** হিন্দুধর্ম্মের স্রষ্টা কে?**
"হিন্দুধর্ম্ম সম্পর্কে অধিকাংশ হিন্দুরই অজ্ঞাতপ্রসূত কতকগুলি ধারণা আছে। তাই তাহারা হিন্দুধর্ম্মের স্রষ্টা কে, এই প্রশ্ন করিয়া বিহ্বল হয়।
লোকের প্রচলিত ধারণা এই যে ইহুদি ধর্ম্ম মোজেসের সৃষ্ট, খ্রীষ্টান ধর্ম্ম যীশুর প্রবর্ত্তিত এবং ইসলাম ধর্ম্ম মহম্মদের প্রদত্ত।
হিসাব করিলে দেখা যাইবে যে মোজেস, যীশু এবং মহম্মদ প্রভৃতি মহান ধর্ম্মপ্রবর্ত্তকেরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম্মমতের অঙ্কুর এবং অনেক সময়ে শাখা-প্রশাখা পর্য্যন্ত পূর্ব্ব-প্রচলিত ধর্ম্মমত সমূহ হইতে গ্রহণ করিয়ছিলেন।
এই দৃষ্টিতে দেখিতে হইলে ইঁহারা কেহই নূতন কোনও ধর্ম্মমতের প্রবর্ত্তক নহেন পরন্তু অনাদিকাল হইতে প্রচলিত সনাতন এক সত্যের উপলব্ধির ব্যাপারে অভিনব সংস্কার-সাধক মহাপুরুষ মাত্র।
কিন্তু আমরা একথা বলিতে গেলে ইহুদি, খ্রীষ্টান এবং মুসলমান বিরক্ত হইবেন, ক্রুদ্ধ হইবেন।
কিন্তু সে কথা আমরা বলিতে চাহি না। তাঁহারা যদি মনে করেন যে তাঁহাদের ধর্ম্ম একটি নির্দ্দিষ্ট মহাপুরুষের দ্বারা প্রবর্ত্তিত হইয়াছে এবং সেই জন্যই ইহা পূর্ব্ববর্ত্তী প্রচলিত ধর্ম্ম সমূহ হইতে শ্রেষ্ঠ, তাহা হইলে এই বিষয়ে আমার বা তোমার বলিবার কিছুই নাই।
কিন্তু হিন্দুধর্ম্ম সম্পর্কে একথা স্বীকার করিতে হইবে যে, হিন্দুধর্ম্ম কোন নির্দ্দিষ্ট মানুষের সৃষ্ট নহে।
ভগবানের নির্দ্দেশ সৃষ্টির আদি হইতে জীবের ভিতরে আপনা আপনি প্রকটিত হইয়াছে এবং হিন্দু বিভিন্ন আঁধারের প্রকটনকে ঈশ্বরের ধর্ম্ম বলিয়া সম্মান করিয়াছে।
জীবে জীবে বিধাতার অপার করুণা ঈশ্বর-দর্শন রুপে স্ফূর্ত্তি পাইয়াছে এবং সেই সকল ঈশ্বর-দর্শী পুরুষদের একের বা বহুজনের বিধান বা দার্শনিক চিন্তা মনু, ব্যাস, জৈমিনী, গৌতম, কণাদ, কপিল প্রভৃতি বিবৃত করিয়াছেন তাঁহারা প্রতিজনেই , হিন্দুধর্ম্মের প্রতিষ্ঠাতা স্বয়ং ভগবান। প্রত্যেক জীবের মধ্যে ভগবান তাঁহার পূর্ণস্বরূপে প্রকটিত হইবার সামর্থ্য রাখেন এবং এই সকল উত্তম আধারের মধ্য দিয়া ভগবান নিজের লীলাকে বিকশিত করিয়াছেন।
এই পরম সত্যকে হিন্দু স্বীকার করিয়াছে এবং জানিয়াছে। এইজন্যই ভগবানকে লক্ষ্য রাখিয়া যিনি যে ধর্ম্ম প্রবর্ত্তন করিয়াছেন, সে সকল ধর্ম্মের প্রতি হিন্দুধর্ম্ম পরম উদার এবং সহিষ্ণু।
হিন্দুধর্ম্মের অনুসরণকারীদের কেহ নিজেদের বৈষ্ণব বলিয়াছে, কেহ বলিয়াছে নিজেদের শাক্ত, কেহ গাণপত্য, কেহ ব্রাহ্ম।
কিন্তু সকলকে একটা সূত্রে গ্রথিত করিয়া রাখিবার ক্ষমতা আছে ঈশ্বরানুরাগের, —সেই ঈশ্বরানুরাগ, যাহা ঈশ্বরের ক্ষুদ্র-বৃহৎ সকল ভক্তকেই প্রাণের প্রাণ করিয়া দেয়।
তোমাদের ধর্ম্ম সেই ধর্ম্ম। জ্ঞান এবং কর্ম্মের সামঞ্জস্যময় ভিত্তির উপরে দণ্ডায়মান মধুর, কোমল, সর্ব্বসুষমামণ্ডিত, অপূর্ব্ব-শ্রীদীপ্ত, দিব্য-লাবণ্য-বিলসিত সর্ব্বালিঙ্গনকারী তোমাদের প্রেমধর্ম্ম।"
(অখণ্ডমণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রীস্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব)
(ধৃতং প্রেম্না, সপ্তম খণ্ড, পত্রাংশ নং :- ৬৬)
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................