কয়েকটা কথা বলি, ধর্ষণের একটা প্রাক্টিস আছে। এই প্রাক্টিস আমাদের ইন্টেলেকচুয়ালরাই সর্বপ্রথম গোপন করেছিলেন। এটা সমাজে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার হয়। পাকিস্তান কায়েম করতে প্রচুর ধর্ষণের দরকার ছিলো যাতে হিন্দুরা ভয় পায়। নোয়াখালী দাঙ্গার পর এদেশী একজন নেতা (তার নাম আমি নিশ্চিত নই বলে উল্লেখ করলাম না) বলেছিলেন হিন্দু নারীরা সুন্দরী হয় বলেই একটু বেশি ধর্ষণের শিকার হয়েছে…। যাক, এ বিষয়ে আরো কথা বলার আগে এই ধর্ষণের আগুনে যারা ইসলামের আলু পোড়া দিয়ে খেতে চাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটু বলে নেই, ভাই, ইসলামে ধর্ষণের কোন শাস্তির কথা বলা নাই, আছে ‘জেনার’ শাস্তির কথা। জেনা মানে বুঝেন? জেনা হচ্ছে নারী পুরুষ যখন পরস্পরের সম্মতিতে যৌন কাজ করে বিবাহবর্হিভূতভাবে ইসলামে তাকে ‘জেনা’ বলেছে। এর শাস্তি হচ্ছে পাথর ছুড়ে হত্যা করা। পক্ষান্তরে কোন নারী যদি কারোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনে তাহলে ইসলামের বিধান হচ্ছে নারীটিকে অবশ্যই ধর্ষণ দেখেছে এমন চারজন সাক্ষি এনে হাজির করতে হবে(কুরআন: ২৪:৪)! পৃথিবীতে সাক্ষি রেখে কেউ ধর্ষণ করে না। এ জন্য ইসলামী শরীয়া শাসিত দেশগুলোতে একটিও ধর্ষণের ঘটনা আপনি শুনতে পান না! তাই বাংলাদেশে শরীয়া আইন থাকলে ধর্ষণ বন্ধ হত বলে যা বলছেন তা আপনার অজ্ঞানতা। যেসব হুজুর মিটিং মিছিল করে এই ধর্ষণের মহামারীর আগুনে আলু পোড়া দিয়ে খেতে চাইছেন তারা ইসলামী শাসনই ধর্ষণ রোধ করতে পারে বলে আসলে বলতে চাইছে নারীদের তারা ঘরের দাসী করে রাখবেন কাজেই ধর্ষণও হবে না। মানে নারীর ভূমিকা হচ্ছে বাচ্চা পয়দা করা ও স্বামীর সেবা করা।
জোব্বা আর দাড়িঅলারা বিগত তিরিশ চল্লিশ বছর ধরে ওয়াজ করে করে নারীদের প্রতি একটা বিদ্বেষমূলক জনমনোভাব তৈরি করে দিয়েছে। সমস্ত পাপের কারণ হচ্ছে নারী। নারীদের বেপর্দা চলাফেরা যু্বকদের দৃষ্টি সংযত রাখাই দায়। সমাজে ধর্ষণের জন্য মূলত বেপর্দা নারী দায়ী… ইত্যাদি। এইসব ওয়াজীদের বছরব্যাপী মাহফিলের পিছনে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, গুন্ডার দল, রাজনৈতিক ক্যাডার, এমপি মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতা থাকে। ধর্ষণ করে পার পেয়ে যেতে রাজনৈতিক সংযোগ দরকার। সাধারণত সরকারী দলের লোকজনই ধর্ষণ করে ও স্থানীয় সালিশ করে ধর্ষণের ঘটনাগুলোর মিমাংসা করে থাকে। কাজেই ধর্ষণের পিছনে ধর্ম ও রাজনীতি বড় একটা ভূমিকা রাখে। কোন দেশের সরকারকে যখন জবাবদেহীতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় না, শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি না থাকে তখন সেই সরকারী দলের লোকজনের জনগণের বিরাগভাজন হবার কোন ভয় থাকে না। বর্তমান বাংলাদেশের লাগামহীন দূর্নীতি ও ধর্ষণের ঘটনা এ কারণেই বাড়ছে। সঙ্গে জোব্বাঅলাদের নারীর প্রতি বিদ্বেষ ঘৃণা তো ক্রীড়ণক হয়ে কাজ করেই…।
দেশেই পাহাড়ী আদিবাসীদের মধ্যে যৌন নিপীড়ন ধর্ষণ অনেক কম। তাদের পোশাকগুলো আমাদের চোখে ‘আব্রুহীন’! বুকে ওড়না না দিলে আমাদের দিলের মধ্যে লালা ঝরে! কিন্তু পাহাড়ী যুবক যুবতী নারী পুরুষ কত সাবলীলভাবে একসঙ্গে কাজ করছে। টুরিস্ট বাঙালী (হোক সে মুসলমান কিংবা হিন্দু) পুরুষের জুলজুল চোখে পাহাড়ী নারীদের দিকে তাকানো কি সাংস্কৃতিক দৈনতা? এর সঙ্গে ইসলামের মত একটি ধর্ম যোগ হলে পরিস্থিতি খুবই জঘন্য হয়ে উঠে…।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে উলঙ্গ করে নির্যাতনের ঘটনায় সংবেদনশীল যে কোন মানুষই মর্মাহত হয়েছেন। অথচ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ‘নোয়াখালী দাঙ্গা’ নামে একতরফা মুসলিম লীগের ক্যাডারদের হাতে হিন্দু নারীদের ধর্ষণের ঘটনাগুলো আমাদের সাহিত্য শিল্পে স্থান পায়নি। একইভাবে ৯০-এর বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর ঘটা ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জ্বা’ উপন্যাসকে বাড়াবাড়ি, বিজেপির টাকা খেয়ে বই লিখেছে ইত্যাদি বলে ঘটনাকে বুদ্ধিভিত্তিক লেবেলে অস্বীকার করা কি আজকের ধর্ষণের বাংলাদেশ নয়? অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়ে আত্মসমালোচনা থেকেই প্রজন্ম শিক্ষা নিবে। নোয়াখালীর ঘটনা বান্দরবান কিংবা খাগড়াছড়ির কোন আদিবাসী নারীর উপর ঘটলে এখন যতখানি তোলপাড় হচ্ছে ততখানি হত না সেটা আমরা অস্বীকার করতে পারব কি? জার্মানরা ইহুদী নিধনকে স্বীকৃতি দিয়েই মানবিক হয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা হচ্ছে জাতির মাথা। মাছের পঁচন শুরু হয় মাথা থেকে। মাছ তখন বাঁচে না। এই জাতির পঁচন শুরু সেই ৪৬ সালের নোয়াখালী দাঙ্গা থেকে। হিন্দু নারীদের গণিমতের মাল, ৫ হাজার হিন্দুকে জবাই আর ততধিক হিন্দুকে জোর করে ইসলাম গ্রহণের ইতিহাস ‘বাঙালী মুসলমান বুদ্ধিজীবীরা’ তাদের শিল্পে সাহিত্যে স্থান দেননি। এটা ধর্ষণ নিপীড়নের প্রাক্টিসের প্রতি নিরব সম্মতি…।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................