একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ও দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থক হওয়া যায়।

একই সঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে  ও দ্বিজাতিতত্ত্বের সমর্থক হওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আর দ্বিজাতিতত্ত্বের সঙ্গে কোন সাংঘর্ষিকতা নেই।  কিন্তু দ্বিজাতিতত্ত্ব ছাড়া পাকিস্তান সমর্থনের কোন সুযোগ নাই। 

রাষ্ট্র আর জন্মভূমি এক কথা নয়। রাষ্ট্র হচ্ছে রাজনৈতিক পরিচয়। এই পরিচয় আমি গ্রহণ করব কিনা তার সঙ্গে আমার জন্মভূমিকে ভালোবাসার কোন সম্পর্ক নাই। খান আতাউর রহমান বাংলাদেশ হোক সেটা চাননি। কিন্তু তিনি তার জন্মভূমিকে দরদ দিয়ে ভালোবেসেছিলেন বলেই "হায়রে আমার মন মাতানো দেশ" গান সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। "মোরা একটি ফুলকে বাঁচতে যুদ্ধ করি" গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে গেয়ে আপেল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সৈনিক। কিন্তু ৭৫ এর তার ভূমিকা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে দ্বিজাতিতত্ত্বের আদর্শে মোড়া "বাংলাদেশ" তারা চেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে চিরকাল দুটো স্রোত ছিলো। একটা দ্বিজাতিতত্ত্বের আদর্শের, অন্যটি সেক্যুলার আদর্শের। ঘাপলা হচ্ছে সেই সেক্যুলার অংশটি যে দ্বিজাতিতত্ত্বে অবিশ্বাস করত তার কোন প্রমাণ নেই। কারণ মুসলিম লীগের সেক্যুলার অংশটির নেতৃত্ব দিতেন আবুল হাশিম। তারা মনে করতেন মুসলমানদের নিজস্ব দেশ হলে সেখানে হিন্দুদেরও আমরা সমান অধিকার দিবো। কিন্তু খাজা নাজিমুদ্দিনরা মনে করতেন তাদের যুদ্ধ হিন্দুদের বিরুদ্ধে।

এই দুরকম স্রোত মিলেই মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ গঠিত হয়েছিল। সত্যি বলতে গেলে এই দুই স্রোত সাধারণ জনমানুষের মধ্যেও কাজ করত। এজন্য আমি সব সময় বলি, ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে যারা মারা গেছেন এদেশের বুদ্ধিজীবী লেখক শিল্পী তারা সবাই ভাগ্যবান!  না হলে এদের কতজন বাংলাদেশ বিরোধী হতেন বলা মুশকিল। আর তাদেরকে ঢালাওভাবে "রাজাকার" বলে দেয়া যেত। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী আর বাংলাদেশের বিরোধিতা কিন্তু এক জিনিস নয়। যুদ্ধাপরাধীরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। কিন্তু অখণ্ড পাকিস্তান যারা চেয়েছে সেটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান। আগেই বলেছি বাংলাদেশ যারা চেয়েছে তাদের মধ্যে দ্বিজাতিতত্ত্ব বিশ্বাসীরা ছিলো। তাদের রাজনীতি বলছিল পাকিস্তানের আদর্শে বাংলাদেশ হলে সমস্যা কোথায়? তারা তখন দ্বিজাতিতত্ত্বের অপর পক্ষের শত্রুতে পরিণত হলো। কারণ অপর অংশ ভাবত পাকিস্তান অটুট থাকলে বাঙালি মুসলমানরা একদিন ঠিকই রাজনৈতিক ন্যায্য হিস্যা বুঝে পাবেই ...।

এই কারণে বাংলাদেশের কোন সত্যিকারের সেক্যুলার অংশ নেই। যাদেরকে সেক্যুলার দাগানো হয়েছে তারা আসলে মুসলিম লীগের আবুল হাশিম। অপজিশন খাজা নাজিমুদ্দিনরা। এই দুই শিবিরেই বিভক্ত বাংলাদেশ ...।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted