ইসলামী দ্বিজাতিতত্ত্ব : ইতিহাসের প্রতারণা (শেষ)
-----------------------------------------------------------------
১৯৫০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে হিন্দুদের উপর শুরু হওয়া গণআক্রমন চলতে থাকে পুরো মাস জুড়ে। মুসলমানদের এই লুটেরা মানসিকতা দেখে এবং এই জংলীদের সাথে বসবাস করা যাবে না, এটা বুঝতে পেরে, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য হিন্দুদের দেশত্যাগের স্রোত শুরু হয়। সেই সময় পূর্ববঙ্গে-গোয়ালন্দ, পার্বতীপুর ও খুলনা, এই তিনটি জায়গা থেকে কলকাতার ট্রেন পাওয়া যেতো। এজন্য- ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর জেলাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের লাখ লাখ হিন্দু, বাড়িঘর, জমিজমা সর্বস্ব ত্যাগ করে একবস্ত্রে দেশত্যাগের জন্য এসে জড়ো হতে শুরু করে গোয়ালন্দে। উত্তরের হিন্দুরা পার্বতীপুরে এবং যশোর ও খুলনাসহ পশ্চিম ও দক্ষিনের হিন্দুরা খুলনা স্টেশনে। সীমান্তের আশে পাশের জেলার হিন্দুরা বাসে করে সড়ক পথে বা পায়ে হেঁটেই ঢুকে পড়ে ভারতে। বরিশাল থেকে কলকাতা যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম ছিলো জলজাহাজ। তাই বরিশাল, পটুয়াখালি, ভোলা জেলার হিন্দুরা বরিশালে এত পরিমাণ এসে জড়ো হতে শুরু করে যে, জেটিতে স্থান পাওয়া দায়!
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দারা মূখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান চন্দ্র রায়কে খবর দেয় যে-বরিশাল, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ, গোয়ালন্দ, খুলনা প্রভৃতি রেলস্টেশন এবং স্টিমার ঘাটে লাখ লাখ হিন্দু একবস্ত্রে জড়ো হয়ে পশ্চিম বাংলায় আসার জন্য আর্তনাদ করছে। এই সংবাদ শোনার পর বিধান চন্দ্র রায়, দুই ব্রিটিশ স্টিমার কোম্পানি-আরএসএন ও আইজিএন-এর কোলকাতা ও লন্ডনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং ডা. রায়ের অনুরোধে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ মাস ধরে প্রতিদিন কয়েকটি বিশেষ স্টিমার চালায় বরিশাল স্টিমার ঘাট থেকে কলকাতার জগন্নাথ ঘাট পর্যন্ত। এভাবে সম্পূর্ণ খালি হাতে, এক কাপড়ে, বরিশাল থেকে প্রায় এক লাখ হিন্দু প্রায় ৩ দিনের সমুদ্র যাত্রা পেরিয়ে পৌঁছায় কলকাতা। উদ্ধাস্তু হিন্দুদের নিয়ে স্টিমারগুলি যখন কলকাতার জগন্নাথ ঘাটে "ম্যান অব ওয়্যার জেটি"তে নোঙর করতো, তখন কলকাতার অপেক্ষমান আত্মীয় স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পরত!!
শুধু এখানেই শেষ নয়!! রেল স্টেশন এবং স্টিমার ঘাট থেকে উদ্বাস্তু হিন্দুদের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার তো একটা ব্যবস্থা হলো, কিন্তু ঢাকার হিন্দুদের এরকম কোনো ব্যবস্থা তখনও হয় নি। অন্যদিকে মুসলমানরা ঢাকায় মেরে চলেছে একের পর এক হিন্দু! হিন্দুরা প্রাণ ভয়ে জড়ো হতে শুরু করে এয়ারপোর্টে, যদি কোনো ভাবে বিমান যোগে কলকাতা পৌঁছানো যায়, এই আশায়। বিধান রায়ের কানে এই সংবাদ গোয়েন্দারা দিতেই তিনি এর একটা সমাধান বার করলেন। ডা. বিধান ছিলেন, এয়ার ওয়েজ ইন্ডিয়া লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কেন্দ্র থেকে লম্পট নেহেরু কী নির্দেশ দেবে, সেই আশায় বসে না থেকে ঐ বিমান কোম্পানির কর্মকর্তাদের রায় টেলিফোন করে বলেন, "যতখানি সম্ভব প্লেন ঢাকায় পাঠাও, আর যাদের আনবে, তাদের কাছ থেকে কোনো ভাড়া চাইবে না।" ডা. রায় এর নির্দেশ মতো ১৬ টি প্লেন ঢাকার অসহায় হিন্দুদের উদ্ধার করে পৌঁছায় কলকাতায়। এর একটি বিমানেই ১৯৫০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অসহায় ও নিস্ব অবস্থায় এক বস্ত্রে কোলকাতা চলে আসতে বাধ্য হন, রবীন্দ্রনাথ দত্ত; যার লেখার মাধ্যমেই আমরা জানতে পারি ১৯৪৬ ও ১৯৫০ সালের হিন্দু নির্যাতনের অনেক ঘটনা।
যা হোক, নিজের পকেট থেকে ডা. রায়, উদ্বাস্তু হিন্দুদের কলকাতার পৌঁছানোর প্লেন, স্টিমার ভাড়া দিয়েছিলেন। সেই সময় বরিশাল থেকে কয়েকটি জাহাজ, কিছু হিন্দুকে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে রেখে আসে। সেই থেকে তারা সেখানেই নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। নেহেরুর কৌশলে এটা ঘটে থাকতে পারে। কেননা, উদ্বাস্তু হিন্দুদের জন্য যে লোকের এত দরদ, নিজের পকেটের টাকা খরচ করে যে লোক অসহায় হিন্দুদেরকে উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলো, সেই লোক কিছু হিন্দুকে আন্দামানে নির্বাসনে পাঠাতে পারে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়!!
সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা হয়েছে এই ইতিহাস.........
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................