হেঁদুর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলদেশ !

হেঁদুর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলদেশ
-------------------------------------------------------
পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল তিরিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, লক্ষাধিক নারীর সম্রামের বিনিময়ে । পৃথিবীর ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ের (নয় মাস) সশস্ত্র সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে নতুন দেশ সৃষ্টি করার নজির আর বোধহয় নেই ।


স্বাধীনতাকামী জনতার উপর নৃশংস গণহত্যা শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ । পাকিস্তানি সেনার এই নির্মম মারণযজ্ঞে হাত মিলিয়েছিল আল বদর, আল সামস, রাজাকার ইত্যাদি পাকিস্তানপ্রেমী, ইসলামী মৌলবাদী বাঙালি । মূলত হিন্দু বাঙালীদের মৃতদেহের ওপর দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এল। পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনী যে হত্যালীলা চালায় তাতে বহু বাঙালি মুসলমান মারা গেলেও সুপরিকল্পিত ভাবে মূলতঃ হিন্দুদের হত্যা করা হয়। হামিদুর রহমান কমিশনের রিপোর্টে বিস্ফোরক তথ্যাদিগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান তথ্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ব পাকিস্তানি হিন্দুদের চিহ্নিত করে হত্যা করার জন্য লিখিত নির্দেশ। নাৎসীদের ইহুদী গণহত্যার পরে, এইরকম নৃশংস গণহত্যার ইতিহাস আর আছে কিনা সন্দেহ । বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালি মুসলমান ইসলামিস্টরা অগুনতি বাঙালি হিন্দুর রক্তে হাত রাঙিয়েছিল, অগুনতি বাঙালি হিন্দু নারীর ইজ্জত লুটেছিল তবু, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, এমনকি কপালে তিলক কাটা, মাথায় টিঁকিধারী বাঙালি ধর্মব্যবসায়ীরাও আজ পর্যন্ত এদের বিচার নিয়ে নীরব অথচ ওপার বাংলার বাঙালিরা প্রচুর সংখ্যায়, ঢাকার রাস্তায় কাঁপায় : 'একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার ' ! হুঙ্কারে ভীত '৭১ এর বাঙালি ইসলামিস্ট কুলাঙ্গাররা ট্রাইবুনালের সামনে সশরীরে না হাজির হয়ে লুকিয়ে থাকে ।

এই যুদ্ধপরাধীদের বিচার সারা পৃথিবীর জন্য ও বিশেষ করে দুই বাংলার বাঙালির জন্য নানা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এদের বিচারে বাধা সৃষ্টি করতে, ইসলামি মৌলবাদীরা ইউরােপে ও অন্য নানা দেশে, আইনী দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে । পাঠক, এখানে বিশেষ লক্ষণীয়,গণহত্যাকারীদের নীরব সমর্থকরা সক্রিয় এই পশ্চিমবাংলাতেও । এদের চোখ রাঙ্গানিতে কলকাতা ছাড়তে হয়েছে তসলিমা নাসরীনকে । এদের সহযোগীদের হুমকিতে আর বর্তমান পশ্চিমবাংলার সরকারের মদতে, বাঙালি হিন্দুর সার্বজনীন পুজা বন্ধ হয়ে যায় দেগঙ্গা, তেহট্টে। বাংলাদেশে জামাতের শীর্ষ নেতারা খুনের অপরাধে জেলে থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গে জামাত আদর্শিক সংগঠনরা বুক ফুলিয়ে রাজনীতিতে একেবারে সামনের সারিতে আর দলিত-মুসলিম ঐক্যের ফেরীওয়ালা কিছু বাঙালি হিন্দু উদ্বাস্তু তাদের সাথে হাত মিলিয়ে মিছিল-মিটিংও করে বটে ! এই জামাতিদেরই হাত ধরে মঞ্চে মঞ্চে উঠে এসেছে কমরেড আল-হজ্জ্ব রেজ্জাক মােল্লা। 'কলম' নামক দৈনিক পত্রিকাটি (একদা সম্পাদকঃ সুদীপ্ত সেন, কার্যকারী সম্পাঃ আহমেদ হাসান, সিইওঃ কুণাল ঘােষ) ইসলামি মৌলবাদী বার্তা পৌছে দেয় পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের ঘরে ঘরে ।

নুরেমবারগের ইহুদী গণহত্যা নিয়ে এপার বাংলার তাবড় তাবড় তথাকথিত সেক্যুলারিস্ট কলমচিরা প্রবন্ধ, নাটক, কবিতা লিখে ভরিয়ে ফেলেছে অথচ, প্রতিবেশী দেশের এত বৃহৎ একটা গণহত্যার ঐতিহাসিক বিচার নিয়ে কোন হেলদোল নেই এপার বাংলার সেকুলাঙ্গার বুদ্ধিজীবীদের ও রাজনৈতিক দলগুলোর । এরা ইরাক, প্যালেস্টাইন নিয়ে কবিতা লেখে, আবুঘারিব নিয়ে ছবি আঁকে কিন্তু কাঁটাতারের ঠিক পাশের গণহত্যাকারীদের বিচার নিয়ে এরা স্পিকটি নট ! পঞ্চাশ বছরের উপর এই সেকুলাঙ্গাররা ভূঁয়াে সেকুলারিজমের ঢাক বাজিয়ে যাচ্ছে আর তাই এপারের জামাতিরা সাহসে বুক বাজায় । বাংলাদেশের মুক্তমনা মানুষেরা এই জামাত ধরণের রাজনীতিকে দূর করতে দিনকে দিন আরো বেশি সচেষ্ট হচ্ছেন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি এক্টিভিস্টগণ এই ব্যাপারে নির্জীব, ক্লীব ।

মাঝে মাঝে ভাবি, এই অগুনতি লাশ হয়ে যাওয়া বাঙালি যারা বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের অতলে মিলিয়ে গেছে, তারা যদি কোনোদিন আবার ফিরে এসে, প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের 'মেঘে ঢাকা তারা' র বোনটির মত আর্তি জানায় : 'মা আমরা বাঁচতে চেয়েছিলাম......', এপারের বাঙালি জবাব দিতে পারবে তো ?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted