মসজিদ আর মন্দির কিংবা আজান আর নামাবলীর কি কখনো সহাবস্থান সম্ভব?

পাঞ্জাবি ও জওহর কোট পরে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন ভারতের জনপ্রিয় উপস্থাপক মীর ওরফে মীর আফসার আলী। সঙ্গে লিখেছিলেন: "ধীরে ধীরে পুজোর মুডে ঢুকছে দেখো কে …”



ব্যস, তাতেই দেড় হাজার বছর ধরে নিপীড়িত নির্যাতিত ও ভারতে গরুর মাংস খেলে যাদের নাকি পিটিয়ে মেরে ফেলে সেই শান্তির ধর্মের লোকজন মীরকে পুজার মত শিরককে তুলে ধরার অভিযোগে কুৎসিত গালাগালিতে ভরিয়ে দিয়েছে!  বাদ যায়নি মীরের মা বাবাও। কেন মীর পুজা আসছে এরকম কিছুতে খুশি হবে এটাই শান্তির ধর্মের লোকজনের ক্ষোভ।

বিরাট কোহলি যখন ঈদে পাঞ্জাবি পরে ছবি দিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানায় তখন তাকে এভাবে আক্রান্ত হতে হয় না। অমিতাভ বা বলিউডের বড় কোন তারকা ঈদের পোজে শুভেচ্ছা জানালে তাকে কেউ আক্রান্ত করে না। কিন্তু মীরকে হতে হয়। নুসরাতকেও হতে হয়। মোহাম্মদ কাঈফ বা জহির খান ক্রিসমাসের টুপি পরে ছবি দিলে শান্তির ধর্মের লোকজনের জ্বলে!  এরাই আবার নিজেদেরকে নিগ্রহের শিকার দাবী করে। এদেরকে নাকি ভারতে ভালো চোখ দেখা হয় না। আমার প্রশ্ন,  তাদেরকে পৃথিবীর কোথায কোথায়় ভালো চোখে দেখা হয় সেটা বলুন! 

সারা পৃথিবীতে কেন শান্তির ছাওয়ালদের সঙ্গে সবার লাগে, কেন সবাই তাদেরকে মূল সংস্কৃতি সভ্যতার জন্য হুমকি মনে করে এই প্রশ্নের মধ্যেই আসল সমস্যাটা ধরা আছে। "মুসলিম ফোবিয়ার" জন্য দায়ী কারা সেটা ধরা না গেলে সমাধান আসবে না।  ডয়চে ভেলেতে সেদিন দেখালো জার্মানিতে শান্তির ধর্মের লোকদের নাকি কেউ দুচোক্ষে দেখতে পারে না। জার্মানরা মনে করে এরা জার্মানির সংস্কৃতিকে ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত করতে চায়। এজন্য ক্যামেরার সামনে শান্তির ধর্মের লোকজনের সেকি নিরহ করুণ চাহনি। আহারে ফোবিয়ার শিকার!  এত নিরহ এত লাজুক যারা তাদের কেউ দেখতে পারে না কেন?

জার্মানিতে আগে রাত বিরাতে নারীরা অবাধ যাতায়াত করত। কিন্তু অভিবাসী শান্তির ধর্মের লোকজন আসার পর তাদের হাতে ধর্ষণ বেড়ে যায়। জার্মানির পোশাক সংস্কৃতিকে প্রকাশ্যে সামালোচনা করতে থাকে।  এসব কারণে একদিন যাদের জার্মানরা অভ্যর্থনা করে দেশে ঢুকিয়ে ছিলো এখন তারাই এদেরকে আপদ মনে করছে।

মীরকে শান্তির ধর্মের লোকজনরা আক্রমণ করার পর মীর একটা অসাম্প্রদায়িক বার্তা ছড়ানো কবিতা পোস্ট করেছেন তার ফেইসবুক পেইজে।  কবিতাটা এরকম :

যে কয় মোরে *বেশ্যার পোলা 
তারে বুকেই জড়িয়ে ধরি 
*বেশ্যাও যে মায়ের জাত 
তারে সমান সজদা করি 
ধর্ম বিভেদ ভরাবে কি পেট 
শুধায় আপনজনে 
যাহা মসজিদ, তাহাই মন্দির 
ভক্তি রবে মনে 
আজানের ডাকে নামাবলী পরি 
আবেগ মানবরূপী
যে শিরে বরিষে গঙ্গার জল 
সেই মাথাই ঢাকে টুপি ॥ 

এরকম কবিতা শুনতে যতই ভালো লাগুল এগুলো আসলে অন্তঃসারশূন্য কথাবার্তা মাত্র!  সম্প্রদায়কে রেখে সাম্প্রদায়িকতা থেকে রেহাই পাওয়ার স্বপ্ন জেগে ঘুমানোর মত। মসজিদ আর মন্দির কিংবা আজান আর নামাবলীর কি কখনো সহাবস্থান সম্ভব?  বার্সেলোনাতে নাম লিখিয়ে আপনি কি বলতে পারবেন বার্সেলোনা যা রিয়েল মাদ্রিদও তা! আল্লাহ ভগবান এসব কখনোই এক জিনিস নয়। কখনোই ধর্মগুলোর পরস্পর সহিষ্ণুতা সম্ভব নয়। এরকম অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা কাজী নজরুল ইসলাম করেছিল। কিন্তু কোন ফল আসেনি। মীরকে যারা আক্রমণ করেছে সেটা ধর্মীয় কারণেই করেছে। মীরের ধর্মই এই শিক্ষা দেয়। মীর নিজে যে ধর্মটাকে মনে করে সেটা তার একান্তই নিজস্ব। বলতে গেলে সেটা কোন ধর্মই না। কারণ কোন দোকানদার বলবে না যে সব দোকানই ভালো যেটা খুশি সেটা থেকে সদাই করুন। কাজেই মীরদের মত মানুষরা আরো অপমানিত হবেন। আরো লাঞ্ছিত হবেন। ...

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted