পাকিস্তানি সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারস্টার হিন্দু-শবনম; প্রতিদানে পেয়েছিলেন গণধর্ষণ।

পাকিস্তানি সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারস্টার হিন্দু-শবনম; প্রতিদানে পেয়েছিলেন গণধর্ষণ।

পাকিস্তানের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ঝর্ণা বসাক- যিনি 'শবনম' নামে পরিচিত ছিলেন। শবনম শব্দের অর্থ ফুলের উপর ঝরে পড়া শিশির বিন্দু। নব্বই দশকের শেষের দিকে মারাত্মক মানসিক আঘাতপ্রাপ্তির কারণে,তিনি পাকিস্তান ছেড়ে তার নিজের জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। ১৯৭৮ সালের ১৩ই মে লাহোরের গুলবার্গে শবনমের বাড়িতে পাঁচজন সশস্ত্র লোক ডাকাতি করতে ঢোকে। জোর করে এক লাখ নগদ, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য গৃহস্থালীর জিনিসপত্র নিয়ে যায় এবং ঐ পাঁচ ডাকাত মিলে শবনমকে তার স্বামী রবীন ঘোষ এবং তাদের একমাত্র ছেলে রনি ঘোষের সামনে গণধর্ষণ করেছিল।

সেই মামলার সাত আসামির মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তি মোহাম্মদ ফারুক বান্দিয়াল, ওয়াসিম ইয়াকুব ভাট, জামিল আহমদ, তাহির তানভীর, জামশেদ আকবর শাহী, আগা আকিল আহমদ ও মোহাম্মদ মোজাফফর অন্তর্ভুক্ত ছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি দণ্ডবিধির ৪১২ ধারায় বিশেষ সামরিক আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। দোষী সাব্যস্ত ডাকাত তথা ধর্ষণকারীরা ছিল প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য। তারা গণধর্ষণ হিসেবে মামলাটি নথিভুক্ত না করতে স্থানীয় পুলিশকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিল। ডাকাতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছিল। আগা আকিল আহমদকে দশ বছরের কারাদণ্ড এবং মোহাম্মদ মোজাফফর ১৯৭৯ সালের অক্টোবরে খালাস দেওয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ধর্ষণকারীদের ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য শবনম পরিবারের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল। লাহোর সিনেমার সুপারস্টার শবনম তখন প্রাণ বাঁচাতে সপরিবারে লন্ডন চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন।

ধর্ষক ফারুক বান্দিয়াল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের খুশাব জেলার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। বিগত ২০১৮ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পূর্বে ফারুক বান্দিয়াল সেনা সমর্থিত ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক ইনসাফ (পিটিআই) পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শবনমের বাড়িতে ডাকাতি ও গণধর্ষণে ফারুক বন্দিয়ালের জড়িত থাকার সংবাদটি- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

শবনম ১৯৪৬ সালে ১৭ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর তিনি স্বনামধন্য সুরকার রবীন ঘোষের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
১৯৬২ সালে উর্দু 'চান্দা' সিনেমার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানে তারকাখ্যাতি অর্জন করেন।পরবর্তী বছরে মুক্তিপ্রাপ্ত 'তালাশ' সিনেমাটি ঐ সময়ের সর্বাপেক্ষা ব্যবসা সফল ছবির মর্যাদা লাভ করে।  অনন্যসাধারণ অভিনয়শৈলীর মধ্য দিয়ে শবনম পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হিসেবে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নিয়ে দিলেন। পাকিস্তানে তিনিই একমাত্র চলচ্চিত্র অভিনেত্রী- যিনি ১৯৬০-এর দশক থেকে ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত একটানা তিনটি দশক ধারাবাহিক ও সফলভাবে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করে, অগণিত দর্শক-শ্রোতার হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।

শবনম ১৩ বার সম্মানসূচক নিগার পুরস্কার প্রাপ্তির পাশাপাশি, তিনবার পাকিস্তানের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী নির্বাচিত হন। বাংলাদেশে ফিরে আসার পর ১৯৯৯ সালে তিনি 'আম্মাজান' চলচ্চিত্রে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। শবনমের পরিনত বয়সের এই সিনেমাটিও ছিল যথেষ্ট ব্যবসা-সফল।

ঝর্ণা বসাক (শবনম) ২০১৬ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি
ঢাকায় পরলোকগমন করেন।

কৃত্তিবাস ওঝা
০৫/০৯/২০২০খ্রিঃ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted