গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এ ভারতের উপরে পাকিস্তান, পাকিস্তানের উপরে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের উপরে নেপাল। ভারতের জন্য নিশ্চয়ই এটি কলঙ্কজনক পরিচিতি। এই কলঙ্কের জন্য কংগ্রেস দায়ী করছে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে। ভাবটা এমন- কংগ্রেসের দীর্ঘ শাসনামলে যেন আমেরিকা-জাপানের সমপর্যায়ে ছিল ভারত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কংগ্রেস শাসনামলে ভারতের চরম দারিদ্র্য ও সামাজিক উন্নয়ন চিত্র, আজকের থেকেও অনেক করুণ ছিল এবং ভারতের এই চরম দারিদ্র্য ও অনুন্নয়নের জন্য দায়ী কংগ্রেসের ভ্রান্তনীতি।
আশির দশকে আমি লক্ষ্য করি,বাংলাদেশে হিন্দুদের মধ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বাংলাদেশের হিন্দুদের কাছে ইন্দিরা গান্ধী দেবী দুর্গা, রাজীব গান্ধী যেন যুবক-দেবতা কার্তিক। আমার বয়স তখন কম ছিল, তবুও বলতাম- ইন্দিরা গান্ধীর ধর্মনিরপেক্ষতা এবং রাজীব গান্ধীর মুসলিম পার্সোনাল ল, সুদূর ভবিষ্যতে হিন্দু জাতিকে অস্তিত্ব সঙ্কটে ফেলে দেবে। আমার মুখে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারের সমালোচনা শুনে, হিন্দুরা গালি দিয়ে বহুবার আমাকে তেড়ে মারতে এসেছে। ঐ সমস্ত লোকদের মধ্যে অনেকেই, বাংলাদেশ ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়ার পর, আমার সঙ্গে দেখা হলে বলেছে, তোমার কথাই ঠিক ছিল, হিন্দু জাতির প্রধান দুশমনদের আমরা তখন চিনতে পারিনি। বাংলাদেশের মুসলমানরা কংগ্রেসকে একদম পছন্দ করত না; তারা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য কংগ্রেসকে দায়ী করতো এবং তারা বিশ্বাস করতো, পাকিস্তান ও আমেরিকা মিলে,পাকিস্তান ভাঙ্গার এমন প্রতিশোধ নেবে- ভারত ভেঙ্গে একেবারে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের মধ্যে কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত কম ছিল,তারা ছিল কমিউনিজমের ভাইরাসে আক্রান্ত। পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের মধ্যে কংগ্রেসের মোটামুটি জনপ্রিয়তা ছিল, তবে আজকের দিনে পশ্চিমবঙ্গে যত মুসলমান এবং তাদের যে ভয়ঙ্কর দাপট, ওই সময় এত মুসলমান দেখিনি, আর তাদের এতো দাপটও ছিল না।
বাংলাদেশ থেকে যে হিন্দুরা বিষয় সম্পদ ও মা-বোনের সম্ভ্রম হারিয়ে পশ্চিমবঙ্গে এসে আশ্রয় নিয়েছে, তারা যখন ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে গলাবাজি করতো- ভীষণ বিরক্ত লাগতো। আরও বেশী বিরক্ত লাগত, যখন দেখতাম- ক্রিকেট খেলায় ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জয়ী হওয়ার পর, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে আনন্দ মিছিল বের হচ্ছে। তবে আজকের জামানায় যেরকম, পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়ে বের হওয়া মিছিল থেকে হিন্দুদের জানমালের উপর হামলা হচ্ছে- সেটা তখন হতো না।
একসময় যারা কংগ্রেসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতো, তারা ও তাদের বংশধররা এখন বিজেপিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, তাদের অনেকেই জানেনা যে,বিজেপি একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল। দ্বিতীয় টার্মে বিজেপি দু'টো অত্যন্ত ভালো কাজ করেছে, একটি ৩৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি; অপরটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে, আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী গ্রামবাসীসহ, কমপক্ষে পাঁচ কোটি ছিন্নমূল হিন্দু, এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে যে শুধু উপকৃত হবে,তা-ই নয়, এই আইনের মধ্য দিয়ে তারা মানবিক স্বীকৃতি লাভ করবে। যে কারণে আমি বিজেপির নিকট কৃতজ্ঞ।
ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের নিকট আমি আরেকটি আবেদন জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব দুই সন্তান নীতির আইন প্রণয়ন করুন এবং কঠোর ভাবে সেই আইনের বাস্তবায়ন করুন। যদি গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি নিতে হয়, তবুও এই আইন প্রণয়ন করতে পিছপা হবেন না। এই আইন প্রণয়ন করতে যদি আপনারা ব্যর্থ হন, আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে পৃথিবীর বুক থেকে হিন্দুজাতির নামা নিশানা মুছে যাবে।
কৃত্তিবাস ওঝা
১৯/১০/২০২০খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................