তোমরা কেন দেশ ছাড়লে ঠাকুমা ?
--------------------------------------
ওরা দেশ ত্যাগ করে এপার বাংলায় পালিয়ে এসেছিলো । কিন্তু কেন ? পাঠক, আপনাদের বলি শুনুন, আপনাদের কেউ যদি পারেন, তবে রেফারেন্স দিয়ে খণ্ডাবেন :
যে যোগেন মন্ডল নিজের পাকিস্তানি মন্ত্রীত্ব রাখতে বর্ণ-হিন্দু থেকে নমঃশুদ্র কাউকেই রেয়াত করেন নি, তাকেও পূর্ব-পাকিস্তানে নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে কলকাতায় চলে আসতে হলো । পাকিস্তানকে চরম হুঁশিয়ারী দিয়ে পদত্যাগ করলেন :'হিন্দুরা চিরকাল অত্যাচার সহ্য করবেনা, প্রত্যাঘাত তারা করবেই, এবং চরম প্রত্যাঘাত শুধু সময়ের অপেক্ষা ।' খানিকটা যেন মৃত্যুমুখী খুনির শেষ স্বীকারোক্তি ! দেশভাগের সাথে সাথেই আরবের মত পাকিস্তানের মুসলিম নেত্রীত্ব দেশকে কাফের মুক্ত করার প্রয়াসে নেমে পরলো । মুসলমানের উল্লাস আর অপরদিকে হিন্দুদের মুখে নেমে এলো অন্ধকারের কালো ছায়া । দেশভাগের আগে পূর্ব-পাকিস্তানের নমঃশুদ্র সমাজ প্রকৃত অর্থেই হিন্দুদের পিছিয়ে পরা এক অংশ ছিল, এতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তার থেকেও বড় সত্যি হলো পূর্ব-পাকিস্তানের মুসলমান সমাজ নমঃশুদ্রদের থেকেও পিছিয়ে ছিল । না না পাঠক আঁতকে উঠবেন না ! এটা কোনো সাম্প্রদায়িক মন্তব্য না, নিপাট সত্য, হ্যা মানতে কঠিন হলেও কঠিন সত্য । আপনাদের জ্ঞাতার্থে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরি, তার থেকে নিজেরাই সত্য-সন্ধান করে নেবেন আর তথ্যে ভুল থাকলে অতি অবশ্যই তা সামনে আনবেন । পরিসংখ্যান বলছে:
১.সেই সময়ে পূর্ব-পাকিস্তানে একজন মুসলমান পি এইচ ডি ছিল না, এখানে বলা বাহুল্য যে কলকাতা থেকে ঢাকায় সে সময়ে স্থান পরিবর্তন করে গেছিলেন ডাঃ শহীদুল্লাহ এবং কুদরত-ই-খুদা । অবশ্য খুঁজে পাওয়া যায় নীলিমা ইব্রাহিমকে যিনি জন্ম সুত্রে ছিলেন হিন্দু, অথচ সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গে নমঃশুদ্র পি এইচ ডি ছিলেন ফরিদপুরের ওরাকান্দী গ্রামের ভগবতী ঠাকুর ।
২.সেই সময়ের পূর্ববঙ্গে কোনো মুসলমান এম আর সি পি বা এফ আর সি এস ডাক্তার ছিলনা, অথচ পূর্ববঙ্গের নমঃশুদ্র সমাজে সেই সময়ের এম আর সি পি ডাক্তার ছিলেন খুলনার জ্ঞান মন্ডল ।
৩.ছিল না কোনো মুসলমান আই সি এস অফিসার । একমাত্র নমিনেটেড এই সি এস ছিলেন নূরনবী চৌধুরী যিনি যুদ্ধের সময় সামরিক অফিসার থাকার দৌলতে নমিনেটেড হয়েছিলেন কিন্তু পুরোদমে এই সি এস অফিসার ছিলেন নমঃশুদ্র খুলনার সুকুমার মল্লিক । ঠিক তেমনি মুসলমান সমাজের কোনো এই এফ এস অফিসার ছিলনা পূর্ববঙ্গে অথচ নমঃশুদ্র আই এফ এস ছিলেন ফরিদপুরের লক্ষীনারায়ন রায় ।
৪.তখনের পূর্ববঙ্গে কোনো মুসলিম ব্যারিস্টার ছিল না, ভাবলে অবাক হতে হয় ! স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো আইনি লড়াইতে তাহলে এদের অবদান কতটুকু ছিল ? অথচ নমঃশুদ্র ব্যারিস্টার ছিলেন ফরিদপুরের পি আর ঠাকুর, খুলনার শশিভূষণ মন্ডল, বরিশালের ভুবন মন্ডল ।
তাহলে কি দাঁড়ালো পাঠক ? দাঁড়ালো এই যে পূর্ববঙ্গের মুসলমান সমাজ সবদিক থেকেই প্রায় পিছিয়ে ছিল, কেবল ঈমানী জোশের জায়গা ছাড়া !
সে সময়ের পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববঙ্গে হিন্দু ছিল ৩০% কিন্তু সম্পদের ৮০% ছিল তাদের হাতে, এবং সেটা গা জোয়ারি করে পাওয়া নয় । ডাক্তারি, ওকালতি, শিক্ষকতা এ সকল পেশায় সকলেই প্রায় হিন্দু ছিলেন, এছাড়া ৯ টা কাপড় কল, চারটে দেশলাই ফ্যাক্টরি, ২ টা চিনির কল, ২ টা গ্লাস ফ্যাক্টরি,চা বাগান, চাল ও সর্ষের তেলের মিল অনেকগুলোই সকলি হিন্দুদের ছিল । পাকিস্তান হওয়ার সাথে সাথে হিন্দু কর্মচারিদেরপ্ষণ দেওয়া হলো ভারতে ট্রান্সফার নেওয়ার, আর বর্ধিষ্ণু হিন্দুরা জানমালের হুমকিতে আসতে আসতে ভূমি ত্যাগ শুরু করলো । দেশত্যাগী হিন্দুদের সমূহ সম্পত্তি, বানিজ্য মুসলমানরা দখল করলো । লুঠতরাজ আর সন্ত্রাস বাড়ালো মুসলমানরা, আর সংখ্যায় কম হিন্দুরা প্রতিরোধ না করে দলে দলে দেশত্যাগী হলো । কমতে কমতে হিন্দুরা প্রায় জনসংখ্যার ১৫% হয়ে দাঁড়ালো আর মুসলমানরা সকল কিছুর দখল নিতে শুরু করলো । এতে অবশ্য পূর্ববঙ্গের মুসলমান মানসে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা বা অনুতাপ হয়নি, কেননা হিন্দুশুন্য দেশই তাদের কাম্য ছিল, যেখানে দখলিকৃত সম্পত্তি জমিজমা আর ব্যবসায়, নিজেদের প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করা যায়.....
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................