এতো অকৃতজ্ঞ কি মানুষ হতে পারে..

এতো অকৃতজ্ঞ কি মানুষ হতে পারে..? নাকি ওরা এরকমই? সবটাই নিয়ন্ত্রিত হয় সুদূর কোন এক জায়গা থেকে, আর ওরা সেই অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা পুতুলের মতো শুধু নাচতে থাকে..?

১৯০৮ সালে ঠিক আজকের এই দিনে আধুনিক ত্রিপুরা রাজ্যের রূপকার তথা শেষ মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য জন্ম নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে - তখন ত্রিপুরা বলতে শুধু এই পার্বত্য ত্রিপুরা ছিলো না, ছিল বাঙালি অধ্যুষিত সমতল ত্রিপুরাও (যা চাকলা রোশনাবাদ নামে পরিচিত ছিল, আজ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত) 

তিনি ছিলেন প্রকৃত শিক্ষিত, দূরদর্শী, প্রজা বৎসল, সাহিত্যানুরাগী আধুনিক মানসিকতার একজন মানুষ। উনার কিছু অবদান - 

1) বিদ্যাপত্তন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা করেন।

2) আগরতলা শহরকে প্ল্যান মাফিক করে গড়ে তোলেন। আজও অবাক করে দেয় উনার আমলে পরিকল্পনা মাফিক গড়ে তোলা শহরের রাস্তা, বাজার হাট। 

3) ভূমি সংস্কার করে পঞ্চ ক্ষত্রিয় ত্রিপুরি জনজাতি দের জন্য ভূমি সংরক্ষিত করেন। 

4) ত্রিপুরার প্রথম বিমান বন্দর স্থাপন করেন সিঙ্গারবিলে। 

5) দেশের প্রথম নগর পঞ্চায়েত (আগরতলা মিউনিসিপালিটি) স্থাপন করেন।

6) ত্রিপুরার আনাচে কানাচে বিদ্যালয় স্থাপন করেন। বামপন্থীরা যতোই প্রচার করুক, জনশিক্ষা আন্দোলন মহারাজা বীরবিক্রম এর পৃষ্ঠপোষকতাতেই শুরু হয়েছিল।

7) পিসলামিক অত্যাচারে বাংলাদেশ থেকে স্রোতের মতো পালিয়ে আসা হিন্দু বাঙালিদের  ত্রিপুরাতে স্থান দেন। নতুন করে জীবন শুরু করার জন্য ভূমি ও অর্থ সাহায্য করেন। পরে অবশ্য আশ্রয় পাওয়া সেই বাঙালির একটা অংশ এক বিশেষ বিকৃত বিদেশী রাজনৈতিক মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং ত্রিপুরার ভূমিপুত্র জনজাতিদের সেই মতাদর্শে মগজ ধোলাই করে ক্ষমতা দখল করে ত্রিপুরার বুক থেকে উনার নাম মুছে দেওয়ার সব চেষ্টাই করে। পরে আসছি...। 

8) শান্তি নিকেতন স্থাপনে রবীন্দ্রনাথ কে বিরাট অর্থসাহায্য করেন।

9) রবীন্দ্রনাথ এর মৃত্যুর একমাস আগে মহারাজ বীরবিক্রম তার সঙ্গে দেখা করে তাকে 'ভারত ভাস্কর' উপাধি তে ভূষিত করেন।

10) গোমতী নদীর তীর্থমুখে শিব মন্দির স্থাপন করেন।

রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে উনার কীর্তি। আজও উনার গড়ে তোলা রাস্তা ঘাট বাজারের উপরই সবাই নির্ভরশীল। সব জায়গা থেকে উনার নাম মুছে দেওয়ার শুধু কি এটাই কারণ ছিলো যে, উনি একজন প্রজা হিতৈষী ধর্মপ্রাণ হিন্দু রাজা ছিলেন?

ত্রিপুরার ইতিহাস থেকে শুরু করে আগরতলার রাজপ্রাসাদ উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, রাজন্য আমলের আস্তাবল ময়দান - সবকিছু থেকেই আস্তে আস্তে মুছে দেওয়া হয়েছে। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভূমিপুত্র জনজাতিদের নিজস্ব শিক্ষা সংস্কৃতি ভাষায় নিরুৎসাহ করে গড়ে তোলা হয়েছিল বাঙালি মুখাপেক্ষী। আবার এ থেকে জনজাতিদের মধ্যে জন্ম নেওয়া বাঙালি বিরোধী ক্ষোভ এবং এই পাহাড়ি বাঙালি সেন্টিমেন্টকে সুড়সুড়ি দিয়ে এরাই সুচারু ভাবে ব্যবহার করেছে ভোটের স্বার্থে। যাঁরা এসব করেছে, তাঁরা কারা..? কোথাকার লোক..? কোথায় ঠাঁই হতো..? বাস্তবটাকে মেনে নিতে এতো অনীহা কেন? 

যদিও এখন আগরতলা বিমান বন্দরের নাম মহারাজার নামে করা হয়েছে, জন্মদিনকে সরকারি ছুটি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তবুও আরো অনেক কিছু করতে হবে ...!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted