তুই মানুষ নাকি মুসলমান?
গোটা অনলাইন ঘুরে আমি যা দেখলাম, ইতালির এই লাশের সারিকে দুই হাত তুলে স্বাগত জানাচ্ছে আরবী নামের ফেইসবুকবাসীরা! তারা বলছে ইতালির সবাই যেন মরে! এই মৃত্যু যেন মিয়ানমার, ভারত, ইতালি, আমেরিকা সবখানে ছড়িয়ে পড়ে! এই অশুভ কামনা যারা করছে তারা সকলেই মুসলমান। এরা বাংলাদেশী মুসলমান। কেউ বাংলাদেশে বসে কেউ প্রবাসে বসে এমন কামনা জানাচ্ছে ফেইসবুকে। আমাকে অতশত না বুঝিয়ে শুধু এটুকু বুঝান- অন্য ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষকে আমি কেন এটা করতে দেখছি না? কেন ইতালির প্রতিদিনের মৃত্যু এদের মনকে বিমর্ষ করার বদলে আনন্দিত করে তুলছে?
কেন ইতালিতে এত ভয়াবহ করোনা ভাইরাসের আক্রমন সেটা ইসলামিক জঙ্গি চেতনার মানুষজন বের করে ফেলেছে! ইতালির একটি গির্জাতে একজন চিত্রকরের আঁকা নরকের বিভিষিকায় দেখানো হয়েছে ইসলামের নবী মুহাম্মদকেও সেখানে আগুনে পোড়ানো হচ্ছে। আমি জানি না ইতালির গির্জাতে থাকা সেই চিত্রে সত্যিই মুহাম্মদকে বুঝানো হয়েছে কিনা। কারণ কাউকে শিশুকামী বললেই মুসলমানরা ভেবে বসে তাদের নবীকে নাকি ইঙ্গিত করা হচ্ছে! ইতালির গির্জাগুলোতে যে পেন্টিং আঁকা রয়েছে তার বিশ্বের শিল্পের এক দৃষ্টিনন্দন জাদুঘর বলা যায়। বিশ্বখ্যাত সব শিল্পীদের আঁকা সেখানে রয়েছে। কবি দান্তের ডিভাইন কমেডি মহাকাব্যে নরকের বর্ণনা আছে। সেখানেও মুহাম্মদ ও তার ভাতিজা আলীকে শাস্তি দেয়ার কথা আছে। সেই কাব্যকে অনুকরণ করে কেউ ছবি একেঁছিলো কিনা জানি না। কিন্তু তার জন্য যদি ইতালির সাধারণ নারী শিশুসহ নিরপরাধী মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতে সরাসরি যেসব হুজুর শিশু বলৎকারের সঙ্গে জড়িত তাদের তো মাথায় ছাদ ধসে পড়ে মারা যাবার কথা! যদি ইতালির গির্জাতে মুহাম্মদের চিত্র আঁকা থাকে তার জন্য ইতালিতে মহামারী ঘটে থাকে তাহলে কুরআনে ইহুদী খ্রিস্টানদের কুকুর শুকর গাধা জাহান্নামী বলে, হিন্দু বৌদ্ধদের (মুশরিক) শয়তানের পুজারী বলে, এদের সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ত্যাগ করতে বলে, যুদ্ধে এদের পরাজিত করে এদের নারীদের যৌনদাসী করতে বলে, এদের শিশুদের দাস করার আদেশ দিয়ে যে জঘন্য অপরাধের জন্ম দেয়া হয়েছে তার জন্য তো একটি মুসলমানও পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কথা নয়। যদি সত্যিই আকাশে কোন ন্যায় বিচারক ঈশ্বর থাকতেন তিনি যদি গির্জাতে একটি চিত্রকর্ম থাকায় ইতালিতে এত মৃত্যু দেন, চীনে এত মৃত্যু দেন তিনি তো তাহলে ন্যায় বিচার করলেন না। তিনি ন্যায়বিচার করলে এই মুহূর্তে হাটহাজারী মাদ্রাসায় বলৎকারকারী হুজুরদের মাথায় ছাদ ধসিয়ে দিক। কুরআনের গণিমতের মাল, কতল, অমুসলিম কটুক্তি- এগুলো যে স্থানে রোজ চর্চা হয় সেই মাদ্রাসায় তো মড়ক লেগে যাবার কথা! ইসলাম জিহাদের নামে সারা বিশ্বে যত রক্ত ঝরিয়েছে তার জন্য তো সব মুসলিমকেই সাজা পেতে হয় এই যুক্তিতে!
অন্যের মৃত্যুতে যারা আনন্দিত হয় তাদের অন্তত আমি মানুষের কাতারে রাখি না। শত্রুর ঘোর বিপদের দিনে যারা উল্লাসিত হয় তারা আর যাই হোক মনুষ্যত্বের অধিকারী নয়।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................