ঈশ্বরের মন।

“ঈশ্বরের মন”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

‘ঈশ্বর’ এই তত্ব টা পুর্ন মাত্রায় সনাতনী তত্ব। পৃথিবীর অন্য কোনো দর্শনে “ঈশ্বর” কথাটা নেই। দুটি সিমেটিক ‘রিলিজিয়ন’ ‘একেশ্বরবাদী’, অর্থ্যাত ঈশ্বর এক , তার বেশী নয়। সনাতনী বৈদিক দর্শন সেই একই কথা বলে ‘একমেবাদ্বীতিয়ম’—তিনি এক যার দ্বিতীয় কেউ নেই। 

সিমেটিক রিলিজিয়নে ঈশ্বরের অনেক রুপ। তিনি কারো সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন, কোনো কোনো সময় ‘গ্যাব্রিয়েল’ নামে বক্তা পাঠান, আবার কেউ তার পুত্রকে পাঠান। বৈদিক দর্শনে ঈশ্বর নিজে আসেন, কোনো দুতিয়ালীতে তার মন নেই। 

বিজ্ঞানীরা এসব কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করেন না। তারা সৃষ্টির ব্যাখ্যা করেন ‘প্রত্যক্ষ প্রমানে’ র ওপরে নির্ভর করে। 

যতোই ভাবি, পড়ি না কেন, বৈদিক দর্শন এবং আধুনিক বিজ্ঞানে তফাৎ খুজে পাই না। মানুষের সমাজের কথা আর ঐশ্বরীয় তত্ব দুটি ভিন্ন বিষয়। একটি সমাজ বিজ্ঞান , অন্যটি আধ্যাত্মিক দর্শন। বৈদিক দর্শনে সেই আধ্যাত্মিক দর্শনের হাত ধরে সমাজের কথাও বলা হয়েছে। আধ্যাত্ম তত্ব তো মানুষের জন্য, আর মানুষ তো এক সামাজিক জীব। তাই সমাজের সমস্যা সমাধানের কথা আধ্যত্মিক দর্শনের ওপরে ভিত্তি করেই তৈরী।  

এই সৃষ্টিতে মানুষ নিজেকে সৃষ্টির অন্য সব কিছু থেকে আলাদা করে বাঁচতে পারে না। ছোট কথায়, সমস্ত গাছ কেটে ফেলুন, কি হবে, এই পৃথিবীতে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাবে। মানুষ ও শেষ হয়ে যাবে।  সৃষ্টিতে কিছু শক্তি আছে যাদের বৈদিক দর্শনে বলা হয় দেবতা। এরা কোনো কায়াধারী বিশেষ জীব নয়। গল্প কথায়, সিরিয়ালে যাদের দেখি, তারা এই সৃষ্টির বিশেষ বিশেষ শক্তির প্রতীক। হিন্দুরা সেই প্রতীকের আরাধনা করে। কিছু দেবতার উদাহরন হলো- বরুন= বৃষ্টি, পবন= বাতাস, অগ্নি= আগুন, এমনি আরো অনেক আছে। ইন্দ্র এদের অধিপতি। 

এই সৃষ্টিতে সব সময় সকলের অজান্তে সমস্ত প্রানী, উদ্ভিদ এবং প্রাকৃতিক শক্তির ( দেবতা) মধ্যে লেনা দেনা চলছে। একের অভাবে অন্য অপরিপুরক এবং সৃষ্টিতে আলোড়ন ঘটে, সৃষ্টিতে এক প্রলয় হয়। 
তাহলে, এই যদি সৃষ্টির মুল রহস্য হয়, তাহলে ঈশ্বর নামক কিছু একটার কথা এলো কোথা থেকে। বৈদিক দর্শন মুলত ‘একেশ্বরবাদী’। বলা হয় –“তিনি এক বরেন্য ভর্গ পুরুষ ( চৈতন্য), এই মহাবিশ্বে অবস্থান করেন এবং তাকে নিয়ন্ত্রিত করেন”। তিনি কি করেন? তার কাজ কি? “ঈশ্বরের কাজ আসলে ‘অনুঘটকের’ কাজ। দৈবী শক্তি ( প্রাকৃতিক শক্তি) এবং সৃষ্টির মধ্যে এক সংযোগ তৈরী করে এই সৃষ্টিকে রক্ষা করা।---- “ এই মহা বিশ্বে, মহাকাশে, মহাকাল মাঝে”—তিনি আছেন “বিশ্ব সাথে যোগে যেখায়”। 

বৈদিক দর্শন সেই “বিশ্ব চৈতন্যের” খোজ করেছে, বিজ্ঞানীরা ও সেই “ঈশ্বর নামক কোনো কিছু” র খোজ করে চলেছেন। ঈশ্বর নামক কোনো কিছু থাকলে তার একটা মনও থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। ---- “খেলিছো, এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে, প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলায়, নিরজনে প্রভু নিরজনে”। 

 তা এই খেলা খেলতে তো একটা মন লাগে? “ঈশ্বরের সন্ধানে বিজ্ঞানী” বইয়ে বৈজ্ঞানিক মনি ভৌমিক (মেদিনীপুরের ছেলে) এই ঈশ্বরেরই সন্ধান করেছেন। বিজ্ঞানীরা “ঈশ্বর কনা” নাম দিয়েছেন, আমাদের এই কলকাতার এক বৈজ্ঞানিকের আবিষ্কার করা এক “কনা” কে যার নাম “বোসন কনা”—সত্যেন্দ্র নাথ বসুর নামে। আইনষ্টাইন নিজে এই “ঈশরের মন” নিয়ে লিখেছেন। 
  

 

বিজ্ঞানীরা আজ নিশ্চিত যে এই মহাবিশ্বে এমন অনেক কিছু আছে তার সম্বন্ধে এখনো কোনো কিছু জানা বা বোঝা যায় নি। তার সন্ধান অনুমান করা গিয়েছে। যেমন “ কালো গহবর= Black Hole”. মহাবিশ্বের অনন্ত ছায়াপথ, তার মধ্যে কোটি কোটি গ্রহ নক্ষত্রের খোজ পাওয়া এবং হিসাব করা মানুষের অসাধ্য। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বে যত পদার্থ আছে তার মধ্যে অতি সামান্য অংশের খবর তারা রাখেন। এক বিরাট অংশের কাজ তো দূরে থাক তার খবর ও রাখেন না বা পাওয়া যায় নি। প্রথমে এলো অনু, তারপর এলো পরমানু, সেখানে বিরাজমান “নেগেটিভ শক্তি= ইলেকট্রন, অনেক ইলেকট্রনের মাঝে একটি প্রোটন (+ শক্তি)। এখন শুনছি ওই কনা গুলির মধ্যে নাকি “কোয়ার্টজ’ নামে তিনটি কনা থাকে, যারা নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী চলে ,অর্থ্যাত তাদের নিজস্ব চৈতন্য শক্তি আছে। 
এই যে পদার্থ বা ম্যাটার , যাকে বৈদিক ঋষীরা বলেছেন “ক্ষর পুরুষ” সেই ক্ষর পুরুষের গঠন অনুযায়ী প্রানী ভিন্ন ভিন্ন হয়, ভিন্ন গুনের হয়, কিন্তু ‘চৈতন্য শক্তি’ (অক্ষর পুরুষ) সেই একই থাকে। এও বলেছেন, “বিশ্ব চৈতন্য বা পরমাত্মা, এই ক্ষর পুরুষের আয়ত্তাধীনে ( অর্থ্যাত দেহ ধারী হয়ে) এসে (জীবাত্মা) ঘুরে বেড়ায়। 
সমস্যা হলো, এই বিশ্বে এই “ক্ষর পুরুষের” (ম্যাটার) পরিমান কতো তা জানা নেই। বিজ্ঞানীরা কি বলছেন?? 
  

এই যদি হয়, তাহলে আমরা এই ৫% সাধারন পদার্থের খবর রাখি, ২৫% ‘ভুতুড়ে পদার্থে’র খবর রাখি। বাকী ৭০% কে বিজ্ঞানীরা বলছেন “ভুতুড়ে শক্তি” = Dark Energy”. 

তাহলে এটা কি ধরে নেওয়া যায় যে, এই “ভুতুড়ে শক্তি”, এই বিশ্ব “চৈতন্য শক্তি” যাকে দেখা যায় না, বাক্য দিয়ে বলা যায় না, মন দিয়েও বোঝা যায় না --- তিনি “অবাঙ্গমনোসাগোচর” = বাক্য ও মনের অতীত , সেই পরমাত্মা বা ঈশ্বর। আর তার একটা মন আছে যা দিয়ে তিনি, অর্থ্যাত সেই বরেন্যভর্গ পুরুষ এই বিশ্ব চালান?????

যাকে মন বা বাক্য দিয়ে বোঝা যায় না, তাকে যদি বিভিন্ন ভাবে , বিভিন্ন অবয়বে (নিজের মনের মতো তৈরী করে) তার মুর্তি গড়ে পুজো করি ,তাহলে আমরা হিন্দুরা হয়ে গেলাম = পাগান, কাফের, মালাউন। তাদের যেখানে পারো সেখানে মারো যে ভাবে পারো। এটা কি সুবিচার হলো????????? 

“এখন এই “ঈশ্বর বা ঈশ্বরের মন” আছে, একথা বললে ‘গ্রাব্রিয়েলের দুত, জিহোবার হিংসুটে গড (I am a jealous GOD) বা “ঈশ্বরের পুত্রের” সমর্থকরা আমার দিকে তেড়ে আসবেন। কেউ কেউ বলবেন “ ধর্ম সমাজের জঞ্জাল”।  
*******

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted