নেটফ্লিক্সে অটোমান বলে একটা সিরিজ আছে।

নেটফ্লিক্সে অটোমান বলে একটা সিরিজ আছে। ফল অব কনস্টান্টিনোপলের ছপর্বের ইতিহাস।

 রবিবারে পুরো ছটা এপিসোড দেখলাম। তার মাঝে মাঝেই ফেসবুকের ফিডে তাকাতে দেখছি বিজেপির নেতা বিজয়বর্গী বলছেন, যাদের তেত্রিশ কোটি দেবতা তাদের করোনাতে ভয় কি? কোন কোন বিজেপির নেতা গোমূত্র খাচ্ছেন।  বুঝতে পারছি না এটা তাদের সত্যিকারের বিশ্বাস না হিন্দু ধর্মকে শ্রেষ্ঠ দেখানোর সার্কাস। 

ভাবছেন বিজেপির নেতাদের  সাথে রোমান সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট এবং শেষ ক্যাপিটাল কনস্টানিনোপলের পতনের ইতিহাসের কি সম্পর্ক? 

তাহলে নেটফ্লিক্সের সিরিজটা ভাল করে দেখুন আরেকবার। কনস্টানিনোপল শহরটির চারিদিকে জল আর তিনটি লেয়ারে দুর্ভেদ্য প্রাচীর।  ১১০০ বছরে ২১ বার এই শহরটি দখল করার চেষ্টা করেছে শত্রুরা। পারে নি। এই শহর কেউ দখল করতে পারে কেউ চিন্তাতে আনতে পারত না।

২৯শে মে ১৪৫৩ শালে ৫৩ দিন অবরোধ যুদ্ধের পর, কনস্টান্টিনোপলের পতন হয় ওটোমান সম্রাট সুলতান মেহমুদ-২ এর হাতে। মেহমুদের বয়স তখন মোটে ২১। 

 এই যুদ্ধে ইস্টার্ন রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন ১১ নেতৃত্বের সাথে মেহমুদের নেতৃত্বের তুলনা করলেই বুঝতে পারবেন, শত্রু যখন সমাগত, তখন ইশ্বর ভরসায় থাকলে কি হতে পারে। 

 কনস্টানস্টাইন এবং তার সভাসদরা সবাই অর্থডক্স খ্রীষ্ঠান। তাদের বিশ্বাস মাতা মেরী ১১১০ বছর ধরে, তাদের বাঁচিয়ে এসেছে-এবারো বাঁচাবে। কারন তাদের শহর ত দুর্ভেদ্য। ফলে মেহমুদ যখন সৈন্য নিয়ে,  প্রাচীরের দোড়গড়ায়, তখন স্ট্রাটেজি, যুদ্ধনীতি নিয়ে আলোচনার চেয়ে গোটা শহর জুরে মাতা মেরীর কাছে পার্থনার ধূম আরো বেশী করে বাড়ানো হল! যাতে শহরের , সেনাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে! মেরীর আশীর্বাদ যে শহরের ওপর তাদের হারায় কে?

 অন্যদিকে মেহমুদ-২ মোটেও আল্লার ভরসায় কনস্টান্টিনোপল জিততে আসেন নি। রুমানিয়ার দক্ষ কামান কারিগড় দিয়ে বানিয়েছেন ব্যাসিলিকা- সেযুগের বৃহত্তম কামান যা দিয়ে আধটনের গোলা ছোঁড়া যায়। সার্বিয়ার সিলভার মাইনার নিয়ে এসেছেন যাতে তারা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে প্রাচীরের তলা ধ্বসিয়ে দিতে পারে।  যদিও মেহমুদ নাস্তিক ছিলেন না- কিন্ত আল্লা জেতাবে সেই ভরসায় কনস্টান্টিনোপল জিততে আসেন নি। কারন উনি জানতেন উনার পিতা ওসমান সহ আরো ২০জন আগে ব্যর্থ হয়েছে। 

এত কিছুর পরেও শহরের প্রাচীর কিছুতেই ভাংতে পারছিলেন না মেহমুদ। তার নিজের সেনারাই প্রায় বিদ্রোহ করতে চলেছিল। কিন্ত শেষে এক অসম্ভব মাস্টার প্ল্যান যা অবিশ্বাস্য- তাকে অভাবনীয় দক্ষতায় সম্ভব করে তুলবেন!

 মেহমুদ সেই তরুন সুলতান যিনি পাঁচটা ভাষা জানতেন। বাইবেল, কোরান , গ্রীক দার্শনিকদের লেখা ছিল তার মুখস্থ। তাকে তার পিতা মুরাদ শিখিয়েছিলেন যুদ্ধ জয় করতে বুদ্ধি লাগে, সতর্কতা লাগে। 

 অন্যদিকে সম্পূর্ন অন্য পরিবেশে মানুষ শেষ রোমান সম্রাট কনস্টানস্টাইন ১১। তাদের সব কিছুতেই গড, যীশু এবং মাতা মেরী।  মাতা মেরীকে পার্থনা করে সন্তষ্ট রাখতে পারলেই তাদের রাজ্য এবং শহর শত্রু থেকে অক্ষত থাকবে।  এই তাদের দৃঢ় বিশ্বাস। 

ফলে অনেক এডভ্যান্টেজ থাকা সত্ত্বেও,  কনস্টান্টাইন রোমান সম্রাজ্য খোয়ালেন। অন্যদিকে হাজার প্রতিকূলতার ঝড় ঝাপটা সামলে, মেহমুদ মাত্র ২১ বছর বয়সে সেই কাজ করলেন, যা তার আগের ১১০০ বছরে কেউ করতে পারে নি।

 ভাইরাসের সাথে লড়াই ও যুদ্ধ।  অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসে বুঁদ হয়ে সেই যুদ্ধে নামলে ফল হবে ভয়বহ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted