জওহরলাল নেহেরুর রাজনৈতিক জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ political adversary দুজন - সুভাষচন্দ্র ও শ্যামাপ্রসাদ। তাই তাঁদের রাজ্য থেকে ভবিষ্যতে আর কোন রাজনৈতিক মহারথীর আগমন না হয় সেই উদ্দেশ্যে - মাশুল সমীকরণ নীতি - ১৯৫৬ প্রয়োগ করা হয়। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদে সজ্জিত বঙ্গ তৎসহ পূর্ব ভারতে এই নীতির প্রণয়নের ফলে এক অসামান্য বিভীষিকা সৃষ্টি হয় এবং এমন এক যুগে যখন State বা রাষ্ট্র ছিল সর্ব বৃহৎ investor/বিনিয়োগকারী। ১৯৪৭ সালে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত পশ্চিমবঙ্গ এবং বোম্বাই প্রেসিডেন্সী (বর্তমানে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট সমেত) র GDP ছিল এক। ১৯৫৯ এও শিল্প উৎপাদনে (সর্বভারতীয় প্রেক্ষপটে) পশ্চিমবঙ্গের অবদান ছিল ২২% এবং রাজ্য প্রথম ছিল সর্বক্ষেত্রেই। তাই বাণী শোনা যেত - পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সর্বোৎকৃষ্ট, শিল্পন্নোত রাজ্য - তাই অন্যদেরও সুযোগ দিতে হবে। আজ? মহারাষ্ট্রের শুধু কোলাপুর জেলার GDP ই পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশী। 
১৯৬৩ সাল পর্যন্ত কলকাতা ছিল ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী, তখনও going concerns র ভিত্তিতে বোম্বাই শহরের থেকে যোজন দূরত্বে এগিয়ে ছিল কলকাতা - ক্লাইভ স্ট্রিট ছিল তার প্রাণস্বরূপ - যার শেয়ার মার্কেটে আজ শ্মশানের স্তব্ধতাই শুধু অনুভব করা যায়। কেন্দ্রের চক্রান্ত বলে কাঁদুনি গাওয়া, বিভিন্ন গণ আন্দোলন করে পুঁজি তাড়িয়ে (Flight of capital) সরকারে আসীন হওয়া বামপন্থীরা রাজ্যের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য সময় পেয়েছিলেন একাদিক্রমে ৩৪ বছর। ১৯৯১ সালে মুক্ত বাজার অর্থনীতির মাধ্যমে সেই কুখ্যাত, অতীব পক্ষপাতদুষ্ট লাইসেন্স রাজের সমাপ্ত হলেও তার কোন প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে দেখা যায় না। 
মহামহিম স্তালিনের প্রশংসক, তাঁর নামে উদ্বাহু হয়ে নৃত্যকারী বামপন্থীরা যাঁরা এখনো গদগদ কণ্ঠে জগদ্বিখ্যাত (না কুখ্যাত?) ডিক্টেটর স্তালিনের নেতৃত্বাধীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক প্রাবল্য সম্পর্কে দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলেন, “20 years solved the work of 20 generations”.....তাঁরা এক মুক্ত সময় পেলেন - ১৯৯১ - ২০১১ অর্থাৎ সেই ২০ বছর কিন্তু যা করলেন তার পরিমাণ হল এক বৃহত্তম শূন্য। অবশ্যই কেন্দ্রের চক্রান্ত ছিল - নতুবা দেশভাগ দ্বারা বিপর্যস্ত খণ্ডিত রাজ্য পাঞ্জাব যা অর্থসাহায্য পেয়েছিল প্রথম দুটি প্ল্যানিং কমিশনে তার কণাভাগও পশ্চিমবঙ্গ পেয়েছিল কিনা তা নিয়ে গবেষণার এখনো যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কলকাতাকে ডুবিয়ে বোম্বাইয়ের উত্থানে সচেষ্ট নেহেরু ও তৎকালীন কংগ্রেসী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার মূল শত্রু কে ছিল - নেহেরুর হাড় জ্বালানো সুভাষচন্দ্র, শ্যামাপ্রসাদের একনিষ্ঠ সমর্থক বাঙ্গালী হিন্দুরা কিনা (নিশ্চিতভাবেই তাই) - তা নিয়েও নতুন গবেষণার প্রয়োজন আছে। 
বামফ্রন্টের অপার ব্যর্থতা স্কন্ধে নিয়ে তৃণমূল সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতারও অনুসন্ধান করতে হবে। যে রাজ্যে প্রায় ৫৭, ০০০ কল-কারখানা বন্ধ আর তার বিশাল অব্যবহৃত জমি রয়েছে, যে রাজ্যে পুরুলিয়ার মতো এক বড় জেলায় অনুর্বর জমির এতো সমাহার রয়েছে সেখান থেকে কেন ১৫০০ একর জমির অভাবে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস তথা দ্য চ্যাটার্জী গোষ্ঠী  ২৮, ৭০০ কোটি টাকার লগ্নি পার্শ্ববর্তী রাজ্য ওড়িশায় করে - সেটি নিয়েও ভাবার প্রয়োজন আছে বাঙ্গালী হিন্দুর - কারণ তাদের মড়ার গায়ে এরকম খাঁড়ার ঘা আরও পড়বে।       
শ্যামাপ্রসাদের হত্যার পর বাঙ্গালীর জন্য বক্তব্য আর কেউ রাখলোনা পার্লামেন্টে। অন্যদিকে, বিস্ময় লাগে যখন পড়তে হয় ১৯৬৫ সালে সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি ক্বণ কিউ বলেছিলেন যে উনি সিঙ্গাপুরকে দ্বিতীয় কলকাতা করতে চান। 
দেশভাগের পরে বাঙ্গালী হিন্দুর স্বার্থে প্রস্তাবিত জনসংখ্যা বিনিময়ের প্রস্তাবকে কার্যত ছুঁড়ে ফেলা (যদিও কংগ্রেসের পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র, সাংসদ ডঃ মেঘনাদ সাহাও ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের এই বক্তব্যের সমর্থনে সজোরে বিবৃতি দিয়েছিলেন পার্লামেন্টে), পূর্ব পাকিস্তান - ১৯৫০ র হিন্দু গণহত্যার পরে দিল্লীতে আগত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব লিয়াকত আলী খানের সাথে হাস্যরসে মগ্ন, ১৯৫৬ র মাসুল সমীকরণ নীতির প্রণয়নের মাধ্যমে কার্যত বাঙ্গালী হিন্দুকে খুন করা নেহেরু আজও পূজিত হন পশ্চিমবঙ্গে -ধর্মনিরপেক্ষতার প্রাণস্বরূপ হিসেবে। 
বাঙ্গালী হিন্দু বুঝলে কিছু - কেন তুমি কাঙালী আজ? কেন তোমারই জন্য গঠন করা NRC র পক্ষে তোমার গলাই শোনা গেলোনা একবারও?  কাঙালীর কোন জাত হয়না - তার স্থান একমাত্র লঙ্গরখানার সামনে। জলদি দাঁড়াও লাইনে তোমার কোঁচড় নিয়ে; জলের মতো খিচুড়ি আর বনে-বাদাড়ের শাকসবজি দিয়ে তৈরী ঘ্যাঁট যদি ফুরিয়ে যায়? খাও আর জোরসে বলো - নেহেরু বাবা কি জয়।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................