'গণিব। আমার এক দুঃখ, এক সন্তাপ, এক ভরসা আছে। ১২০৩ সাল হইতে দিবস গণি। যে দিন বঙ্গে হিন্দুনাম লোপ পাইয়াছে, সেই দিন হইতে দিন গণি। যে দিন সপ্তদশ অশ্বারোহী বঙ্গজয় করিয়াছিল, সেই দিন হইতে দিন গণি। হায়! কত গণিব! দিন গণিতে গণিতে মাস হয়, মাস গণিতে গণিতে বৎসর হয়, বৎসর গণিতে গণিতে শতাব্দী হয়, শতাব্দী ফিরিয়া ফিরিয়া সাত বার গণি। কই, অনেক দিবসে মনের মানসে বিধি মিলাইল, কই? যাহা চাই, তাহা মিলাইল কই? মনুষ্যত্ব মিলিল কই? একজাতীয়ত্ব মিলিল কই? ঐক্য কই? বিদ্যা কই? গৌরব কই? শ্রীহর্ষ কই? ভট্টনারায়ণ কই? হলায়ুধ কই? লক্ষ্মণসেন কই? আর কি মিলিবে না? হায়! সবারই ঈপ্সিত মিলে, কমলাকান্তের মিলিবে না?" - ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। (বঙ্কিম শতবার্ষিকী সংস্করণ - শ্রী সজনীকান্ত দাস, শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়)...আনন্দমঠের সন্তান সম্প্রদায় এই লুপ্ত স্বাধীনতার পুনরুদ্ধারের সাধনাই করেছিল।
এই মহত্তম আদর্শ যা প্রকৃতপক্ষেই সংগ্রামী হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিচারধারা, তার উপরেই গঠিত হয়েছিল অবিভক্ত বঙ্গের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন। যা প্রকৃত অর্থে যবন-বিরোধী আন্দোলনই ছিল। তারই ভিত্তিতে গড়ে ওঠে অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর, আত্মোন্নতি, শ্রীসংঘ, মুক্তিসংঘ, শঙ্কর মঠ প্রভৃতি বিপ্লবী সংস্থাগুলি। কিন্তু আজকাল সেই ধারার এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ অনুসারী, আত্মোৎস্বর্গের মহা যজ্ঞের পুরোহিত শ্রী ক্ষুদিরাম বসু হয়ে যান Urban Left radicals দেয় উপাস্য। আদর্শের ভূলুণ্ঠিতা, বিপথগামিতার কথা শোনা যায় কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত বিচারাধারার ব্যক্তি ও তাঁর বোধ, পরাক্রমকে অপহরণ করার কথা শোনা যায় না বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসে। কিন্তু ক্রমশ উত্তপ্ত হতে থাকা পশ্চিমবঙ্গে আগামীতে এসব প্রায়ই শোনা যাবে।
এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ভয়ঙ্করতম নির্বাচন হল ১৯৬৯। কিন্তু ক্রমশ প্রতীয়মান হচ্ছে ২০২১ তাকেও অতিক্রম করে যাবে এক নব বৈশিষ্ট্যের জন্য - ধর্ম ও তার পরিচিতি। এক্ষেত্রে ভাষার বন্ধন ও তার প্রতিরোধ হাসকরভাবে দুর্বল। ভাষার ঐক্য কখনোই ধর্মের স্থান নিতে পারেনি, পারবেওনা,তা সম্ভবও নয় কোনকালে। ধর্মই শেষ কথা বলে ও বলবে - তা সে যেটিই হোক।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................