ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামে ধর্মান্তর : তলোয়ার ১
---------------------------------------------------------------------
বহু শতাব্দী ধরে মুসলিম শাসনের পরও ভারতবর্ষে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ অমুসলিম রয়ে গেছে | নিষ্ঠুর মুসলিম শাসনাধীনে চরম সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মর্যাদাহানি, উৎপীড়ণ আর কঠোর করের বোঝা সহ্য করেও এরা পৈতৃক ধর্মকে আঁকড়ে পরে আছে । মুসলিমরা ১১শ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছে, কিন্তু বাস্তবে তারা কখনোই গোটা দেশের উপর শাসন করতে পারেনি! মুহাম্মদ বিন কাসিম ৭১২ খ্রীষ্টাব্দে সিন্ধু আক্রমণের পর প্রথম তিন শতাব্দে মুসলিম শাসন বিশাল ভারতের উত্তর-পশ্চিমের সামান্য অংশে সীমাবদ্ধ ছিল । আজকের ভারতে ওই সব অঞ্চলে মুসলিমদের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে যে, দীর্ঘকালব্যাপী যে যে অঞ্চলে তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তার করেছে, সেই সব অঞ্চলে মুসলিমরা জনগণের উপর ইসলাম চাপাতে সক্ষম হয়েছে ।
আকবরের আমলে (১৫৫৬-১৬০৫) ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীনে আসে। আকবর ইসলাম বিস্তারে তেমন কোনো ভূমিকা রাখেনি। আকবরকে অনুসরণ করে পরবর্তী পঞ্চাশ বছর তার ছেলে জাহাঙ্গীর ও নাতি শাহজাহান ইসলামীকরণকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে শক্তিশালী করেনি । আওরঙ্গজেব যখন ক্ষমতা দখল করে, তখন ইসলামীকরণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ রাষ্ট্রের মূল নীতির অন্তর্ভুক্ত হয়। তার শাসনামলে দেশের সর্বত্র বিদ্রোহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল । বার্নিয়ার-এর মতে, আওরঙ্গজেবের বর্বর নিষ্ঠুর শাসনামলে উদ্ধত রাজপুত ও মারাঠা যুবরাজরা সবসময় ঘোড়ায় চড়ে সম্রাটের প্রাসাদ প্রাঙ্গনে যেত। তারা দেহরক্ষীদের সাহায্যে সশস্ত্র অবস্থাতেই প্রাসাদে ঢুকতো ।(রেফ:Bernier F (1934) Travels in the Mogul Empire (1656-1668), Revised Smith VA, Oxford, p. 40,210) । আওরঙ্গজেব যখন ‘ওমরের চুক্তি’ ও শরীয়া আইনের সাথে তাল মিলিয়ে অমুসলিমদের জন্য অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তখন উদ্ধত ও ভয়ঙ্কর রাজপুতদেরকে এ আইনের বাইরে রাখা হয়। অমুসলিমদের প্রতি আওরঙ্গজেবের ভয়ঙ্কর ও স্বেচ্ছাচারী নীতির প্রতিফলন হিসেবে সে যখন জিজিয়া কর পুনরায় আরোপ করে, তখন শিবাজী ও রানা রাজসিংহের মতো বিদ্রোহীরা সম্রাটের কাছে পত্র পাঠায়। সম্রাটের কর্মচারীরা (আমিন) কর আদায় করতে গেলে উদ্ধত প্রজারা তাদের একজনকে হত্যা করে ও অপর আরেকজনকে চুল-দাড়ি কেটে অপমানিত করে খালি হাতে ফেরৎ পাঠায়! (রেফ: Lal (1999), p. 118-119) ।
এবারে প্রশ্ন আসে অবিভক্ত আদি ভারতীয় উপমহাদেশে তাহলে ইসলামে ধর্মান্তর কিভাবে ঘটেছিল ? বহু মুসলিম লেখক ও শাসকদের বয়ান অনুযায়ী ইসলামের প্রতি হিন্দুদের বিরূপতা সত্ত্বেও কিভাবে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়লো ? আসুন দেখি:
তলোয়ার দ্বারা ধর্মান্তর:
-------------------------
কোরানে ৯:৫ আয়াতে আল্লাহর নির্দেশানুযায়ী নবী মুহাম্মদ বহু ঈশ্বরবাদীদেরকে হয় ইসলাম গ্রহণ অথবা মৃত্যু - একটা বেছে নেয়ার মধ্য দিয়ে তরবারীর দ্বারা ইসলামে ধর্মান্তরিত করা শুরু করেছিল । মূর্তিপূজক হিন্দুদেরও ইসলাম কিংবা মৃত্যু - এ দুটোর একটা বেছে নিতে হবে । মুহাম্মদ বিন কাসিম যখন সিন্ধু বিজয় শুরু করে, পরাজিতদের মৃত্যুর ভয়ে ইসলামে ধর্মান্তরিত করে । যারা তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তাদের কপালে লেখা হয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যু, বাকী নারী ও শিশুরা দাসত্ব বরণের মাধ্যমে মুসলিম হয়েছিল । যে অঞ্চল বিনা যুদ্ধে তার কাছে নতি স্বীকার করেছিল, তাদেরকে গণহারে হত্যা বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত করা হবেনা এমনটাই ঘোষণা দিয়েছিলো।। এই নমনীয় নীতির খবর যখন বাগদাদে তার পৃষ্ঠপোষক হাজ্জাজের কাছে পৌঁছাল সে কাসিমকে লিখলো :
“...আমি জানতে পেরেছি যে, তুমি যে উপায়ে ও নিয়মে এগোচ্ছো তা (ইসলামের) আইনসম্মত। তবে তুমি শত্রু-মিত্রের ভেদাভেদ না করে, ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাইকে সুরক্ষা দিচ্ছ। ঈশ্বর বলেন: ‘অবিশ্বাসী পৌত্তলিকদেরকে কোনো সুযোগ না দিয়ে গলা কেটে ফেল।’ জেনে রাখো, এটা মহান আল্লাহর নির্দেশ। তাদেরকে রক্ষার জন্য তোমার এতটা উদগ্রীব হওয়া উচিত নয়। এরপর থেকে ইসলাম গ্রহণকারী ছাড়া কাউকে বাচিয়ে রেখো না। এটা একটা মূল্যবান প্রচেষ্টা ও তা মেনে চললে তোমার উপর মর্যাদাহানির কোন অভিযোগ আরোপিত হবে না।”(Elliot & Dawson, Vol I., p. 173-74) । হাজ্জাজের এই হুমকীতে কাসিম তার পরবর্তি অভিযানে আগাগোড়া সেটা অনুসরণ করলো ও যারা ইসলাম প্রত্যাখ্যান করলো, সকলকেই হত্যা করলো । আল-বিলাদুরীর বলেছে ‘আট কিংবা কারো কারো মতে ছাব্বিশ হাজার মানুষকে তরবারীর তলায় হত্যা করা হয়।’( Ibid, Vol. I, p. 122).
ক্রমশঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................