মানুষকে বিকল্প গ্রহ খুঁজে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

প্রতিরক্ষা বাজেট হচ্ছে সেই জিনিস যা কথিত শত্রু দেশের আক্রমন থেকে নিজেদের বাঁচাতে ও অন্যদের ভয় পাইয়ে দিতে দেশের অর্ধেকের বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয় সেনাবাহিনীতে। করোনা ভাইরাস পরবর্তী বিশ্ব বদলাবে কিনা সেটা নির্ভর করছে করোনায় নি:স্ব হওয়া সাধারণ মানুষ রাষ্ট্রগুলোকে চাপ দিবে কিনা। তাদের বাজেটের একটা বড় অংশ হওয়া উচিত চিকিৎসা বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিভাগের উন্নতিতে ব্যয় করা। তারপর মহাকাশ বিজ্ঞানের পিছনে ব্যয় করাটা হবে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাত। পৃথিবী ছেড়ে মানবসভ্যতা উপনিবেশ খুজে নিতে হবে গ্রহান্তরে। স্টেফেন হকিং বলে গিয়েছেন, মানুষকে বিকল্প গ্রহ খুঁজে নেয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।

করোনা ভাইরাস পরবর্তী পৃথিবী বর্ডার গুরুত্ব না হারালে ধরে নিতে হবে আমাদের কোন শিক্ষাই হয়নি। আমরা দেখেছি করোনা বর্ডারের কোন তোয়াক্কা করেনি। সমাজবিজ্ঞানীদের চিন্তা করার সময় এসেছে মানুষকে পেশাগতভাবে যাযাবর করা যায় কিনা। আমরা জানি মহামারী তখনই মানব সমাজে বাসা বেধেছে যখন থেকে মানুষ থিতু হয়ে বসা অভ্যেস করেছে। আপাতত যাযাবর হওয়া সম্ভব নয় বলেই আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাড়াতে হবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের দোহাই দিয়ে গড়ে উঠা পরিবেশ নষ্টকারী জীব জগত ধ্বংস করছে এমন শিল্প বন্ধ করে দিতে হবে। এই লকডাউন মানুষকে শিখিয়েছে মানুষের প্রয়োজন আসলে কত সীমিত। অথচ পুঁজিবাদ আমাদের কৃত্রিম চাহিদাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে তুলে ধরেছিলো যে আমাদের মনে হয়েছিলো এগুলো আমাদের মৌলিক চাহিদা যা ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন সম্ভব নয়।

ইতিহাসের ছোট একটা কথা মনে করিয়ে দিয়ে লেখাটা শেষ করি। মানুষ নিজে সারা পৃথিবীতে জীবজগতের যত সদস্যদের জাদুঘরে পাঠিয়েছে তারচেয়ে খুব কম সংখ্যাক মানুষকে অনুজীব কলেরা বসন্ত করোনা খরচের খাতায় পাঠিয়েছে। পঙ্গপালের কথা উঠে আসছে ইদানিং। এরা ফসলের ক্ষেত খেয়ে শেষ করে ফেলছে। আর আমরা পারলে এদের বংশ বিনাশ করে পৃথিবী থেকে এদের বিদায় করে দিতে চাই। প্রকৃতি সঙ্গে এই বিবাদ মানুষের নিজস্ব। নোয়া হারারি তার সেপিয়েন্স বইতে দেখিয়েছেন কি করে মানব সমাজ গম চাষ করে নিজেদের সর্বনাশ করেছে। কি করে কৃষি সমাজ রোগ মহামারীকে ডেকে এনেছে একই স্থানে অনেক মানুষ বাস করে। কেমন করে অনাহার আর দুর্বিক্ষে না খেয়ে মরেছে কেবল ফসল ফলাতে গিয়ে। এই কৃষকই পরে হয়েছে মহাজন। মহাজনই পরে হয়েছে ধর্মাবতার। সেখান থেকেই ধর্মালয়। কৃষি বিপ্লবের পর থেকে সেপিয়েন্স সমাজ এভাবেই আজ পর্যন্ত চলে আসছে এই করোনা পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ এই করোনার জন্ম আমরাই দিয়েছি আমাদের সভ্যতার বিন্যাসের কারণে। করোনা পরবর্তী আমাদের সারা বিশ্বের চিন্তার পরিবর্তন তাই ইমার্জেন্সি। আমাদের রাষ্ট্রগুলোর ভাবতে হবে অপ্রয়োজনীয় খাতগুলোতে (যেমন ধর্ম) অর্থ ঢালব কিনা। দ্বিতীয়ত পৃথিবীর ধনকুবেরগুলোর কোন প্রয়োজন আছে কিনা? মুকেশ আম্বানী ভারতের এই দুর্যোগে কতখানি কাজে লেগেছে? আমাদের বেক্মিমকো, স্বয়ার, প্রাণ, বসুন্ধরা গ্রুপগুলো কি করছে? জনগণের ঘাম ঝরানো টেক্সের ১৫ হাজার কোটি রুপিই নরেন্দ্র মোদী করোনা মোকাবিলায় বরাদ্দ করেছে। সারা বিশ্বেই তাই। আমাদের প্রশ্ন করা উচিত মিগ যুদ্ধজাহাজ কিংবা সাবমেরিন এখন কি কাজে লাগছে? পিপিই নাই কিন্তু আমাদের সাবমেমিন আছে! আমাদের যুদ্ধজাহাজ আছে কিন্তু ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার পোশাক নাই! এরপর প্রধানমন্ত্রীরা যুদ্ধ সরঞ্জাম কিনে জনগণকে ধোঁকা দিতে যাবার সময় নিশ্চিয় করোনা পরিস্থিতি কথা মনে করে লজ্জ্বা পাবেন?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted