রক্তে রাঙা পূর্ব পুরুষের অতীত।

রক্তে রাঙা পূর্ব পুরুষের অতীত :
-----------------------------------------
আজ ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ আর ১৯৫০ এই দিনের সময়কালেই, পূর্ব পাকিস্তানে আমার পূর্ব পুরুষদের উপরে নেমে এসেছিল ইসলামী জিঘাংসার খাঁড়া। আমার বাবারা তিন ভাই এবং তিন বোন। আসলে বাবার ঠিক পরেই বাবার এক ভাই ছিলেন, যিনি পূর্ববঙ্গ থেকে হেঁটে এবাংলায় আসার ধকল সহ্য করতে পারেননি | আসার ঠিক পরে পরেই,ম্যানেন্জাইটিস এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার খুব কাছের এবং প্রিয় মানুষ ছিলেন তিনি। আজও বাবার মধ্যে সেই মৃত্যুর দুঃখ মাঝে মাঝে ফুটে বেরোয়। নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে ঠাকুমা দাদু আর এই এতগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে যখন এপার বাংলায় এলো, দিন গুজরান প্রবল কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। দাদু তখন প্রায় অন্ধ, বেকার আর ঠাকুমা সেলাই করে সংসার চালাচ্ছেন। বাবাদের মুখে শুনেছি মুখে শুনেছি, বাবারা একবেলা ফ্যানভাত খেত আর অপর বেলায় খাওয়া জুটতো না। কিন্তু ঠাকুমা বাবাদের এই শিক্ষা দিয়েছিল যে পাশের বাড়ির লোক যেন না না জানতে পারে এই ঘটনা। আচ্ছা পাঠক নিজের জন্মভূমিতে নিজের ভিটে-মাটিতে থাকলে এই কষ্ট কি বাবাদের সহ্য করতে হত ? কিন্তু উপায় ছিল না যে, নিজের ভিটেমাটিতে থাকলে বলা যায় না হয়তো বেঘরে প্রাণটাই দিতে হতো ! সেই ঘটনাই তো আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আমার দুই জমজ পিসির একজন হলেন শিলু পিসি। ওনার এক বন্ধু প্রায়ই আসতেন আমাদের বাড়িতে ওনার সাথে, আমরা ওনাকে নির্মলা পিসি বলে চিনতাম। নির্মলা পিসির মুখ থেকে মুলাদীর ঘটনার অনেকটাই জেনেছিলাম এবং পরে নিজের পড়া তথ্যের সাথে তা মিলিয়ে দেখেছি। জানি পাঠক এই জঘন্য নৃশংস ইতিহাস অনেক কষ্ট করে আপনারা পড়ছেন এবং জানছেন। চলুন আপনাদের সামনে আরো একটু তুলে ধরি:

মুলাদী থানার কুলাঙ্গার মৌলবাদী, বাঙালি মুসলমান দারোগা খানার অন্দরে, বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের শাঁখা সিঁদুর হীন করে দুর্বৃত্তদের দিয়ে কলেমা পড়িয়ে প্রথমে মুসলমান বানিয়ে ছিল এবং পরে তাদেরকে দুর্বৃত্তদের মধ্যে বন্টন করে দিয়েছিল। ২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫০, মানব ইতিহাসের আরও একটা কালো দিন। সমবেত নারী-পুরুষদের মুলাদীর দারোগা বললো বন্দরে রিলিফ ক্যাম্প খোলা হয়েছে, তোমরা সেখানে চলে যাও। ভীত মানুষজন সরল বিশ্বাসে সেখানে গেল। এরা যাওয়ার আগে দারোগা এদের টাকা-পয়সা ও গয়নাগুলো রেখে দিল। বন্দরে তিনটে গুদাম। মাধবলাল কুন্ডু ও সুখময় কুন্ডুর গুদামে শত শত নর-নারীকে ভাগাভাগি করে বসিয়ে রাখা হলো। পাহারায় রইল মাত্র দুজন চৌকিদার। দারোগা কলকাঠি নাড়লো। তার নির্দেশে বেলা বারোটা নাগাদ তিন হাজার সশস্ত্র মুসলমান গুদাম আক্রমণ করলো। হিন্দু পুরুষদের আলাদা করে চলল নির্বিচারে কোপানো। কারোর কাকুতি-মিনতি শোনা হলোনা। প্রায় ৭০০ পুরুষ, কেউ কেউ বলে বেশি, কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হলো ! এরপরে মুক্তেশ্বর সাহার টিনের চালের ঘরে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে নামাজ কলেমা পড়ানো হল। প্রায় ৫০ জন মহিলাকে দুর্বৃত্তদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়া হলো। তিনটে গুদামঘর তখন রক্তে ভাসছে ! তিন নম্বর গুদামটার নাম ছিল পাঁচ তহবিলের গুদাম। প্রাণবল্লব ঘোষ সেখানে স্ত্রী আর ভাইয়ের বউ এর মাঝে লুকিয়ে ছিল। মুসলমান দুর্বৃত্তরা তাকে টেনে হিঁচড়ে বার করে মহিলাদের সামনেই জবাই করল। একে একে কাটলো গঙ্গাচরণ সরকার, নিত্যানন্দ পাল, মাখনলাল, সুখময়,রাধেশ্যাম, বিপিন, আর নগেন কুণ্ডুকে ! Regional controller of procurement সিরাজুল হক ভাগ্যক্রমে, সেদিন বিকেলে লঞ্চ আর সশস্ত্র পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় এবং মুসলমান দাঙ্গাকারীরা তার ফলে পালায়।

এ হলো সেই বাঙালী মুসলমানের কথা, যাদের বখতিয়ার খিলজিকে নিয়ে গর্বে ছাতি ফুলে ৭২ ইঞ্চি হয়ে যায়..............

https://en.wikipedia.org/wiki/Muladi_massacre

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted