হিন্দুত্ব--- “চৈতন্য শক্তি”

হিন্দুত্ব--- “চৈতন্য শক্তি”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

 আমরা জানলাম যে, আমাদের বুদ্ধি পরিপক্ক হয় যখন বুদ্ধিবৃত্তির সঙ্গে চৈতন্য শক্তির যোগ হয়। তা এই চৈতন্য শক্তি তাই বা কি? 

জড় বিজ্ঞান স্বীকার করে যে এই বিশ্ব একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চলে। সেই নিয়মের সামান্য তম ব্যাত্যয় ঘটলে মহাবিশ্বে প্রলয় ঘটে। কোয়ান্টাম ফিসিক্স এই সত্য মেনেই চলছে। এই বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আমাদের সনাতনী প্রজ্ঞার কি কোনো তফাৎ আছে??? আমার তো মনে হয় না।

সনাতনী দর্শন গুলো, গীতা, ব্রহ্ম সুত্র ( আদি শংকরাচার্য্যের) একটু ধ্যান দিয়ে পড়লে জানলে এবং অনুধাবন করলে বোঝা যাবে যে সনাতনী প্রজ্ঞার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো প্রভেদ নেই। আমরা জানি না তাই সেই সত্য মানি না। তার্কিক রা তর্ক করবেন, ওই জাটাজুট ধারী, অর্ধ উলংগ কিছু মানুষ যারা বনে জঙ্গলে বাস করতো তারা কি জানে আর কি বলে? সব উন্মাদ, গাজা খোর, ঠগ ইত্যাদি ইত্যাদি।। 

আমি মাত্র তিনজনের উদাহরন দেবো। নিউটন ‘আপেক্ষিত তত্বের ধারনা করেছিলেন পার্কে বসে। পিথাগোরাস তার তত্ব আবিষ্কার করেছিলেন বাথটাবে স্নানে গিয়ে। আইনষ্টাইন তার তত্ব E= mc2 (ষ্কোয়ার) এর ধারনা পেলেন কোথায় না হ্রদের জলে নৌকার ওপরে বসে বেহালা বাজাতে বাজাতে। এরা সবাই পন্ডিত ব্যাক্তি ছিলেন, গনিত শাস্ত্র বিদ। ধারনা এলো তারপর গনিতের ভাষায় সেই ধারনা রুপ পেলো, তাইতো? 

তাই এই ধারনা টা কোথা থেকে আসে??? সনাতনী দর্শন বলে দেখে শেখা, শুনে শেখা এবং ঠেকে শেখার বাইরে আর একটি শেখার উপায় আছে। যাকে বলে “ Intuitive Knowledge” বা “দিব্যজ্ঞান”। 

তা এই দিব্যজ্ঞান আসে কোথা থেকে? বছরের পর বছর গনিতের সাধনা যখন কোনো সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারে না তখন তার ভিতরকার এক শক্তি এই মহাবিশ্বের প্রবহমান ‘জ্ঞান’ শক্তির সংগে যুক্ত হয়। আর তখনই নিজের অন্তারাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনে এক নতুন পথের দিশা পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা সাধনা করেন আর ঠিক এই ভাবেই তাদের সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেন। 

সনাতনী দর্শন তাই বলে----
“ ঔম ভুর ভুয়ো স্বোহা, তৎ সাবিতুর বরন্যেম ভর্গ, দেবস্য্র ধীমহী, ধীয়ো ইয়ো না প্রচোদয়াৎ”--- “এই মহাবিশ্বের মধ্যে এক বরেন্য ভর্গ পুরুষ আছেন, যিনি দেবতাদের বুদ্ধি (ধী শক্তি) দান করেন, আমি তার কাছে সেই ধীশক্তি প্রার্থনা করছি”। 

তাহলে দাড়ালো কি? এই মহাবিশ্বে এক প্রবহমান ‘জ্ঞান শক্তি’ আছে। যাকে এই মুনী ঋষিরা নাম দিলেন “চৈতন্য শক্তি”। সেই জ্ঞান শক্তির সংগে নিজের বুদ্ধিবৃত্তির যোগ (connection) হওয়াটাই মুল কথা। সেটা হলে তবেই প্রকৃত জ্ঞান হয়। বাকি যা কিছু আমরা শিখি তা ভুলে ভরা।  

কিন্তু আমরা জানিই না যে মহাবিশ্বের সেই জ্ঞান শক্তি ই আমাদের দেহের মধ্যে আছে “চৈতন্য রুপে”। তার খোজ ও আমরা রাখি না। এই খোজ এবং যোগ, জানার ইচ্ছা এবং যুক্ত হওয়া, এটাই “যোগ সাধনা”।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted