এবার অসিম দাস বাউলের পালা!

এবার অসিম দাস বাউলের পালা! ২০১৯ সালে এক গানের অনুষ্ঠানে অসিম বাউল বলেছিলেন আল্লাহ ভগবানের চেয়েও গুরু বড়। দুইজন বাউলকে জেলে ভরার পর পরবর্তী টার্গেট লোডিং হচ্ছিল জানতাম। অসিম বাউল দ্রুত সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তার কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন তাহলে তিনি ক্ষমা চান। তিনি বলেছেন, আমি লালন দর্শনে বিশ্বাস করি। লালনের কাছে মানুষই সবচেয়ে বড়। তাই গুরুর অন্বেষণ করতে বলেছি…। অসিম বাউলের বিরুদ্ধে ইউটিউবে কওমি জঙ্গিদের ইউটিউবাররা একের পর এক ভিডিও তৈরি করছে, অসিম বাউলকে গ্রেফতার করতে। বাংলাদেশ থেকে টোটালি বাউল গান ও দর্শন পুরোপুরি উঠিয়ে দেয়ার এটা মাস্টার প্লাণ। ভবিষ্যতে বাউল দর্শন যেন প্রকাশ্যে বলতে কেউ সাহস না করে সেই পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। অসিম বাউল যদি আল্লার চাইতে গুরু বড় বলে জেলে যান তাহলে ভবিষ্যতে আল্লার চাইতে ভগবান বড় বললেও এদেশে যে কেউ জেলে যাবে। তার মানে হচ্ছে আপনি যে ধর্মেরই হোন আপনাকে আল্লাহ সবার বড় শ্রেষ্ঠ মেনে নিজ ধর্ম পালন করতে হবে! এটাই কিন্তু ইসলাম। ইসলাম আরবে ইহুদী খ্রিস্টানদের বিভিন্ন শর্তে মুসলিমদের আনুগত্য স্বীকার করে বসবাসের অনুমতি দিয়েছিলো তার অন্যতম ছিলো মুহাম্মদকে নবী বলে মেনে নেয়া!

অসিত বাউলের পরবর্তী টার্গেট হয়ত আগেই ঠিক করা আছে। সংসদে প্রধানমন্ত্রী শরীয়ত বাউলের বিরুদ্ধে কথা বলার পর ইসলামিস্টদের বাউল নিধন প্রজেক্ট সফলতা পায়। একটা ম্যাসেজ কিন্তু ক্লিয়ার, আমরা সরকারের মনোভাবটা বুঝতে পারছি। সংসদে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেনন বলেছেন, তিনি স্পিকারের মাধ্যমে পেইনড্রাইভে কিছু ওয়াজের ভিডিও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোর জন্য। সেসব ভিডিওতে সেই সব ওয়াজী হুজুরের ভিডিও ছিলো যারা দেশে অন্য ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, জঙ্গিবাদে উশকানি দিচ্ছে, নারীর প্রতি সহিংসতা ছড়ানো বক্তব্য দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সেই ভিডিও দেখেছেন ধরে নিলে প্রথম প্রশ্ন আসবে তাহলে সেই মাওলানারা পুরো দেশে দাপটের সঙ্গে এখনো ওয়াজ করে চলেছেন কিভাবে? আমরা দেখলাম সরকারের একজন প্রভাবশালী নেতা সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে হযরত উপাধি দিলেন, তাতেও মন না ভরাতে প্রধানমন্ত্রীকে ‘আওলাদে আউলিয়া’ বলে ভূষিত করলেন। প্রধানমন্ত্রী এসব শুনে নাখোশ হয়েছেন তেমন কোন প্রকাশ্য প্রমাণ নেই। যেহেতু এই হযরত বলার পর আউলিয়া উপাধি এসেছে বুঝা যায় প্রধামন্ত্রী ইসলামিক এসব উপাধিতে খুশি আছেন। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুকে এদেশের সেক্যুলার রাজনীতির নায়ক মনে করে একদা গর্ব করতাম তারা এখন শুনছি তিনি আউলিয়া ছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষতার অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির আইকনকে এখন ইসলামিক ব্যক্তিত্বে রূপ দেয়ার চেষ্টা থেকে সরকারের মনোভাব এখন পরিস্কার। কাজেই অসিম বাউলের ক্ষমাটমা চেয়ে কোন লাভ হবে না। তাকে জেলে যেতেই হবে। বাকী বাউলদের উচিত আন্ডাগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া। এদেশে হুজুর আর আউলিয়ারা ছাড়া আর কারোর নিজস্ব মতামত ধর্ম বিশ্বাস, অবিশ্বাস করার কোন অধিকার নেই। এদেশে বাস করতে হলে খ্রিস্টানদেরও নবী মুহাম্মদকে নবী হিসেবে মানতে হবে। এদেশের হিন্দু বৌদ্ধদেরও বলতে হবে আল্লাহ তাদের ভগবানের চাইতেও বড়। নাস্তিকদেরও বলতে হবে আল্লাহ মুহাম্মদ সবচেয়ে বড়!


0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted