আমার ভাবনা!!
“আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের ফলে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস একটানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতে বসবাস করা জরুরি ছিল।
কিন্তু সংশোধনী আইনের দ্বিতীয় অংশে এর পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে।
উপরোক্ত ৩ দেশ থেকে আসা ৬ ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সম্মতি পাবার পর আইনে পরিণত হয়েছে”।
এই আইন নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। ভারতের একান্ত নিজের দেশের ব্যাপার নিজের দেশের সমস্যা। (তবে ব্যক্তিগতভাবে এই আইনকে আমি সমর্থন করি)।
আমার সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের তথাকথিত প্রগতিশীলদের নিয়ে।
সেইসব প্রগতিশীল যারা নিজের দেশকে ধর্মের হিজাবে মুড়িয়ে রেখেছে, রাষ্ট্রের ধর্ম ইসলাম নিয়ে মনে মনে একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে কথায় কথায় বলে- আহারে ভারত হিন্দু রাষ্ট্র হয়ে গেল। কি হবে এখন ওখানকার মুসলমানদের।
তোমরা যখন নিজের দেশ থেকে নির্যাতন করে বাংলাদেশের আদিবাসী হিন্দুদের জমিজমা কেড়ে নিয়ে দেশ থেকে বিতাড়িত করে আত্মতৃপ্তিবোধ করো তখন কোথায় থাকে তোমাদের এই লোক দেখানো মায়াকান্না।
তবে ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে গেল বলে তোমাদের দুঃখ কিন্তু নিজের দেশ যে পুরোপুরি ইসলামী তথা জঙ্গি রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে তোমাদেরই মদদে সে ব্যাপারে তোমাদের নীরবতা আমাকে এখন অবাক করে না আর।
বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তানে মতো সাম্প্রদায়িক দেশগুলোতে হিন্দু হয়ে জন্ম নেয়াটা অনেকটা অভশাপের মতো।
তাদেরকে এই অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য যদি ভারত তাদের জন্য বিশেষ আইন পাশ করে তাহলে বাংলাদেশী আর পাকিস্তানীদের সমস্যা কোথায় হাজার চিন্তা করেও আমার ক্ষুদ্র মাথায় আসছে না।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নির্যাতেনের
বেশীরভাগ খবরই আমাদের কানে আসে না, যেসব ঘটনা গোচরে আসে তারই কিছু ঘটনা আমার প্রগতিশীল বন্ধুদের মনে করিয়ে দেই-
নোয়াখালীর সেনবাগের ১০০ বছরের পুরানো মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর, মন্দির তছনছ ও কিছু জিনিসপত্র লুট করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। দুর্বৃত্তরা মন্দিরের মধ্যে রক্ষিত টাকার দানবক্স, মন্দিরের দরজা, রামঠাকুর ও রাধাকৃঞ্চের প্রতিকৃতি ভাংচুর ও তছনছ এবং মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি স্থানীয় পুলিশ- আমি দেখছিলাম সেখানকার ধর্মাবলম্বীদের হাহাকার, বুকের ভিতরটা দুমডে চুমডে একাকার হয়ে যাচ্ছিল আমার। নিজের দেশে নিজের বাপ দাদার ভিটেয় বসে শান্তিতে ধর্মটাও পালন করার অধিকার নেই তাঁদের।
নাসিরনগরে পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার ধোঁয়া তুলে মাইকিং করে ১৫টি মন্দির, শতাধিক ঘরবাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
কত বছরের তিল তিল করে সাজানো সংসার একপলকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হতে দেখেছে তাঁরা।
রংপুরেও নাসির নগরের অনুকরণে হিন্দুদের উপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। ফেসবুকে কথিত একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ঠাকুরপাড়া গ্রামে হিন্দুদের বাড়িতে ,মন্দিরে লুটপাট করা হয়েছে আগুন দিয়ে পুডিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ব্রাম্মবাড়িয়ায় একই কান্ড ঘটেছে,ফেইসবুক হ্যাক করে
ধর্মঅবমাননার ধোঁয়া তুলে শতশত হিন্দু ধরেনবলম্বীদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। শত বছরের পুরানো মন্দির ভাঙচুড় করা, মন্দিরের জমি দখল করা, হিন্দু মেয়েদের জোর করে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করা তো এখন ডালভাত ব্যাপার।
সবচাইতে মজার ঘটনা ঘটেছে কিছুদিন আগে, সেখানে বর্তমান সরকারের মন্ত্রী স্বয়ং উপস্থিত থেকে হিন্দু ধর্মের থেকে মুসলীম ধর্মে ধর্মান্তরণ অনুষ্ঠানে। তখন কিন্তু আমাদের এই তথাকথিত
প্রগতিশীল বন্ধুদের প্রতিবাদ করতে দেখিনি, বরং মনে মনে ঢেঁকুর তুলেছে বলাই বাহুল্য। আজ যখন এদের দেখি ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে কথা বলতে, তখন এদের ভন্ডামী দেখে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝি না।
বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তান ছাড়াও পৃথিবীর বহু ইসলামিক দেশ সেসব দেশে ১০০% মুসলীমদেরই বসবাস। তাছাড়া সৌদী আরবে তো অন্য ধর্মের মানুষদের বসবাসের অধিকারই নেই তবু কেন মুসলমানদের ভারত নিয়ে এতো সমস্যা। তারা কেন মানতে পারছে না তারা হিন্দুদের মারবে পিটাবে যা ইচ্ছা তাই করবে কিন্তু ভারত তাদের নাগরিকত্ব দেবে কেন তাদের সেলটার দেবে!
আজ ভারতের প্রশ্নে বাংলাদেশের
হুজুর পীর রাজনৈতিক নেতা আর তথাকথিত প্রগতিশীলরা এক হয়ে গেছে।
এই উপমহাদেশে বাংলাদেশ পাকিস্তান আফগানিস্তান অনেকটা একই সুঁতোয় গাঁথা।
বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার কোন অবকাশ নেই, মুক্তচিন্তার মত প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের অভিজিৎসহ অনেককেই হত্যাকান্ড শিকার হতে হয়েছে।এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ধর্মভিত্তিক গোষ্ঠি।
তেমনি পাকিস্তানে জুনায়েদ নামের তুখোর মেধাবী একজন অধ্যাপককে ধর্মকে অবমাননার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এদুটো দেশই মেধাবী মুক্তচিন্তার মানুষের চাইতে ওয়াজী হুজুরদের প্রায়োরিটি দেয় অনেক অনেক বেশী।
আর সেইজন্যই মনে হয় ভারতের বতর্মানের নাগরিকত্ব আইনের ব্যাপারে এই দুটো দেশের মানুষেরই আঁতে সবচাইতে বেশী আঘাত লেগেছে।
এদের নিজের দেহে ফুঁটোর শেষ নেই তবু এরা ম্যাগনিফাইন্ড গ্লাস দিয়ে অন্যের দেহের ফুঁটো খুঁজে বেড়ায়।
মুসলীমরা সাধারণত মনে করে ধর্মপালন করা তাদের বাপদাদাদের একচেটিয়া অধিকার, তারা যে দেশে থাকবে সেই দেশ বা রাষ্ট্র হবে সম্পূর্ণ মুসলীম রাষ্ট্র। আর কোন দেশ বা দেশের মানুষের অধিকার নেই সেইদেশে ধর্ম পালন করার।
#কপি: শায়লা খান বন্যা
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................