বিনি পয়সায় বয়স কমান
যূথিকা আচার্য্য
আচ্ছা সবার আগে একটা কথা একদম ক্লিয়ার কাট বলে দিই। বয়স কম করা যায় না কারণ বয়স মানে তো আয়ু, তা আয়ু কম হোক এমনটা চাইবেনই বা কেন! তাছাড়া বয়স বাড়া তো খারাপ কিছু নয়। ওটাকে বৃদ্ধি হিসেবেই দেখুন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অভিজ্ঞতা, বোঝার ক্ষমতা, ধৈর্য্য এবং সমবেদনা সবকিছুই বাড়ে। তাই বয়স জিনিসটাকে খারাপ বলে ভাববেন না। মানুষের জীবনে যোগ হতে থাকা প্রতিটি নতুন বছর কিন্তু দীর্ঘায়ু হওয়ার আশীর্বাদ বয়ে আনে। তাই বলছি, বয়স ব্যাপারটাকে দুরছাই না করে তাকে শ্রদ্ধা করতে শিখুন।
তবে হ্যাঁ, বয়স বৃদ্ধির নেগেটিভ এফেক্টগুলোকে কিন্তু কম করে দেওয়া যায়। আজকে তেমনই পাঁচটা উপায় নিয়ে আলোচনা করবো। মেনে চললে, একসপ্তাহের মধ্যে কমপ্লিমেন্ট গ্যারান্টেড।
এক নম্বর- পৃথিবীর সবচাইতে সস্তা, সুন্দর আর অর্গ্যানিক মেকআপ উপকরণটির নাম কী বলুন তো? এমন কী রয়েছে যা ধর্ম-বর্ণ-বয়স-জাতি নির্বিশেষে যে কোনো মানুষ, যে কোনো অবস্থায় ইচ্ছে করলেই মুখে লাগিয়ে নিতে পারে? ঠিক বলেছেন, হাসি।
প্রেম চোপড়ার মতো গোঁফের ফাঁকে লম্পটের হাসি নয়, ভ্যাম্পের মতো সরু চোখে মিচকে হাসি তো একদমই নয়। প্রাণ খুলে হাসতে শিখুন। হাসি মুখে থাকাটাই অভ্যেস করে নিন বরং। এ ব্যাপারে বলে রাখি মনস্ত্বত্ত্বের গবেষণা ক্ষেত্রে একটা ভারী মজার জিনিস জানা গিয়েছে। সেটা হল ব্রেন-কে বোকা বানিয়ে “আল ইজ ওয়েল” বুঝিয়ে রাখা কিন্তু সত্যিই সম্ভব।
একটু বুঝিয়ে বলি। নর্মালি আমরা খুশি হলে হাসি, তাই তো? অর্থাৎ হাসিটা হল ভেতরের খুশির বহিঃপ্রকাশ। এই ব্যাপারটা উল্টো ভাবেও হয়। মানে কারণ থাকুক বা না থাকুক, হাসিমুখে থাকার অভ্যেস তৈরী করে নিলে দেখবেন দিনকতকের মধ্যে মগজ বাবাজীও খুশি মনে থাকাটাই ন্যাচারাল স্টেট অফ মাইন্ড হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। তাই জোর করে হলেও হাসুন। দোস্তকা দিলখুশ এবং দুশমন কো নাস্তানাবুদ করার জন্যও হাসির মতো অন্য কোনো দাওয়াই নেই। হাসি-খুশি মানুষের বয়স এমনিতেই কম দেখায়।
দুই নম্বর- যথেষ্ট পরিমাণে জল খান। এজিং-এর সমস্যাগুলির সঙ্গে লড়াই করতে জলের বিকল্প কিচ্ছু নেই। শরীর হাইড্রেটেড হয়ে থাকলে বয়সের ছাপ অনেক দেরীতে পড়ে। প্রত্যেকবার রান্নাঘরে গিয়ে গেলাসে জল গড়িয়ে খাওয়ার হ্যাপা অনেক। তাই হাতের কাছে নিজস্ব জলের বোতল সবসময় রাখুন। অমনি অমনি জল খেতে ইচ্ছে না করলে তাতে একটু গ্লুকনডি বা অ্যাপেল জুস টাইপের কিছু মিশিয়ে দিন। এতে ওয়াটার ইনটেক বাড়তে বাধ্য। কতখানি জল খাওয়া উচিত এই প্রশ্নের উত্তরে বলবো, প্রতি কুড়ি কেজি ওজনের জন্য গড়পড়তা একলিটার জল বরাদ্দ করুন। অর্থাৎ আপনার ওজন ষাট কেজি হলে দিনে তিন লিটার জল খাওয়া উচিত। এই পরিমাণটা স্থান-কাল-জলবায়ু অনুযায়ী বাড়বে অথবা কমবে। যেমন গরমের সময় বেশী জল খান আবার ঠান্ডার সময় একটু কম খেলেও চলবে। চাই কী কাঁচের জগে লেবু-পুদিনা পাতা-শসা ভিজিয়ে ইনফিউজ্ড ওয়াটারও তৈরী করে রাখতে পারেন। খেতেও বেশ এবং দেখতেও লাগে দিব্যি।
