একজন মানুষ কি অন্য একজন মানুষকে নারী উপহার দিতে কিংবা নিতে পারে যার সাথে যৌনকর্মও করা যাবে?

ফাতিমা জান্নাত বলছি। আমার ৩০তম প্রশ্ন।❓❓❓

ক) একজন মানুষ কি অন্য একজন মানুষকে নারী উপহার দিতে কিংবা নিতে পারে যার সাথে যৌনকর্মও করা যাবে?
খ) আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কোন মুসলিম শাসককে বন্ধুত্বস্বরুপ কোন নারী উপহার দিলে সেটা কি জঘন্যতম অন্যায় হবেনা?

ইসলামের যে কয়টি ব্যাপার জানার পর আমার আজকের এই অবস্হান তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে আজকের এই প্রশ্ন।

▪️একজন অনুকরনীয়, অনুসরনীয় মানুষ কি করে একজন নারীকে অন্য এক পুরুষের কাছ থেকে বন্ধুত্বস্বরুপ কিংবা কোন কুটনৈতিক কারনে উপহার নিতে পারে তাও আবার যৌন কর্মের জন্য। 

▪️আর একজন সুস্হ স্বাভাবিক, বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ কি করে যৌন কর্মের জন্য অন্য কাউকে একজন নারীকে উপহার দিতে পারে। নারী কি কোন বস্তু কিংবা খাদ্য দ্রব্য যে তাকে উপহার দেওয়া যায় এবং নেওয়া যায়। 

আমেরিকার সাথে পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ কিংবা গোষ্ঠীর যুদ্ধ লেগেই থাকে এবং অনেক জায়গায় আমেরিকা জয়ী হয়। এখন ঐ জয়ী এলাকাগুলো থেকে কয়েকজন নারীকে ধরে এনে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি  তুর্কী, পাকিস্হান এবং সৌদিআরবের রাষ্টপ্রধানদের যৌন কর্মের জন্য উপহার দেয় তাহলে ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী ঐ তিন মুসলিম রাষ্টপ্রধান কি ঐ নারীগুলোকে গ্রহন করলে সঠিক হবে? পাকিস্হানের রাষ্টপ্রধান কি আবার উনার ভাগের একটা নারীকে উনার সেনাবাহিনী প্রধানকে উপহার দিতে পারবে? 

আশ্চর্য  হয়েছি, প্রচন্ড মানসিক আঘাত পেয়েছি, নিজের সাথেই যুদ্ধ করেছি যখন উত্তরটা পেয়েছি হ্যাঁ পারবে। ইসলামের ইতিহাস তাই বলে একজন জ্বলজ্যান্ত রক্ত মাংসের নারীকে উপহার দেওয়া হয়েছিলো এবং নেওয়া হয়েছিলো।

               🩸মারিয়া আল কিবতিয়া🩸:
ইসলামের ইতিহাসের এই সেই নারী যাকে মিশরের শাসক মিকাওকিস যৌন কর্মের জন্য উপহারস্বরুপ আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ সা: এর জন্য পাঠিয়েছিলে। মারিয়া আল কিবতিয়া এবং শিরিন নামে এই দুই দাসীকে একসাথে উপহার পাঠানো হয়েছিলো। মুহম্মদ সা: মারিয়া আল কিবতিয়াকে নিজের জন্য রেখে শিরিনিকে উপহার দেন উনার সাহাবী হাস্‌সান বিন সাবিতকে। বাহ! 

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং আল্লার প্রিয় রাসুল একজন নারীকে উপহার হিসেবে নিয়েছেন অন্য এক শাসকের কাছ থেকে, বিয়ে ব্যতীত ঐ নারীর সাথে সহবাস করেছেন, এবং আরেকজন নারী শিরিনকে উপহার দিয়েছেন উনার সাহাবীকে। মারিয়ার গর্ভ থেকে যখন মুহম্মদ সা: এর পুত্র ইব্রাহিম জন্মগ্রহন করেন তখন তিনি দাসত্ব থেকে মুক্তি পান যেটা ইসলামের একটা নিয়ম।

এই ঘটনাটার  ব্যাখ্যা যখন জানতে গেলাম তিনটি মতামত পেলাম:
        ১. ইসলাম ধর্মে একজন পুরুষ বিশেষ কিছু শর্তে এবং পরিস্হিতিতে দাসী রাখতে পারবে এবং বিয়ে ব্যতীত তাদের সাথে সেক্স করতে রাখবে। এটা স্বয়ং আল্লাহ কোরানে অনুমতি দিয়েছেন।
        ২. দাস দাসী প্রথা ইসলাম শুরু করেনি। এর অনেক অনেক দিন আগ থেকেই পৃথিবীতে এই প্রথাটা চলে আসছে। অনেক রাজা, বাদশা, সম্রাটদের অসংখ্য দাসী ছিলো।আর পূর্বে দাসীদের সাথে যেসব নির্মম ব্যবহার করা হতো ইসলাম এসে এটার বিশাল সংস্কার এনেছে। 
          ৩. আব্রাহামিক ধর্মগুলোর( ইসলাম,খ্রীষ্টান, ইহুদী) অনেক নবীদের ই দাসী ছিলো এবং ঐ দাসীদের গর্ভ থেকে সন্তানও জন্মলাভ করেছে। তাই দাসীর সাথে বিয়ে ব্যতীত সেক্স শুধুমাত্র মুহম্মদ সা: একা করেন নি এর আগেও আল্লার প্রেরিত অনেক নবীরাই করেছেন।

উপরের প্রতিটি পয়েন্ট আমি চোখ বন্ধ মেনে নিতাম যদি ঘটনাগুলো শুধুমাত্র নবীরাসুলগন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকতো। কারন তখনকার দিনে দাসী উপহার দেওয়া-নেওয়া এবং তাদের সাথে সেক্স করা হয়তো স্বাভাবিক ব্যাপার ই ছিলো। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সৃষ্টিকর্তা কিভাবে উনাদেরকে এই কাজটা করার অনুমতি দিলেন? কিভাবে? 

রাজা-বাদশা, সম্রাটারাও একই কাজ করতো কিন্তু তাদের কাছে তো আল্লাহর ওহী আসতো না। তাদেরকে শুধরে দেবার কিংবা হুশিয়ার করার কেউ ছিলো না। যুগের উদাহরন তাদের ক্ষেত্রে হয়তো মেনে নেওয়া যায়।
কিন্তু প্রতিটি নবী রাসুলকেই তো আল্লাহ ওহী কিংবা আসমানী কিতাবের মাধ্যমে পরিচালিত করেছেন। তাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ নির্ধারন করে দিয়েছেন। তারা কোন ভুল করলে ফেরেশতার মাধ্যমে তাদের শুধরে দিয়েছেন। তাদের মাধ্যমে পুরো মানব জাতির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। তাদের কে তো নিষেধ করা যেতো।

▪️তাহলে কেনো আল্লাহ একটা আয়াত নাযিল করে কোন একটা কিতাবে উনার নবী রাসুলদের বললেন না “ তোমরা কোন নারীকে যৌন কর্মের জন্য উপহার নিবে না এবং দিবে না। প্রতিটি নারীর রক্তে মাংসে গড়া একটা শরীর আছে, প্রতিটি নারীর আত্নসন্মান আছে, প্রতিটি নারীর নিজ জীবনের উপর স্বাধীনতা আছে, প্রতিটি নারী কারো না কারো মা, বোন, মেয়ে, স্ত্রী।”

▪️কেনো কোরান শরীফে আয়াতের মাধ্যমে ঘোষনা দিলেন না যুগ যুগ ধরে নারীদেরকে উপহার দেওয়া এবং নেওয়ার মতো অমানবিক প্রথাটাকে মানুষদের জন্য সম্পর্নূভাবে হারাম করা হলো। কেনো বললেন না কেউ যদি এমন কাজ করে তাকে হাবিয়া দোজখে ছুড়ে ফেলা হবে। না উনি বলেন নি তাই, 

একজন নারী হিসেবে, একটা কন্যার মা, একজন বোনের বোন, একজন মায়ের কন্যা, একটা ভাতিজীর ফুফু আর  ভাগনীর খালা হিসেবে 
‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে দু হাত জোড় করে মাফ চাচ্ছি,
উনার প্রেরিত নবী রাসুলদের একজন নারীকে যৌনকর্মের জন্য দাসি হিসেবে উপহার নেওয়া এবং দেওয়ার প্রথাটা আমি মেনে নিতে পারছিনা। 
আমার চোখে এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।
❌আর যুগের দোহাই দিয়ে রাজা, বাদশার অপরাধকে রাকঢাক করাটা মেনে নিতে পারি কিন্তু সৃষ্টিকর্তার সাথে সরাসরি যোগাযোগে থাকা নবী রাসুলদের নয়।❌

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted