"হিন্দুদের দোষ কি"????
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
হিন্দুদের একটিই মাত্র দোষ, সেটা হলো, তারা আজো প্রকৃত হিন্দু হয়ে ঊঠলো না।
একজন হিন্দুর প্রথম জানা দরকার তার কি ধর্ম। একজন হিন্দু যখন তার নিজের ধর্ম কি তা জানে তখন সে আর লোভী, রাগী, কামী, ভন্ড, কাপুরুষ থাকে না। সে তখন সমাজ বদ্ধ হয়, দেশ প্রেমিক হয়। যে অপশক্তি তার সমাজ এবং দেশকে ধংস করতে উদ্যত হয় তখন সে সঙ্ঘ বদ্ধ ভাবে তার মোকাবিলা করতে এগিয়ে আসে। মোকাবিলা করার পদ্ধতি সে নিজেই জেনে যায় বুঝে যায়।
হিন্দুরা আজ নিজেই জানেনা তার প্রকৃত বিপদ কি, কারন সে অধার্মিক,মোহগ্রস্থ।
মানুষ যখন গুহা ছেড়ে বহির্জগতে প্রবেশ করলো, তখন দেখলো তাদের চারিদিকে আরো অনেকে আছে, যারা তাদের ই মতো দেখতে এবং তারাও নিজ নিজ এলাকায় পশু শিকার করে খায়। পশু শিকার থেকে আরো এগিয়ে যখন চাষবাস করতে শুরু করলো তখন দেখলো তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু জমি জমা বাড়ছে না। আরো পরে দেখলো, তাদের নিজেদের বানানো শষ্য অন্যরা চুরি করে বা জোর করে নিয়ে যায়। এমনকি পরিবারের মহিলাদের ও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেই থেকে চুরি, ডাকাতি, লুট, রাহাজানি সব রকমের কাজ কর্ম শুরু হলো। ‘জোর যার মুলুক তার’—মানুষ বেশ ভালো করে এই ব্যাপারটা বুঝে গেলো শিখে গেলো। শুরু হলো এক নতুন শিক্ষা—‘যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা’।
অন্যের সঙ্গে যুদ্ধ করো যদি নিজে টিকে থাকতে চাও। ‘বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা’ এই কথাটি ক্রমে মানুষের ‘বুদ্ধির ভান্ডারে’ ঢুকে গেলো। মানুষের ইতিহাস তাই শুধু ‘অপরের দেশ দখল’ করার ইতিহাস। এক গোষ্টি অন্য গোষ্টির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেচে থাকতে হবে, নইলে তোমার নিজের গোষ্টি, পরিবার সব শেষ হয়ে যাবে। ছোট বড়ো যতো যুদ্ধ এতোদিন এই পৃথিবীতে হয়েছে তার মুল কথাই হচ্ছে নিজে টিকে থাকার যুদ্ধ, আর তার জন্য অন্যের সংগে প্রতিযোগিতা, অর্থ সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা, জন সম্পদের (দাস দাসী) জন্য প্রতিযোগিতা।
সেটাই ইতিহাস দেখে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। এই প্রতিযোগিতার মুল মন্ত্র নিজের দল বৃদ্ধি করো। কখনো সেই দল একটি মত আদর্শ বলে প্রচার করা হয়। কখনো প্রচার করা হয় ‘এক অদৃশ্য অশরীরির বলে যাওয়া কথার নামে’। এই অশরীরি দুত শুধু বলে ‘কি করে তোমার দল বাড়বে”। কখনো বলে না ‘এই পৃথিবীর সমস্ত মানব কুল’ কি করে সুখে শান্তিতে, দুটো খেয়ে পরে কিছুকাল এই পৃথিবীতে কাটিয়ে একদিন দেহ ত্যাগ করবে। সেই ‘অমানবিক মতাদর্শের’ দলবলেরা আজ এই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষের রক্তে পৃথিবীর মাটি ভিজিয়ে দেওয়া যাদের এক ‘নারকীয় খেলা’, তারা দ্রুত, অতি দ্রুত এগিয়ে আসছে ‘খল খল অট্টহাসি হেসে’।
কিন্তু প্রায় ১০০০০-১২০০০ হাজার বছর আগে থেকে, উত্তরে উত্তুঙ্গ হিমালয়, দক্ষিনে বিশাল মহাসাগর, উত্তর পশ্চিমে হিমালয়ের পামীর গ্রন্থির হিন্দুকুশ, পুর্বে হিমালয়ের আরাকান পর্বত মালা দিয়ে ঘেরা, সিন্ধু, সরস্বতী, গঙ্গা, যমুনা, নর্মদা, কাবেরী নদীর বিধৌত সুবিস্তৃত সমতল এবং অরন্য অঞ্চল জুড়ে গড়ে উঠেছিলো এক ‘মানবিক সভ্যতা’। তারা তাদের দেশকে দিয়েছিলেন এক বানী, মানুষকে বলেছিলেন “শৃন্ব্যন্তু বিশ্বে অমৃতষ্য পুত্রা”।
যারা মানুষকে ‘অমৃতের পুত্র’ বলে আখ্যায়িত করেছেন, তারা আজ ‘হিন্দু’ নাম ধরে নিজেদের পরিচয় দেয়। তাদের আজ কি অবস্থা?????
হিন্দুরা আজ কিংকর্তব্যবিমুঢ় -গীতার ভাষায় "ধর্ম সংমুঢ়চেতা", তার মনে শুধুই মোহ- গীতার ভাষায় সে "কশ্মলমিদং' এ পরিপুর্ন।
হিন্দুর (অমৃতের সন্তানদের) রোগ হলো তারা আজ 'মহাভয়ে ভীত' সন্ত্রস্থ- গীতার ভাষায় সে 'মহাতো ভয়াৎ" নামে এক রোগে আক্রান্ত। গায়ে মনে ময়লা (কশ্মল মিদং) নিয়ে গর্তে ঢুকে গেছে। এর থেকে উদ্ধারের উপায় কি?
এর থেকে উদ্ধার পেতে হলে স্বয়ং ঈশ্বরের আবির্ভাবের দরকার। আর যতদিন হিন্দুরা হিন্দু হয়ে না বলবে যে 'সাদ্ধি মাং প্রপন্নমে' ,অর্থ্যাৎ "আমি তোমার শ্মরনাগত, আমায় বলে দাও কি করতে হবে, তোমার চরনাতলে আমি প্রনাম জানাই, আমায় উদ্ধার করো" ততোদিন হিন্দুদের কিচ্ছু হবে না।
যতোদিন তারা ঈশ্বরের বলা পথে নিজেকে 'অসুর' দের হাত থেকে বাচার কর্মে 'যুদ্ধ' করতে গান্ডীব ধারন না করবে, একত্রে এক সুরে বলবে, "আমরা আর অন্যায় সয্য করবো না"-- 'যুদ্ধ করবো আত্মরক্ষার্থে" ততোদিন 'হিন্দুদের উদ্ধার নেই"।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................