ইসলামী দ্বিজাতিতত্ত্ব : ইতিহাসের প্রতারণা -৪
---------------------------------------------------
১৯৫০ এ পূর্ব-পাকিস্তানের কালশিরাতে ভয়াবহ হিন্দু নিধন হয় । আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে হাজারে হাজারে মুসলমান কয়েকডজন পুলিশের সহায়তায় কালশিরার উপর ঝাঁপিয়ে পরে । গ্রাম জুড়ে চলল জ্বালাও পোড়াও, লুটতরাজ, আর অবাধে নারী ধর্ষণ ! এই আক্রমন প্রতিহত করতে গিয়ে মারা গেল অসংখ্য হিন্দু । এরই মাঝে বিখ্যাত ইসলামী তাকিয়ার ছলে গুজব রটানো হলো যে কলকাতায় ফজলুল হককে হত্যা করা হয়েছে । এর জেরে পূর্ব-পাকিস্তানে হিন্দু নিধন আরো জোরদার হলো ! হাজারে হাজারে উদ্বাস্তু শিয়ালদাহ স্টেশনে প্রতিদিন উপচে পরতে লাগলো । বর্ধিষ্ণু, মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্ত, কোনো হিন্দু বাদ নেই ! হিংসার ব্যাপকতার কথা এদের মুখে শুনে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পরলো । ট্রেন আসছে, আর ট্রেন ভর্তি জবাই করা লাশ প্রচুর পরিমানে আসছে ! লাশগুলো অপেক্ষমান সত্কার সমিতির গাড়িতে তুলে দেওয়া হচ্ছে । কি ভয়ানক নির্মম দিনরাত্রি, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় । শিয়ালদাহ স্টেশনে গড়ে উঠলো অনেকগুলো ট্রানসিট ক্যাম্প । পূর্ব-পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু মুসলমানের দৃষ্টিতে যেন প্রতি হিন্দুর জন্য মূর্তিপুজারী, বধযোগ্য ঘৃনা !
এই দাঙ্গা যখন পূর্ব-পাকিস্তানে চলছে, সেই সময় ছিল নেহেরু-লিয়াকতের চুক্তির সময়কাল । যোগেন মন্ডল করাচি থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কলকাতায় ট্রানজিটের সময়টা কাটাচ্ছেন । কলকাতায় বসেই মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিলেন । এদিকে নিধন যজ্ঞ থিতিয়ে এলেও, শরণার্থীর ঢল থামল না । পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বিধান রায় বললেন:'মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমার যা করার করব এবং দিল্লীকেও বলব ।' অপরদিকে বিরোধী নেতা পূর্ব-পাকিস্তান থেকে খেঁদা খাওয়া জ্যোতি বসু ওরফে জুতো বোস বললেন:'আমাদের হাতে তো ক্ষমতা নেই, যা করার বিধান রায়ের সরকারকেই করতে হবে !' এরই মধ্যে নেতা হেমন্ত বসুর লোকজনেরা একদিন পূর্ব-পাকিস্তানগামী ট্রেন অবরোধ করলো । শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি প্রমথ রঞ্জন ঠাকুরকে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করে দিলেন যার নাম হলো 'ঠাকুরনগর' । সেই জায়গায় গড়ে উঠলো 'The Exile " নামক ভবন ।
ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের মূল ভিত্তি ছিল দ্বিজাতিতত্ত্ব, অর্থ্যাৎ হিন্দু-মুসলমানের পৃথক বাসস্থান । কিন্তু জিন্নাহ পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বলেছিল যে রাষ্ট্র পরিচালনায় ধর্মের কোনো ভুমিকা থাকবেনা, যা শুনে মোল্লারা ভয়ানক চটেছিল ! কোরান বলেছে মুসলমান প্রধান দেশকে ইসলামী আইন মাফিক চালাতে হবে । জিন্নাহ পটল তুলল ১৯৪৮ সালে ১১ই সেপ্টেম্বর । সঙ্গে সঙ্গে লিয়াকত আলী পাকিস্তানকে ইসলামী শাসনের আওতায় আনতে পায়তাঁড়া শুরু করে দিল ! এক্ষেত্রে হিন্দুদের প্রতিবাদ হাওয়ায় উড়ে গেল । লিয়াকতের মৃত্যুর পর পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হলো পাঞ্জাবের ঝানু ব্যুরোক্রাট গোলাম মহম্মদ । তার আমলেই শুরু হলো পাকিস্তানের সকল ক্ষমতা পাঞ্জাবিদের হাতে কুক্ষিগত করার প্রক্রিয়া । বাস্তবে আসতে আসতে পাঞ্জাবিদের হাতেই চলে গেল পুরো পাকিস্তানের মূল ক্ষমতা । বাঙালি মুসলমান তখন দুধে চুষে নেওয়া আমের আঁটি !
পাকিস্তানের জন্য বাঙালি হিন্দুর রক্তে হাত রাঙানো সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক বাঙালি মুসলমানকে অবশেষে সায়ত্বশাসনের আন্দোলনে নামতে হয়েছিল । পাঞ্জাবি ফর্সা দীর্ঘদেহী মুসলমানরা তখন কি বলেছিল: 'মিসকিনের বাচ্চারা, দেখ কেমন লাগে ?' -----জানতে বড় ইচ্ছে করে !
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................