মুসলমান নিজ দেশে অবিচার, লাঞ্ছনা, অভাব, শক্তিমানের নিষ্পেশন, দারিদ্র প্রভৃতি কারণে জর্জরিত হয়ে নিরাপত্তার আশায়, বলতে গেলে কই মাছের মতো কানে হেঁটে হেঁটে ইউরোপে যায়। সে অনেক কষ্টের ইতিহাস। কিন্তু ইরোপে ঢুকে তাদের কালচার, সেকুলার জীবনদৃষ্টি, তারা গ্রহণ করতে পারে না। বিনাশ্রমে পাওয়া সরকারি ভাতাকে তারা আল্লাহর দান বলে মনে করে গ্রহণ করে। প্রতিমাসে অনুদানের টাকাটা হাতে পাওয়ার পর প্রায় সকলেই ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলে আল্লাহর প্রশংসা করে। রেজেক দানের মালিক আল্লাহ, এটাই ইসলামের শিক্ষা। বিনাশ্রমে খাওয়া-পরার নিশ্চয়তা পেয়ে তাদের অনেকে তাই জীবনটাকে ইসলামের রাহে ব্যয় করাতে সচেষ্ট হয়। মসজিদ আর ইসলামি সেন্টারে গিয়ে তাঁরা প্রার্থনার পাশাপাশি বুদ্ধি পরামর্শ করে, কি করে কাফেরের দেশটিকে আল্লাহর দেশ বানানো যায়। দারুল হারবকে দারুল ইসলাম।
ইউরোপিয়ানরা নিজেদের ধর্মগ্রন্থই পড়ে না। ইসলাম কোরান-হাদিস নিয়েও তাদের মাথাব্যথা ছিল না। কিন্তু তাদের সেকুলার কালচারে ইসলামের অব্যাহত ঢুকে পড়ার প্রবণতায় আশংকিত হয়ে তারা এখন যথারীতি কোরান-হাদিস পড়ছে। বৌদ্ধ-হিন্দু নিয়ে ইউরোপের সমস্যা হয় না, কিন্তু ইসলাম যেহেতু প্রচারে মরিয়া একটি আগ্রাসী বিশ্বাস, কাফেরদের মুসলমান বানানো তাদের দায়িত্ব, তাই তারা ইসলাম নিয়ে শংকিত। ইসলামকে তারা বর্বর মতবাদ বলে, যাতে ভিন্ন মতের কোনো স্থান নেই। শুধু মুক্তচিন্তা আর বিজ্ঞানই নয়, শিল্প-সাহিত্য-চিত্রকলা সব কিছুর দুশমন ইসলাম। ইসলামে যেটুকু শান্তি সেটুকু তারা প্রচার করে, কিন্তু ইসলামবিরোধী সেকুলাররা কোরান-হাদিসের জিহাদ ও ঘৃণার আয়াত বা বাণীগুলো শিখে ফেলেছে। কোরান যে মুসলমান ছাড়া অন্য সবাইকে নরকি বলে, কাফের বলে, জঘন্য বলে, তা তারা জানে। ইমাম মাহাদি এসে কী করে ঘোড়ায় চড়ে কাফের কাটবে, সে বর্ণনা শুনে তারা হাসে বটে, তবে মুসলমানদের দারুণ অবজ্ঞা করে। শি জিন পিং ইসলাম ধর্মকে ‘মানসিক রোগ’ মনে করে সেখানকার মুসলমানদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে আঁটকে ‘রোগমুক্তি’-র প্র্যোগ্রাম নিলেও গণতান্ত্রিক ইউরোপের সে দায় বা সুযোগ কোনটাই নেই। তাই মুসলমানদের বিরুদ্ধে পথে না নেমে তারা আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।
মুসলমানের আরো অসুবিধা হচ্ছে তাঁরা নবি করিমের সমস্ত হাদিসকেই বিজ্ঞান মনে করে। মেরাজের কথা বাদই দিলাম, তারা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে একটা হাদিসের বরাতে ডাহা মিথ্যা কথা বলে বেড়াচ্ছে। মিথ্যাটা পরে বলছি, আগে হাদিসটি বলি।
হাদিসটির বর্ণনাকারী, হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন কাফেররা নবির নবুয়তি পরীক্ষার জন্য গগনে উদিত পূর্ণিমার চাঁদটিকে দ্বিখণ্ডিত করতে বলল। নবি তখন আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন, আর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়ে অর্ধেক পড়ল আবু কুবাইল পর্বতে, অন্য অর্ধেক পাশের কাইকুয়ান পর্বতে (দালায়েলুন নবুওয়াতি)। আর এই হাদিসের উপর ভিত্তি করে প্রায় ৫০ বছরের ডাহা মিথ্যাচার হল। চাঁদে যেয়ে নেইল আর্ম স্ট্রং চাঁদের মাঝখানে ফাঁড়া দাগ দেখে মুসলমান হয়ে গেছে।
ইউরোপের লোকেরা সবিস্ময়ে ভাবে, এত বড় মিথ্যাচার মুসলমান কী করে করে? তারা কি জানে না চাঁদ পৃথিবীর আট ভাগের এক ভাগ? জানে না এটি কয়েকটি মহাদেশের সমান? নবি আরবের কাফেরের চোখের সামনে এটা কেমনে দু' ভাগ করে কেবল আরবের দুটি পাহাড়ে ফেলে? চাঁদ কি একটা ছোট্ট
রুটি? একটি গ্রহাণুর পতনে, দুনিয়ায় যে বিপর্যয় এসেছিল তার পরিণতিতে শেষ হয়ে যায় মহাকায় ডাইনোসারসহ বড় বড় প্রাণী। আর চাঁদ পড়লে তো নবির সময়ই পুরা জগত ধ্বংস হতো। পূর্ণিমার চাঁদ খসে পড়াটা কি শুধু ইসলামের নবি, আর তাঁর পাশে দণ্ডয়মান কিছু কাফেরের দেখার বিষয় ?
পাশ্চত্যের মানুষ এত বড় মিথ্যাচারে অবাক হলেও এটিকে অনাকাঙ্খিত ভাবেনা। কারণ ইসলাম স্টাডি করায় তারা জেনে গেছে ইসলামে তাকিয়াবাজি অনুমোদিত। ইসলামের প্রচারের স্বার্থে মুসলমান মিথ্যা গালগল্প বলতেই পারে, যার নাম তাকিয়াবাজি। আর এই তাকিয়াবাজি ধরা পড়ায়, কোরানের প্রতি আগে যে সমিহটা ছিল, তা পাশ্চাত্য মানস হতে উঠে গেছে। পুরা কোরানটাকে নবির বানানো একটা মিথ্যাচার মনে করে তারা। আর সে জন্যই তা তারা দলবদ্ধভাবে পুড়াচ্ছে। মজা করে ফুটবলও খেলছে কোরানকে বল করে। এই নব রাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় এলে মুসলমানের কি অবস্থা হবে, তা কি ভাবার সময় আসে নাই ?
মুসলমানদের একটা মূর্খ আক্রমনাত্মক জাতি মনে করে ইউরোপের নব্য জাতীয়তাবাদী শক্তি।
মুসলমানের বিরুদ্ধে এখন যে ঘৃণা মাথা চড়া দিয়ে উঠছে, তা ইউরোপের ধর্মোন্মাদ কালে ইহুদির বিরুদ্ধে ঘৃণার মতো। মুসলমানের কাছে মার খেয়ে আরব পেনিনসুলার ইহুদিরা ইউরোপ চলে যায়। ইউরোপ ছিল তাদের জন্য অধিকতর নিরাপদ। কেননা, খ্রিস্টান আর ইহুদি তখন মুসলমানের কমন শত্রু। কিন্তু চিন্তাচেতনায় অগ্রসর ইহুদিরা যখন ব্যবসাবানিজ্যে জেঁকে বসে, তখন চলে আসে বিদ্বেষ। তাদের নবি যিশুকে ইহুদিরাই তো ক্রুশবিদ্ধ করিয়েছিল। সেই বিদ্বেষ চরম রূপ নেয় হিটলারের নিধনযজ্ঞে।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেকুলার ইউরোপে, এই বিদ্ধস্ত জাতির মাথা তুলে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগেনি। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার, ব্যবসার কৌশল, ইউরো-আমেরিকায় জ্ঞান ও অর্থের বাজারে একচ্ছত্র নেতৃত্ব তাদের আজ বিশ্বশক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। ইহুদি এখন ইউরোপের বিদ্বেষের পাত্রতো নয়ই, বরং এ্যাসেট, বন্ধু।
ইঁহুদি ধর্মপ্রচারে নিজ সম্প্রদায়ের ইঁদুর-বৃদ্ধি বিশ্বাস করে না। তাদের নিজ সম্প্রদায়ে আছে সংহতি, শিক্ষা ও পরষ্পরকে এগিয়ে নেওয়ার প্রবণতা। আর মুসলামান নিজসংখ্যার ইঁদুর-বৃদ্ধি ঘটিয়ে, নিজেরা কামড়াকামড়ি করে মরছে। বিজ্ঞান নয়, ধর্ম এদের চর্চার বিষয়। ধর্ম এদের ব্যাপক জনগণের একমাত্র জীবিকাও। এক পীর তাই আরেক পীরকে কাফের বলে, এক গোষ্ঠি তাই আরেক গোষ্ঠিকে হত্যা করে। ইহুদি শিল্পী যেখানে গানেও নোবেল জিতছে, মুসলমান সেখানে গান হারাম ফতোয়া দিয়েই চলেছে। আশুরার দিনে গান প্রচারের অপরাধে বাগদাদে এখনো টিভি সেন্টার আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বনন্দিত সুরকার ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতি মিউজিয়াম আমরা ভেঙে দিতে দেখলাম এদেশেই, মাদ্রাসা ছাত্রদের। এরা বিশ্বনন্দিত লালনের ভাষ্কর্য ভাঙে, বুবিয়ান, সিরিয়ার পুরাকীর্তি ভাঙে। এগুলো বিশ্ববাসী দেখে না?
এ অবস্থায় চীনের মতো, মিয়ানমারের মতো, আগামীতে ভারত থেকে, ইউরোপ থেকে মুসলমান যে ঘৃণার প্লেগে ধ্বংস হয়ে যাবে, এ আশংকা উড়িয়ে দেওয়া যায় কি ? ০৪.০৯.২০২০
লিখেছেন Bhuiyan Shafiqul Islam
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................