এ সময় থেকেই তারা সিদ্ধান্ত নেয়, দলীয় সংবিধান
অনুযায়ী তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বা সেক্যুলার
হলেও, গান্ধী তাদের চোখের মনি হলেও, ভোট
ভিক্ষা চাইতে গেলে, মানুষের কাছে হিন্দু
জাতীয়তাবাদীর ছদ্মবেশ ধারণ করতে হবে । আর
তাই ১৯৪৯ সাল থেকে হিন্দু মহাসভার যে রাম
মন্দির আন্দোলন, তাকে কিছু শাখা সংগঠনের
মাধ্যমে ১৯৮৬ সালের পর থেকে, ধীরে ধীরে
আত্মস্থ করতে অথবা বলা ভালো হাইজ্যাক করতে
শুরু করল ভারতীয় জনতা পার্টি । যদিও রাম
মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে বিকৃত খবর পরিবেশন করে
চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেল এবং
বিশেষ করে বাংলায় তাদের অন্যতম প্রচারের মুখ
স্বস্তিকা পত্রিকা । গত ১৬ ই ডিসেম্বর
২০১৯ সংখ্যায়, রাম মন্দির শীর্ষকে, স্বস্তিকা
পত্রিকা রাম মন্দির আন্দোলনের বিস্তারিত
বিবরণ দিয়েছেন, কিন্তু এর মূল আইনি লড়াই যা
১৯৪৯ সাল থেকে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা করে
আসছে এবং মাননীয় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় হিন্দু
মহাসভার "রামলালা বিরাজমান পক্ষ" কেই
একমাত্র বিবাদী পক্ষ মেনে নিয়ে যে রায় ঘোষণা
করেছেন, তাকে গোপন করার চেষ্টা করেছে এই
পত্রিকাটি, আর তাই তাদের রাম মন্দির সংক্রান্ত
প্রতিবেদনের প্রতিটি ছত্রে ছত্রে "হিন্দু
মহাসভা" নামটি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে এবং
তার পরিবর্তে চালাকি করে "হিন্দু পক্ষ", "হিন্দু
পরিবার", "হিন্দু আন্দোলনকারী" এই ধরনের
শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে । মুখ্য উদ্দেশ্য,
হিন্দু মহাসভার রামমন্দির সংক্রান্ত এই লড়াইয়ের
সুদীর্ঘ ইতিহাসকে অস্বীকার করা, মানুষের কাছ
থেকে গোপন করা, কারণ এই পত্রিকাটির সম্পাদক
বিজেপির হাওড়া জেলা থেকে দাঁড়ানো লোকসভা
ভোটের প্রার্থী প্রাক্তন প্রখ্যাত সাংবাদিক
রন্তিদেব সেনগুপ্ত । স্বাভাবিকভাবেই যখন
ভারতীয় জনতা পার্টি, একটি প্রকৃত হিন্দু
জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল "হিন্দু মহাসভার"
আন্দোলনের কৃতিত্ব, মিথ্যাচার করে, মানুষের
কাছে তাদের নিজেদের আন্দোলন বলে দাবী তুলে
কৃতিত্ব নিয়ে আসছে, সে ক্ষেত্রে রন্তিদেববাবু,
দলের দলদাস হিসেবে তার সঠিক কাজই করেছেন ।
দলের মিথ্যার বেসাতির ঢক্কানিনাদকে তিনি
যথাসম্ভব আড়াল করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু
তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভুলে গিয়েছেন, রাম
মন্দির মামলার শুরু থেকে চূড়ান্ত রায়দান পর্যন্ত,
সমস্ত তথ্য, নথি, সাক্ষ্য, মাননীয় সর্বোচ্চ
ন্যায়ালয় তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে জনসাধারণের
জন্য প্রকাশ করেছেন । যে কোন মানুষ চাইলেই
প্রকৃত সত্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে পারবেন
এবং জানতে পারবেন । তাই চলুন আমরা এক ঝলক
দেখে নিই, মাননীয় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় এই
মামলাটির সম্পর্কে ঠিক কি বলছেন ?
১৯৪৯ সালের ২২ শে ডিসেম্বর রাতে তৎকালীন
অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার রাষ্ট্রীয় অধ্যক্ষ
মহন্ত স্বামী শ্রী দ্বিগবিজয় নাথ, হিন্দু মহাসভার
ফৈজাবাদ জেলার, অযোধ্যা নগরীর নগর সভাপতি
মহন্ত শ্রী রামচন্দ্র পরমহংস, হিন্দু মহাসভার
বিশিষ্ট সদস্য শ্রী অভিরাম দাস, শ্রী রামসকল
দাস, শ্রী সুদর্শন দাস এবং আরও ৫০ জন সদস্য,
বাবরি মসজিদের তালা ভেঙে সেখানে রামলালা ও
অন্যান্য মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং সারা রাত
পাহারা দিয়ে পরের দিন ২৩ শে ডিসেম্বর সকালে,
রামলালা প্রকট হয়েছেন এই উপলক্ষে, "প্রকট
উৎসব" পালন করেন সমগ্র ফৈজাবাদ জেলা জুড়ে ।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ শে ডিসেম্বর সকাল
৯ টায়, মহন্ত দ্বিগবিজয় নাথ সহ অন্যান্য হিন্দু
মহাসভার পদাধিকারীদের বিরুদ্ধে প্রথম
এফআইআর দায়ের করা হয়, বাবরি মসজিদ সংলগ্ন
মুসলমান পক্ষের তরফ থেকে । এর পরেই ফৈজাবাদ
জেলা কালেক্টর এর পক্ষ থেকে এই রাম মন্দির
অথবা তৎকালীন বাবরি মসজিদ থেকে বিতর্কিত
সৌধ বলে সেখানে মুসলিমদের জন্য নামাজ পড়া
নিষিদ্ধ করা হয় এবং হিন্দুদের পাশের একটি গেট
থেকে রামলালা দর্শনের অধিকার দেওয়া হয় ।
সমগ্র বিতর্কিত সৌধের মধ্যে ঢোকা নিষিদ্ধ করে
দেওয়া হয় সকল ধর্মের মানুষদের জন্য ।
কয়েকদিন পরে
ফৈজাবাদ তথা অযোধ্যার অতিরিক্ত নগরপাল
১৯৪৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি নির্দেশ জারি
করেন । তিনি ওই বিতর্কিত জমিটি মিউনিসিপ্যাল
বোর্ডের সভাপতি প্রিয়া দত্ত রামের হাতে ন্যাস্ত
করেন।
এরপর ১৯৫০ সালের ১৬ জানুয়ারি হিন্দু
মহাসভার ফৈজাবাদ জেলার কার্যকরী সভাপতি
গোপাল সিংহ বিশারদ ফৈজাবাদের দেওয়ানি
বিচারকের কাছে মামলা রুজু করে জানান, তাঁকে
মন্দির চত্বরে পুজো করতে যেতে বাধা দিয়েছে
সরকারি কর্মীরা। ১৯৫০ সালে গোপাল সিংহ
বিশারদ ফৈজাবাদ দেওয়ানি আদালতে অযোধ্যার
বিতর্কিত জমিটির স্বত্ব সম্পূর্ণভাবে হিন্দুদের
পক্ষে দাবি করে যে মামলাটি করেছিলেন, তার
পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল, ১৯৫০ সালে মাননীয়
ফৈজাবাদ জেলা আদালত, শিবশঙ্কর লাল নামক
ব্যক্তিকে কমিশনার নিযুক্ত করে বিতর্কিত
স্থানটির সরেজমিনে খতিয়ে দেখে তার রিপোর্ট
দিতে বলে। ২৫ জন কমিশনার তার রিপোর্ট পেশ
করেন এবং এই মামলাটিই শেষ পর্যন্ত রাম মন্দির
মামলা হিসেবে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে
মাননীয় সর্বোচ্চ ন্যায়ালয় তার চূড়ান্ত রায়
প্রদান করেন এবং হিন্দু মহাসভার ফৈজাবাদ জেলার
কার্যকরী সভাপতি গোপাল সিংহ বিশারদ কে রাম
মন্দিরের পূজারীর দায়িত্ব ন্যস্ত করেন, যদিও এর
কিছুকাল আগে ১৯৮৬ সালে গোপাল সিংহ বিশারদ
রাম লোকে যাত্রা করেছেন কিন্তু তার আন্দোলন,
তার লড়াই এবং সর্বোপরি হিন্দু মহাসভার ১৯৪৯
সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৭০ বছরের সুদীর্ঘ
আইনি লড়াই মিথ্যে হয়ে যায়নি । ১৯৮৬ সালে
শ্রদ্ধেয় গোপাল সিংহ বিশারদ এর শ্রীরাম লোকে
প্রয়াণের পরে, কিছু সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদ,
রাম মন্দির সংক্রান্ত বিতর্ক নিয়ে, রাজনীতির
ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েন । নতুন করে
"শ্রীরাম জন্মভূমি ন্যাস" নামের সংগঠন গড়ে
তোলা হয়, যদিও হিন্দু মহাসভার অযোধ্যার নগর
সভাপতি মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস কে এর
সভাপতি করা হয় । ইতিমধ্যেই মাননীয় অশোক
সিঙ্ঘলজী বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দায়িত্বে চলে
এসেছেন । তার নেতৃত্বে এই রাম জন্মভূমি
আন্দোলন এক সুনির্দিষ্ট গন- আন্দোলনের রূপ
পায় । সময় বুঝে মাঠে নেমে পড়েন বিজেপির তরফ
থেকে দ্বিতীয় জনপ্রিয় নেতা শ্রী লাল কৃষ্ণ
আদবানিজী । তিনি রাম মন্দিরকে কেন্দ্র করে
রথযাত্রা শুরু করেন এবং হিন্দু মহাসভার রাম
মন্দির আন্দোলন ধীরে ধীরে বিজেপির দখলে চলে
যায় এবং তার ফলশ্রুতিতে অত্যন্ত আশাপ্রদ ফল
পান পরবর্তী নির্বাচন গুলিতে ভারতীয় জনতা
পার্টি । কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, হিন্দু মহাসভার
যে ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে বিজেপির এই রমরমা,
পরবর্তী সময় সেই হিন্দু মহাসভার রাজনৈতিক
উত্থানের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় এই
ভারতীয় জনতা পার্টি, যার মাশুল আজও হিন্দু
মহাসভা কে গুনতে হচ্ছে ।
পরিশেষে বলা যায় আগামী দিনে ভারতীয় জনতা
পার্টির প্রকাশ্যে চর্চিত সেক্যুলার ভাবধারা,
মুসলিম তোষণকারী গান্ধীবাদকে নিয়ে চূড়ান্ত
আদিখ্যেতা, এই দলটিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় নিয়ে
যায়, সেটাই দেখার । রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু
হয়না, তাই অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা আশাবাদি,
আগামীদিনে ভারতবর্ষের বুকে হিন্দুত্ববাদী
রাজনৈতিক দল হিসাবে ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের
মুখ্য ধারক ও বাহক হিসেবে, তারা তাদের স্বকীয়তা
ও স্বীকৃতি বজায় রাখতে পারবে । আর
বিশ্বাসঘাতকদের ইতিহাস ধীরে ধীরে উন্মোচিত
হবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রিয় প্রতিটি মানুষের
কাছে ।
।। জয়তু অখন্ড হিন্দুরাষ্ট্রম্ ।। ।। বন্দেমাতরম্
।।
।। মহন্ত স্বামী সুন্দর গিরী মহারাজ ।।
রাজ্য সভাপতি, পশ্চিমবঙ্গ, অখিল ভারত হিন্দু
মহাসভা ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted