'শত্রু সম্পত্তি আইন' : কোরানে বর্ণিত গনিমতের মালের আধুনিক রূপ
-----------------------------------------------------------------------------------------
’৪৭ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে ভারত ভাগ হলেও হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক স্বভাবিক হয়নি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ লাগে, ভারতকে সরকারী ভাবেই শত্রু দেশ বলে পাকিস্তান ।
'দ্য ডিফেন্স অব পাকিস্তান অর্ডিন্যান্স ১৯৬৫'-এর মাধ্যমে শত্রু সম্পত্তি আইন করা হয় । ১৬৯ উপবিধি অনুযায়ী তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের যেসব নাগরিক ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের আগে থেকে ভারতে ছিল এবং সেই তারিখ থেকে ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভারতে চলে গিয়েছিল, তাদের শত্রু চিহ্নিত করা হয় । তাদের বাড়িঘর ও জমিজমা শত্রু সম্পত্তি হলো যার মালিকানা সরকার অস্থায়ীভাবে নিয়ে নিতে পারে। ভারতও সে সময় এরকম এক আইন জারি করে পাকিস্তানে নাগরিকত্ব গ্রহনকারী ভারতীয় সম্পত্তি সরকারের অধিকারে নিয়ে আসার জন্য ।
এহেন শত্রু ভারতের প্রত্যক্ষ সাহায্যে বাংলাদেশ হলো আর ভারত হলো পরম মিত্র। তবে ভারত মিত্র হয়ে গেলে কি হবে, স্বাধীন দেশের হিন্দুদের এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শত্রু বিবেচনার করা শুরু হলো । বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ! ’৭৪ সালে এক সরকারী গেজেটে এই শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করা হল, তবে জারী করা হল দেশে পরিত্যাক্ত অবাংগালীদের সম্পত্তি সরকারী অধিগ্রহনের জন্য ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’। আগের শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল হলেও পূর্ব পাকিস্তান থাকা অবস্থায় যাদের সম্পত্তি সরকার অধিগ্রহন করেছিল সেসব বেহাত হলো ! ‘অর্পিত সম্পত্তি আইন’ এর আওতাতেও যেসব বাংলাদেশী দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নন কিংবা অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহন করেছেন তাদের নামে থাকা সম্পত্তি অধিগ্রহন করার জন্য সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া হল। এই আইনের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানে যুদ্ধের পর স্বেচ্ছায় বসবাস করা বাঙালিদের সম্পত্তি সরকারী আওতায় আনা। হিন্দুদের বাংলাদেশ ফেলে পাকিস্তানে যাওয়া দুঃস্বপ্ন, কিন্তু কার্যত ভুগলো তারাই !! অর্পিত সম্পত্তি আইনের পর্দায় চললো তাদের সহায় সম্পত্তি দখলের মহোতসব।
আসলে কেবল নামটাই পরিবর্তন করে শত্রু সম্পত্তি থেকে অর্পিত সম্পত্তি হয়েছিল। ’৭৬ এর নভেম্বরে আইন পরিবর্তন করে সরকারের ক্ষমতা আরো বাড়ানো হল, এবার সরকার শুধু অধিগ্রহনই নয়, সম্পত্তি নিজের ইচ্ছেমত প্রদান করার ক্ষমতাও পেয়ে গেল সরকার , যা বিভিন্ন মেয়াদে লীজ দেওয়া শুরু হল। হিন্দু সম্প্রদায় হয়ে গেলো মূল টার্গেট। কোন দলের সরকারই বাদ গেলোনা লুঠে । ’৯৫ ও ’৯৭ সালে একটি এনজিও দুটি সমীক্ষায় প্রকাশ করে যে মোট ১.০৫ মিলিয়ন একর জমি শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে অধিগ্রহন করা হয়েছে, এবং দেশের শতকরা ৩০ ভাগ হিন্দু বসতবাড়ি এই কালো আইনের প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছে।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেবার দাবী প্রথম পাকিস্তান গনপরিষদে ’৪৮ সালে আওয়াজ তুলেছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। ’৭১ এর ২৫শে মার্চ গনহত্যা শুরুর প্রথম প্রহরেই তাকে তার ছেলেসহ ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টে ধরে নিয়ে অবর্ননীয় অত্যাচার করে হত্যা করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ তার এই সপরিবারে চরম আত্মত্যাগের প্রতিদান দিলো তার সম্পত্তিও শত্রু সম্পত্তি হিসেবে অধিগ্রহন করে ।
১৪০০ বছর আগে মহম্মদের মানস সন্তান 'কোরান' এ বর্ণিত 'গণমতের মাল' আর বাংলাদেশের 'শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি' কি একই পয়সার এপিঠ ওপিঠ........
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................