তিন নম্বর- লুক অ্যাট দ্য ব্রাইট সাইড! প্রত্যেকটি মানুষ এবং প্রত্যেকটি সিচুয়েশনের মধ্যে ভালোটুকু দেখার অভ্যাস তৈরী করুন। পরমহংসের নিয়ম মেনে চলুন। দুধে-জলে মিশিয়ে দিলে দুধটুকু নিন এবং জলটুকু ত্যাগ করুন। নিয়ম করে কমপ্লিমেন্ট দিন আশেপাশের চেনা মানুষগুলিকে। এ ব্যাপারে টপিকের অভাব কোনোদিনও হবে না। দারুণ সুন্দর দেখতে, দারুণ রান্না, দারুণ নাচো, দারুণ গাও, দারুণ লেখো যা ইচ্ছে তাই বলুন। কমপ্লিমেন্ট দেওয়াটা যেন আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়। এতে আপনার আশেপাশের মানুষগুলির কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ দুই-ই পরোক্ষে আপনার কাছেই ফিরে আসবে। এবং অতি অবশ্যই সমালোচনা করতে হলে তা করুন সবার চোখের আড়ালে এবং প্রশংসা করুন সবার সামনে।
চার নম্বর- কাট দ্য ক্র্যাপ! নিজের চারপাশে ঘোরাফেরা করা মানুষগুলির মেন্টাল কোয়ালিটি সম্পর্কে সচেতন হন। বদরাগী, পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খায়, ঝগরুটে, মিথ্যে কথা বলে সম্পর্ক নষ্ট করে এমন স্বভাবের মানুষের সঙ্গ পরিত্যাগ করুন। সবাইকে খুশী রাখা সম্ভব নয় এবং সেটা করতে গিয়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের বারোটা বাজালে দোষ অন্য কারোর নয়, আপনার নিজের। নব্বই শতাংশ স্ট্রেসের জন্য দায়ী জীবনে এমন মানুষদের উপস্থিতি। অবিলম্বে বিদেয় করুন এদের।
মনে রাখবেন জীবনে যে কোনো বস্তুতে সাফল্য পাওয়ার দ্রুততম রাস্তা হল নিজের চারপাশে সফল মানুষদের কোহ্যাবিটেশন তৈরী করা। এর কারণ হিসেবে বলি যে কোনো বিষয়েই প্রকৃত অর্থে সফল হতে পারাটা কিন্তু হঠাৎ করে জেতা লোটোর লটারী নয়। সাফল্য একটা অভ্যাস। তাই সেই অভ্যাসে অভ্যস্ত মানুষদের দেখে শিখুন। সাকসেসফুল হওয়াটা একবার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলে দেখবেন এজ ইজ্ জাস্ট এ নাম্বার!
পাঁচ নম্বর- কী খাচ্ছেন সে ব্যাপারে মনোযোগ দিন। ইউ আর হোয়াট ইউ ইট! বাড়িতে তৈরী খাবারের বিকল্প নেই। মহার্ঘ্য পিৎজা-পাস্তা খাওয়ার চাইতে বাড়িতে তৈরী খিচুড়ি খাওয়া অনেক বেশী স্বাস্থ্যকর। স্ন্যাক্স বলতেই তেলেভাজা আর নুডলস্, এমন অভ্যাস ছাড়ুন। ফল-সবজি-পাঁচমেশালী স্যুপ বেশী করে খান। প্রথম প্রথম খারাপ লাগবে। কিন্তু কথা দিচ্ছি শরীরে অবাঞ্ছিত মেদ বা ত্বকের উপর বলিরেখা আপনার ধারেকাছেও ঘেষতে সাহস পাবে না। তেল, চিনি এবং লবণ যতখানি সম্ভব কম খান। কোল্ড ড্রিঙ্কসকে টাটা বলে লেবুর শরবৎ, আমপোড়া শরবৎ, ঘোলের শরবৎ খাওয়া অভ্যেস করুন। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস্ ভেতরে ঢুকলে ফ্রী-রেডিকলস্ এমনিতেই বাপ বাপ বলে পালাবে। সেজন্য মহার্ঘ্য সাপ্লিমেন্টের কোনো দরকার নেই।
সবার শেষে বলি নিজেকে সময় দিন। লোক দেখানো কাজে সময় নষ্ট না করে যা আপনাকে প্রকৃত অর্থেই সুখী করে সেসবে মনোনিবেশ করুন। ইচ্ছে হলে মা-দিদিমার সঙ্গে দাওয়ায় পা ছড়িয়ে বসে চিঁড়ে ভাজা খান। বাড়ির ছাদে গিয়ে ঘুড়ি ওড়ান। ঘরের এককোনে তুলে রাখা গীটারটি বের করে পিড়িং পিড়িং বাজান। অবনঠাকুরের ক্ষীরের পুতুল পড়ুন আবার। বুড়ো হতে গেলে বয়সের দরকার নেই। মানুষ শরীরে বড়ো হয় আর বুড়ো হয় মনে। তাই বলছি বুড়ো নয়, বড়ো হন।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................