সেকুলারিসীমের ছেনালি আর কতদিন ?
------------------------------------------------
আমাকে সেকুলারিসীম মারাতে আসবেন না। মুক্তচিন্তা, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সেকুলারিসীম অনেক মারিয়েছেন, এবারে থামুন ! সেকুলার, ধর্ম নিরপেক্ষ, মুক্ত চিন্তক আমিও হতে চাই, কিন্তু সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় পথ আগলে। খুব ছোটবেলায়, বাবাদের একান্নবর্তী পরিবারে দেখেছিলাম মা বিশাল রান্নাঘরটার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আর বাড়ির বাকি বৌ ঝি রা রান্নাঘরের ভেতরে কলকলিয়ে আড্ডা সহকারে রান্না করছে।
উঠোনের এককোনে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, মায়ের মামী শাশুড়ি যাকে আমি দিদি ডাকতাম, আমাকে জিজ্ঞেসা করেছিল : কিরে, এইখানে একলা কি করিস ? পাল্টা প্রশ্ন করলাম : জেঠিমারা রান্নাঘরে রান্না করছে, মা বাইরে কেন ? দিদি উত্তর দিল : 'তর মায়ে কাইস্থের মাইয়া, হের লিগা বাইরে' ! সেইদিন আমার খটকা লেগেছিল। এই কায়স্থ কেসটা কি ? কোথাও একটা গড়বড় আছে। ভীষণ রাগ হয়েছিল দিদির উপর, মনে হচ্ছিল হাতের সামনে যা পাই , তাই দিয়ে বারি মারি, কিন্তু সাহসে কুলায় নি। সেইদিন প্রথম একটা শিশুর মুক্ত চিন্তা ধাক্কা খেয়েছিল। তারপর বারবার, প্রতিবার আমার সেকুলারিসীম, মুক্তচিন্তা ধাক্কা খেয়েছে। এই ফেসবুকের জগতে এসে ধর্ম নিরপেক্ষতার রকমফের দেখে আমার সেকুলারিসীম হাঁসফাঁস করে। আমি মুক্ত চিন্তায় অনবরত ধর্মের নাগপাশ ছেঁড়ার লেখা লিখতে চাই, কিন্তু পারিনা। প্রতিবার লেখা শুরু করি, প্রতিবার একটা রামু, একটা ভোলা, একটা লংগদু, একটা নাসিরনগর আমাকে থামিয়ে দেয়. কল্পনা চাকমারা মাথায় হ্যামারিং করে। রাম-বাবরির দ্বন্দ, গোধরার উলঙ্গ ক্যাবারে আমার কলম খামচে ধরে, আমি প্রতিবার সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই।
এই উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ যত না গর্বের, তার থেকে অনেক বেশি যন্ত্রণার, অনেকগুন বেশি অভিশাপের। রক্ত লেগে আছে এই ভূমির আনাচে কানাচে। ছোটবেলা থেকে ভুল ইতিহাস মাথায় গেঁথে দিয়ে বেড়ে তোলা হচ্ছে এই ভূমির মানুষদের। কারণ কি ? কারণ হলো এই উপমহাদেশের বিকৃত মনস্কা রাজনীতিবিদদের সকল প্রকারের সম্পদ ভোগের লিপ্সা, যা পূরণ করতে গেলে মানুষের থেকে সত্য গোপন করতে হয়। আর এই এত রক্ত কেন এই উপমহাদেশে ? কারণ হলো প্রায় ৮০০ বছর আগে মধ্যযুগীয়, বর্বর পাষন্ড আরবীয় জানোয়ারদের এই ভূখণ্ডে তাদের বিষাক্ত থাবা বসানো। এই উপমহাদেশের পুরো ব্যালেন্সটাই এই পাষণ্ডদের আগমনে, তরবারির ডগায় ধর্মান্তকরণ, ধর্ষণ, নারীভোগ আর লুণ্ঠনে পাল্টে গেছে। এদেশে থাকবে বলে তারা আসেনি, তারা এসেছিল ইসলামকে ছড়িয়ে দিতে, তাই ব্রিটিশের মত ক্রীম লুটে নিয়ে পালিয়ে যায়নি এই উপমহাদেশ থেকে, তারা রয়ে গেছে আর দিনের পর দিন তাদের জান্তব ক্রিয়াকর্ম চালিয়েই চলেছে। এর নিত্য ভোগী আমরা এই ভূখণ্ডের বঙ্গ ভূমির বাঙালি। এদের আদর্শে ধর্মান্তরিত বৃহদাংশ কুলাঙ্গার বাঙালি মুসলমানদের জন্য আমার পূর্ব পুরুষদের, তাদের নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে দেশান্তরী হতে হয়েছিল। না জানি কত নিরীহ মানুষ মেরেছে, কত অসহায় নারীর ইজ্জত লুটেছে এই আরবীয় জ্বারজদের দল। না, না, আমার সেকুলারিসীম এদের জন্য নয়, আমি সাম্প্রদায়িক। বিহার, গুজরাট, বাবরি আমি ঘেন্না করি, আদিত্যনাথের মুখে আমার থুতু দিতে ইচ্ছে করে, কিন্তু এই আরবীয় জ্বারজ যারা একটা ছোট্ট মেয়ের যোনিতে ব্লেড দিয়ে কেটে তাকে ধর্ষণ করতে পারে, যেই মেয়ে নাকি এই আরবীয় জ্বারজকে জ্যাঠা বলে ডাকতো, তাদের জন্য আমার মুক্ত চিন্তা কাজ করেনা , ধর্ম নিরপেক্ষতা কাজ করেনা।
এই আরবীয় জ্বারজরাই ১৯৪৭ এ ইসলামের ফিকির তুলে অখন্ড ভারতকে টুকরো করেছিল। আমি খণ্ডিত ভারতের নাগরিক আজ। খণ্ডিত ভারতে জনসখ্যার বিন্যাস অনুযায়ী আরবীয় জ্বারজরা সংখ্যালঘু, তবে এরা কোনো ভূখণ্ডেই প্রকৃত অর্থে সংখ্যালঘু হতে পারেনা, কারণ এদের আদর্শ কোরানেই বলা আছে পৃথিবী দুভাগে বিভক্ত : মুসলমান এবং অমুসলমান। কথাগুলো খুব ক্রুহ শোনাচ্ছে তাই না, আর আমাকে চরম সাম্প্রদায়িক মনে হচ্ছে ফেসবুকের আপামর বাঙালির। দশ নেই অবশ্য কেননা বাঙালি হলো ইতিহাস বিস্মৃত এক কূপমণ্ডুক জাতি যারা আজ পর্যন্ত জাতি এবং ধর্ম আলাদা করতে পারলো না ! খণ্ডিত ভারতের বাংলা এই আরবীয় জ্বারজদের হাতে আবার আক্রান্ত হবে অদূরেই, এই আশংকাকে ফেলে দেবেন না, আর তার চরম মাসুল দেবে খণ্ডিত ভারতের বাঙালি হিন্দু, বাঙালি বৌদ্ধ আর বাঙালি খ্রিস্টান। কেন বললাম ? আদতেই আপনারা ইতিহাস বিস্মৃত মাইরি ! চলুন মনে করে দি :
পশ্চিমবাংলার কলকাতার মধ্যে আর একটা সমান্তরাল দেশ হলো খিদিরপুর-মেটিয়াবুরুজ-গার্ডেনরিচ। ২০১৬ সালের ৩০ শে এপ্রিল, পাকিস্তানের ডন পত্রিকার সাংবাদিক মালিহা আহমেদ সিদ্দিকিকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে রাজ্যের এখনকার মেয়র আর তখনের মন্ত্রী ও পোর্ট এরিয়ার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম বা ববি হাকিম পোর্ট এলাকাকে ‘মিনি পাকিস্তান’ বলে আখ্যায়িত করেছিল , ভুলে গেছেন ? কি গর্বটাই না ছিল সে উক্তিতে ! অবশ্যই মিনি পাকিস্তান বটে যেখানে আইনকানুন, ক্ষমতা সব আলাদা। মুসলিম অধ্যুষ্যিত এইসব এলাকায় অভিযান চালাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন পুলিশ অফিসার-কর্মীরা। ডক এলাকায় ১৯৮৪ সালে ১৮ ই মার্চ হোলির পরদিন ডিসি পোর্ট বিনোদ মেহেতা হত্যার ঘটনা এখনও মুখে মুখে ফেরে কলকাতাবাসীর। খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে অভিযান চালাতে ভয় পায় কলকাতা পুলিশ। মুসলিম অধ্যুষ্যিত এলাকায় পুলিশি অভিযান চালালে মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে ধ্বস নামতে পারে এই ভয়ে শাসক দলই এই সব এলাকায় পুলিশি অভিযান চালাতে দেয় না আর এর পূর্ণ ফায়দা লোটে আরবীয় জ্বারজরা। ২০১৭ সালের জুন মাস, বিনোদ বাবুর মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে অপহৃত হয়েছিল। গার্ডেনরিচের মেহর মঞ্জিল এলাকায় মাসির বাড়িতেই থাকতো ওই কিশোরী। জুন মাসের দশ তারিখেই বিনোদ বাবু জানতে পারেন যে মেটিয়াবুরুজ এলাকায় রয়েছে তাঁর মেয়ে। স্থানীয় এক যুবক মিন্টু এবং তার বাবা কোরবান আলি জোর করে আটকে রেখে দিয়েছে বিনোদবাবুর মেয়েকে। দীর্ঘদিন থানা কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় বিনোদবাবু লালবাজারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু সেখানেও কাজের কাজ কিছুই না হওয়ায় তিনি বিচারব্যবস্থার দারস্থ হন। অভিযুক্তদের নাম, ধাম এবং মোবাইল নম্বর জানা সত্ত্বেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে যায়নি মমতা প্রশাসনের পুলিশ। অভিযোগ শুনে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে আদালত। পুলিশের যুগ্ম কমিশনার(ক্রাইম)-এর নেতৃত্বে বিশেষ দল গঠন করে অভিযান চালিয়ে বিনোদবাবুর মেয়েকে উদ্ধারের নির্দেশ দিতে হয়েছিল বিচারপতি দেবাংশু বসাককে।
কোন বাস্তবের দুনিয়ায় বাস করছেন সুধীজন ? আমি তো বাস্তব এড়িয়ে যেতে পারবো না, তাই আমি সাম্প্রদায়িক, ইসলামোফোবিক ! আপনারা এপার বাংলার যে সকল সেকুলাঙ্গার ধর্ম নিরপেক্ষতা, মুক্তচিন্তা মারাচ্ছেন, কখনো ভেবেছেন মুক্ত চিন্তা বা ধর্মের প্রতি নিরপেক্ষতা কাদের জন্য ? যদি ভেবে থাকেন কোরানের অনুসারী এই আরবীয় জ্বারজদের জন্য, তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন, কেননা স্বর্গ বলে কিছু হয়না আর নিজভূমে পরবাসী হওয়ার পর ভাবার সময় পাবেন না.......
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................