কারা সংখ্যালঘু ?
---------------------
পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান জনগােষ্ঠীকে কি সত্যিই সংখ্যালঘুর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া যায় ? কেবল আপেক্ষিকভাবে সংখ্যায় কম বলেই তাদের সংখ্যালঘুর বিশেষ মর্যাদা দিতে হবে ? জনসমাজে চোর, ডাকাত বা ব্রাহ্মণরাও তো সংখ্যায় কম কিন্তু তাই বলে কি আমরা তাদের সংখ্যালঘু বলি না পাড়ার মাস্তানদের আমরা সংখ্যালঘুর বিশেষ মর্যাদা দিই ? ইতিহাস ঘেঁটে দেখবেন, অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকায় সাদা চামড়ারা, ইরাকে সুন্নি মুসলিমরা বা ভারতের একটা বড় অংশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু হয়েও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিল, ইতিহাস কিন্তু তাদের গায়ে সংখ্যালঘুর তকমা আটকায়নি ! জনসমাজের সেই অংশকেই সংখ্যালঘুর বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়, যারা সংখ্যায় কম হওয়ার ফলে সমাজ বা রাষ্ট্র দ্বারা দীর্ঘদিন নিপীড়িত, নিপীড়ন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা ভাষাগত যেকোনো রকমের হতে পারে । আম্বেদকার, এই পৃথিবীর অভিশাপ ‘পাকিস্তান’ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিল : ‘দুই দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু বিনিময়ই একমাত্র দীর্ঘস্থায়ী সাম্প্রদায়িক শান্তির পথ ।’ দেশভাগের আঙ্গিকে আম্বেদকারের এই কথাটা পাঞ্জাব মেনেছিল আর তাই পূর্ব পাঞ্জাবে (ভারতের পাঞ্জাব) মুসলমান জনসংখ্যা ৩৩, ১% থেকে কমে ১.৮% এবং দেশভাগের এত বছরেও হিন্দু-মুসলমান বা শিখ-মুসলমান সমস্যা হয় নি । আম্বেদকারের কথাটা বাংলা মানেনি আর তাই পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তু সমস্যা আজও চলছে এবং ১৯৫১ সালের ১৯ শতাংশ সংখ্যালঘু এখন বেড়ে ৩১ শতাংশের কাছাকাছি ।
একটা কথা মনে রাখবেন, এই আখ্যায়িত সংখ্যালঘু মুসলমানরাই কিন্তু ভারতে ও বাংলায় কয়েকশ বছর রাজত্ব করেছে তাই এদেশে তাদের চিরকালিন সংখ্যালঘুর দুরবস্থা কখনােই ছিল না । এরপরের দু শ বছরের ব্রিটিশ রাজত্বেও মুসলমানরা কখনোই নামের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের শাসনে ছিলোনা, বরং যুক্ত বাংলায় স্বাধীনতার পূর্বে মুসলিম লীগই ছিল প্রধান শাসক দল । দেশভাগের পরে, পশ্চিমবঙ্গে এই আখ্যায়িত সংখ্যালঘু মুসলমান জনগােষ্ঠীর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা ভাষাগত ক্ষেত্রে কোন সরকার কোনো বিশেষ বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা কখনো নেয় নি । তাদেরকে শারীরিক অত্যাচার, নারীদের উপর অত্যাচার, সম্পত্তির লুণ্ঠন বা ভূমি থেকে বিতাড়ন কোনোটাই সিস্টেম্যাটিকালি না ঘটলেও ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশে হিন্দুদের ক্ষেত্রে এটাই অতি সাধারণ অভিজ্ঞতা । এর কারণে, নিরাপদ পশ্চিমবঙ্গে, প্রথমে পূর্ববঙ্গ এবং পরে বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরা চলে এসেছে আর ক্রমাগত আসছে । আজকের বাস্তবতায়, পশ্চিমবঙ্গের এই আখ্যায়িত সংখ্যালঘু মুসলমান তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি তেমন না ঘটাতে পারলেও ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দাপটে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী । পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সাংস্কৃতিক এবং মূল্যবােধের অবস্থানকে তারা ইতিমধ্যেই পাল্টাতে শুরু করেছে । চর্চিত এই সংখ্যালঘুদের দাপটে, কলকাতায় স্থাপিত হয়েছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয় পড়া বাধ্যতামূলক, কোনো কোনো শিক্ষার স্থানে ছাত্রী ও অধ্যাপিকাদের বােরখা পরাও বেসরকারিভাবে বাধ্যতামূলক ! পশ্চিমবঙ্গের এই আখ্যায়িত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, এখন শাসকদলের পৃষ্ঠপোষকতায় উলেমা, ইমামদের হাতে ।
আপনারা যারা হ্যাপি গো লাকি টাইপ, বর্তমান সম্মন্ধে কেয়ার করার সময় নেই, তাদের মনে করিয়ে দি : মুসলমান সমাজের একটি আদর্শগত বিশ্ব ঐক্য-‘উম্মা’ অর্থাৎ বিশ্ব মুসলিম সমাজ । স্থানীয় অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যায় কম হলেও এরা বৃহত্তর মুসলিম সমাজের অংশ । মুসলিম বিশ্ব পূর্বে এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া থেকে পশ্চিমে আফ্রিকার আলজিরিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত, মাঝখানে বিষের মত বাঁধা এই আমাদের জন্মভূমি ভারত । এই বাংলার ঠিক গা ঘেঁষেই বাংলাদেশ, যেখানে প্রতিনিয়ত চলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর শারীরিক আক্রমণ, ধর্মস্থান ধ্বংস, নারীদের লাঞ্ছনা, জমি ও সম্পত্তি লুণ্ঠন আর উল্টো পিঠে নিরাপদ পশ্চিমবঙ্গে, প্রথমে পূর্ববঙ্গ এবং পরে বাংলাদেশ থেকে মুসলমানরা চলে এসেছে আর ক্রমাগত আসছে ।
কেবল সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে কোনো জনগােষ্ঠীকে সংখ্যালঘুর বিশেষ মর্যাদা দিয়ে এই আখ্যায়িত সংখ্যালঘু মুসলমান জনগােষ্ঠী ধর্মনিরপেক্ষ পশ্চিমবঙ্গের সমাজের জন্য একটি সমস্যা হয়ে উঠছে না কি ?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................