খলিস্তান পর্ব...



আরো এক #খলিস্তান পর্ব...

১৯৮৮ সালের মে মাসে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির আবার চলে গিয়েছিল খলিস্তানি জঙ্গিদের দখলে। ১০ দিন ধরে ভিতরে আটকে ছিলেন সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকি রোমানিয়ার এক কূটনৈতিক অফিসার। ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মন্দিরকে জঙ্গি মুক্ত করার। 



কিন্তু কিভাবে? অপারেশন ব্লু স্টারের স্মৃতি তখনও টাটকা। ওই একটি অপারেশনের জেরে পঞ্জাবের খলিস্তানি সন্ত্রাস ফের বেড়ে গিয়েছিল বহুগুণ। বহু রক্ত বয়েছে শতদ্রু ও বিয়াসে। সুতরাং আবার স্বর্ণমন্দিরে আর্মি প্রবেশ করবে? আবার একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি? আসল কথা হল, মন্দিরের মধ্যে আদতে ঠিক কতজন জঙ্গি আছে এবং তাদের পজিশনই বা কী? অস্ত্রশস্ত্র কত আছে? এসব বিষয়ে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। তাহলে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া কী উচিত? এভাবেই একদিন...দুদিন...তিনদিন...।
আর্মি এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড বিরক্ত। উসখুস করছে সকলে। কাঁহাতক আর অপেক্ষা করা যায়? এবার এসপার নয় ওসপার করে ফেলা যাক। আজ রাতেই অপারেশন। সব তৈরি। প্ল্যানও রেডি। ঠিক বিকালে দিল্লি থেকে রেডিও ট্রান্সমিটারে মেসেজ এল...টাইগার ফর টু...বিল্লা ক্যানসেলড....
বিল্লা ক্যানসেলড? কেন? টাইগার মানে হল অ্যাসল্ট কমান্ডার। যিনি অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আর বিল্লা হল অপারেশনের কোড নেম। অর্থাৎ রাতের অপারেশন বাতিল। কেন? কেউ জানে না। অপেক্ষা করতে বলা হল আবার মেসেজ আসা পর্যন্ত। 
ঠিক পরদিন সকাল থেকে দেখা গেল এক রিক্সাচালক ইতিউতি ঘুরছে স্বর্ণমন্দিরের কাছে। একেবারে গেটের সামনেও ঘোরাঘুরি করল। স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে তখন সুরজিৎ সিং পেন্টা, করজ থান্ডে, ভাগ সিং, চঞ্চল সিং এর মতো খলিস্তানি ফোর্সের কুখ্যাত জঙ্গি নেতারা। এদের মাথার দামই লক্ষ লক্ষ টাকা ধার্য হয়েছে ততদিনে। 
২৪ ঘন্টা পর সকালে আবার ওই রিক্সাচালককে গেটের সামনে দেখেই আচমকা তাকে পাকড়াও করে জঙ্গিদের একটি গোষ্ঠী ভিতরে নিয়ে গেল। স্বাভাবিক, গোটা চত্বর যেখানে শুনশান, আতংকগ্রস্ত, সেখানে এই রিক্সাচালক এভাবে ঘুরছে কেন? হয় পাগল, নয় কোনও উদ্দেশ্য আছে। ইন্ডিয়ান ফোর্সের কোনও কৌশল নাকি? দুর্ধর্ষ খলিস্তানি জঙ্গি পেন্টা'র সামনে  হাজির করানো হল তাকে। ভোলেভালা দেখতে রিক্সাচালক পেন্টার সামনে গিয়েই পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে এগিয়ে দিল আর মুখটা এগিয়ে নিয়ে পেন্টার কানেকানে কিছু একটা কোড নেম বলল মনে হয়। কী আশ্চর্য! নেতা সুরজিৎ সিং পেন্টা'র মুখে আচমকা এক অদ্ভুত আনন্দের হাসি ফুটল। এবং এক নিমেষে সে জড়িয়ে ধরল রিক্সাচালককে। যত্ন করে খাওয়াদাওয়া হল। দুজনে একান্তে বসে পরবর্তী প্ল্যান করে ফেলল। আসলে এই রিক্সাচালক পাকিস্তানের আইএসআই চার। লাহোর থেকে এসেছে শুধুমাত্র খলিস্তানি জঙ্গিদের সাহায্য করতে। দীর্ঘদিন ধরে আইএসআই-এর থেকে অস্ত্র ও অর্থের সাহায্য পাওয়া পেন্টা জানে আইএসআই-এর কিছু কোড বার্তা। এই রিক্সাচালক সেই বার্তা মিলিয়ে দিয়েছে। আর চিন্তা নেই। ইন্ডিয়ান সরকারকে এবার ঘোল খাইয়ে দেওয়া হবে। কোটি কোটি টাকা মুক্তিপণ এবার হাতের মুঠোয়। অত্যন্ত দামী একটা প্ল্যান দিল ওই রিক্সাচালকের ছদ্মবেশে থাকা আইএসআই চর। এর আগে অপারেশন ব্লু স্টারে যেহেতু ভারতীয় আর্মি ভিতরে ঢুকে অভিযান চালিয়েছে এবং প্রচুর  নিন্দিত হয়েছে, এবার তা করবে না। মন্দিরের পিছনের অংশেই জড়ো হয়েছে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড। আর পঞ্জাবের মানুষকে বার্তা দিতে হবে যে সাধারণ মানুষের কোনও ক্ষতি করা হচ্ছে না। লোকসান হয়নি কারও। তাদের একেবারে গেটের সামনে রেখে নিয়মিত প্রার্থনা করতে দেওয়া হচ্ছে, খেতে দেওয়া হচ্ছে এই বার্তাও দেওয়া প্রয়োজন। যাতে ধর্মপ্রাণ শিখ নাগরিক মনে করেন জঙ্গিরা সাধারণ মানুষের পক্ষে। ধর্মের পক্ষে। অতএব জঙ্গিদের সবাইকে পিছনের গেটেই জমা হতে বলা হল। ঠিক দুদিন পর সবাই প্ল্যান বুঝিয়ে দিয়ে ওই আইএসআই চর তথা রিক্সাচালক গোপনে বেরিয়ে এল রিকশ নিয়ে। এবং নিমেষে উধাও হয়ে গেল।
ওই রিক্সাচালক মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক ১০ ঘন্টা পর সামনের গেট দিয়েই ভিতরে প্রবেশ করল ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। প্রথমেই তারা সাধারণ ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের সম্পূর্ণ গার্ড করে নিল।বাধা দেবার প্রশ্নই নেই। কারণ, বেশিরভাগ জঙ্গিই পজিশন নিয়েছে পিছনের গেটে। ততক্ষণে মন্দির ঘিরে বসে পড়েছে ভারতীয় বাহিনী। হতচকিত পেন্টা বুঝেই উঠতে পারল না- এটা কী হল? ততক্ষণে ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডের জানা হয়ে গিয়েছে ভিতরে মোট কতজন জঙ্গি আছে? কত অস্ত্র আছে। শুধু এটুকুই নেয়, তাদের হাতে নিখুঁত ম্যাপ চলে এসেছে। কিন্তু কিভাবে হল এই অসাধ্যসাধন? তাও আবার এত অনায়াসে? গোটা কৃতিত্ব... 
হ্যা, ওই রিক্সাচালকেরই। না, উনি আদৌ রিক্সাচালক নন, আইএসআই-এর চরও নন। উনি অজিত দোভাল। 
গত ৩৫ বছর ধরে ভারতের এক নম্বর স্পাই। উনি গিয়েছিলেন প্ল্যান ভন্ডুল করতে। স্বর্ণমন্দিরের ভিতরকার চিত্রটা জানতে। যেহেতু সাত বছর পাকিস্তানে থেকে র-এর হয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল, তাই তাকে খলিস্তানি উগ্রপন্থীরা চিনতেও পারেনি, কোড নম্বরের উল্লেখ করে তাদের প্ল্যান ভেস্তে দেওয়া তার বাঁহাতের কাজ। 
রক্ষা পেলেন কয়েকশো নিরীহ মানুষ এবং স্বর্ণমন্দির। নিকেশ করা হল খলিস্তানি জঙ্গিদের।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted