নোয়াখালীতে গান্ধীর ছাগলের কি হয়েছিল ?

নোয়াখালীতে গান্ধীর ছাগলের কি হয়েছিল ?

--------------------------------------------------

অধুনা বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান নোয়াখালীর একতরফা হিন্দু নিধনযজ্ঞ নিয়ে একেবারে চুপ বসে কখনোই থাকেনি । তারা সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগে বাড়ে বাড়েই কলম চালিয়েছে । 


আমার অনেক লেখাতে আগেও উল্লেখ করেছি যে, তাকিয়া ছাড়া ইসলামের অস্তিত্ব সম্ভব না । নোয়াখালীর সেদিনের ইতিহাস তুলে ধরতে বাঙালি মুসলমান এই 'তাকিয়া' ব্যবহার সুচারুভাবে করেছে । একতরফা হিন্দুনিধনকে ডিফেন্ড করতে তুলে এনেছে গান্ধীবুড়োর ছাগল চুরির অন্তরালের ইতিহাস । নরপশু কুলাঙ্গার গোলাম সরোয়ারকে বানিয়েছে মহাত্মা, যে কিনা অসাম্প্রদায়িক ছিল এবং নোয়াখালীতে নাকি বিহারের দাঙ্গায় নিপীড়িত মুসলমানের ঢল নেমেছিল আর সে কেবল তাদের রক্ষা করতে কিছুমাত্র সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল । যে ভূখণ্ডে ৮৪% মুসলমান, তাদের রক্ষা করতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা ১৬% সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুর সাথে সমতা বজায় রাখতে ! পাঠক, আপনারা হাসবেন না কাঁদবেন ? যাকগে, তাকিয়ার আশ্রয়ে পেশ করা ইতিহাসে থেমে থাকলে চলবেনা । আপনাদের সামনে আজকে তুলে ধরি ১৯৪৬ এর নোয়াখালীর একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধনযজ্ঞের নেপথ্য ইতিহাসের আরো কিছু তথ্য :

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর দাদা শরৎচন্দ্র বসু রক্তস্নাত সেদিনের নোয়াখালী ঘুরে এসে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন : " No Police help was given to the persons and families attacked though timely appeals for help were made." (Amrita Bazar Patrika-23-10-46 ) | ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি নোয়াখালীতে হিন্দুদের রক্ষার জন্য কেন্দ্র সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়ে লম্পট নেহরুকে চিঠি লেখেন । ওনার চিঠিতে লিখেছিলেন :

"যুদ্ধের সময় শত্রুর উপর ধ্বংসমূলক কার্যকলাপের কথা তবু বোঝা যায় । কিন্তু নিরপরাধ নিরস্ত্র মানুষের উপর এরকম সর্বাত্মক ধ্বংসলীলার কথা ভাবা যায় না । কেন্দ্রের কংগ্রেসী মন্ত্রীদের এই বলে বাংলার মন্ত্রিসভাকে সতর্ক করে দেওয়া উচিত যে তারা বাংলায় একটা অত্যন্ত বিপজ্জনক খেলা খেলছে যা অন্যান্য রাজ্যের মানুষদেরকেও উত্তেজিত করে তুলবে ।" (Amrita Bazar Patrika-18-10-46) | রাজ্যের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে কেন্দ্র নাক গলাবে না, এই অজুহাতে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির আবেদন খারিজ হলো আর এরই পূর্ণ সুযোগ নিলো বাংলার মুসলমান চালিত সরকার । নোয়াখালীর সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের রক্ষা করা তো দূরের থাক, নিধনযজ্ঞের তেরদিনের মাথাতেও তারা তাদের নিরাপত্তার কোনো আশ্বাস দিলো না । বনে জঙ্গলে প্রাণ বাঁচাতে লুকিয়ে থাকা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দুদের কোনো ত্রাণ দেওয়া হলোনা । এই সম্মন্ধে অমৃতবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে লেখা হলো :

" আজ দাঙ্গার তেরোদিন অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর এখনো নোয়াখালী জেলার লক্ষীপুর, রামগঞ্জ,রায়পুর, বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ থানার ১২০টি গ্রামের প্রায় ৯০ হাজার হিন্দু এবং ত্রিপুরা জেলার চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ থানার প্রায় ৭০ হাজার হিন্দু দুর্বৃত্তদের দ্বারা ঘেরাও হয়ে আছে । ঐ অঞ্চলের মানুষের উপর মৃত্যুর ছায়া দ্রুত নেমে আসছে । সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে এখনই ওখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো উচিত । কারণ ঐ মানুষগুলির বেশিরভাগের কপালেই গত কয়েকদিন কোনো খাবার জোটেনি । একমাত্র সৈন্যবাহিনীই পারে ওদের রক্ষা করতে ।" (Amrita Bazar Patrika-23-10-46 ) |

১৯৪৬ এর নোয়াখালীর যে সকল গ্রামগুলোতে একতরফা সংখ্যালঘু বাঙালি হিন্দু নিধন চলেছিল, এমন সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবার খুবই কম ছিল, যে পরিবারের কোনো মহিলা অপহৃত বা ধর্ষিত হয়নি । সেই সময় নোয়াখালীতে পাঠানো এক রিলিফ কমিটির সদস্য মিস মুরিয়াল লিস্টারের ৬ই নভেম্বর, ১৯৪৬ এর রিপোর্টে:

"দুর্দশা সবথেকে শোচনীয় ছিল নারীদের । এদের মধ্যে অনেকেই স্বচক্ষে আপন স্বামীকে নিহত হতে দেখেছে এবং তারপর বলপ্রয়োগে ধর্মান্তরিত হওয়ার পর স্বামীর হত্যাকারীদেরই কোনো একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে । নারীদের চোখে ছিল মৃতের চাহনি । সে চাহনি হতাশার অভিব্যক্তি নয় । কারণ হতাশারও একটা ক্রিয়া আছে । এ যেন সম্পূর্ণ মসীলিপ্ত অন্ধকার । গোমাংস ভক্ষণ ও ইসলামের প্রতি আনুগত্যের শপথ বহু লোকের উপর জোর করে চাপানো হয়েছিল । এবং তা না করলে মৃত্যুই ছিল দন্ড ।" (V.V.Nagarkar-Genesis) ||

কি বুঝছেন পাঠক, গান্ধীবুড়োর ছাগলের কি হয়েছিল ? সেই ছাগলের বংশধরেরাই কি অধুনা বাংলাদেশে ১৯৪৬ এর নোয়াখালীর একতরফা হিন্দু নিধনযজ্ঞকে ডিফেন্ড করার জন্য কলম ধরে ?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted