জীহাদী যুদ্ধ পদ্ধতি

"জীহাদী যুদ্ধ পদ্ধতি" 
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

'তৈমুর' নাম তো শুনেছেন। না আমি বর্তমান এক ভারতীয় অভিনেতা অভিনেত্রী র ছেলে 'তৈমুর' এর কথা বলছি না। আমি 'জেহাদী তৈমুর' এর কথা বলছি। তার বাড়ি ছিলো সমরখন্দে। অতি অবশ্যই সেই জেহাদী তৈমুরের অনুপ্রেরনায় 'ভারতের বর্তমান তৈমুর' তার নাম পেয়েছে ।

জেহাদী তৈমুর বলেছিলো, আমি ভারতে গিয়েছিলাম শুধু দুটি কারনে, এক, অবিশ্বাসীদের সংগে যুদ্ধ করে তাদের খতম করা। আর দুই, ইসলামের সৈনিক রা অবিশ্বাসীদের সম্পত্তি লুট করে সম্পদ পাবে”. He said, “My main objective in coming to Hindustan has been to accomplish two things. The first was to war with the infidels, the enemies of the Mohammadan religion.---- The other was that the army of Islam might gain something by plundering the wealth and valuables of the infidels”.

৭১২ সাল থেকে শুরু করে ভারতে যে ‘ইসলামিক জিহাদ শুরু হয়েছে তার আসল উদ্দেশ্য এবং সেই জিহাদের নিয়ম কানুন আজো অপরিবর্তিত আছে। প্রথমে আরব থেকে এবং পরে সেন্ট্রাল এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান থেকে আসা তুর্কি, পরে আফগানিস্তান থেকে আসা আফগান এবং অতি অবশ্যই যে মোঘল বংশ আমাদের দেশ শাসন করেছে, ইংরেজ রা এসে ভারতীয় হিন্দুদের সেই বর্বরদের হাত থেকে উদ্ধার না করা অবধি, সেই মোঘল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ‘বাবুর’ ( যিনি নিজেকে এই চেংগিজ খান (মায়ের বংশ) এবং তৈমুরের (বাবার বংশ) বংশধর বলে গর্ব করতেন) এই একই উদ্দেশ্য নিয়ে তার জন্মস্থান , বর্তমান উজবেকিস্তানের ফারগানা থেকে ভারত বর্ষে অবতীর্ন হন। 

চেঙ্গিজ খান ইসলাম গ্রহন করেনি কিন্তু তৈমুর ছিলো গোড়া মুসলিম এবং উপাধী নিয়েছিলো “ ইসলামের তলোয়ার “ ( Sword of Islam).( সম্প্রতি  ভারতে যে তৈমুর শিশু অবস্থা থেকে বড়ো হছে অতি যত্নে, আমি তার সার্বিক কল্যান কামনা করি) । 

জেহাদ , লুট আর ইসলামে অবিশ্বাসীদের মারা এই ছিলো তৈমুরের জীবনের এক মাত্র লক্ষ্য। 

বেনেডিক্ট খ্রীষ্টান ঐতিহাসিক ডম ডেভিস এবং ডম  ভেসেথহাস “আরবী এবং পরে তুর্কীদের দেশ দখল করার জেহাদি পদ্ধতি নিয়ে লিখেছেন, 
“এই জেহাদীরা লুটপাঠ করা এবং অঞ্চল দখল করার মধ্যে কি তফাত তা খুব ভালো করেই জানতো। কিন্তু এই দুই উদ্দেশ্য একে অপরের সংগে যুক্ত। জেহাদীরা তাদের প্রথম আক্রমনে কোনোদিন দেশ দখল করে না। এটাকে বলা যায় “নজরদারি প্রচেষ্টা”। কিছু যুদ্ধবাজদের নিয়ে এক জায়গায় ঢোকো, লুট পাঠ করো, আর লক্ষ্য করো পরে এই জায়গা দখল করে লাভ কি লোকসান। তাছাড়া এই অঞ্চল দখল করতে হলে কেমন ভাবে তৈরী হতে হবে সেই খবরাখবর নেওয়া। কোনো কোনো জায়গায় বার বার লুট পাঠ করার পিছিনে এটাই মুখ্য ঊদ্দেশ্য “সার্বিক জেহাদের সম্পুর্ন প্রস্তুতি” ( মুহাম্মদ কাসিমের সিন্ধু জয় , গজনীর মাহমুদের ১৭ বার ভারত আক্রমন, ঘোরীর ৪ বার) , সৈন্যদের সেই মতো তৈরী করা। এই ‘বারে বারে ছোট ছোট আক্রমন’ কে বলে “রিজিয়া”। এই রিজিয়া হতে হবে এমন নিষ্ঠুর, বর্বরতায় পরিপুর্ন যে স্থানীয় লোক জনের মনে এক তীব্র ভীতির সঞ্চার হবে। ( ইহাছেঁ দুরু দূর গাঁও মে সব বলতে হ্যায়, বাচ্চা, শো যা নেহিতো গব্বর আ জায়েগা—তো বাচারা গব্বরের ভয়ে ঘুমিয়ে পড়ে”)। এই ভাবে বিভিন্ন সময়ে ‘রিজিয়া’ করে একটি দেশের অভ্যন্তরে ছোট ছোট কিছু অঞ্চল তৈরী হয়ে যায়। সেই রিজিয়ার ফলে সেখানকার মানুষ এই জেহাদী লুটেরাদের ভয়ে সিটিয়ে থাকে। বহু মানুষ তাদের পুর্বপুরুষের ভীটে মাটি ফেলে অন্য নিরাপদ অঞ্চলে চলে যায় (যেমন আমার বাবারা এসেছিলেন, পুর্ব বংগের ঘর ছাড়ারা এসেছিলো—যদিও এই উদবাস্তু রা বোঝেনি এই নিরাপত্তা আর নেই এবং আর ১৫-২০ বছরের মধ্যে—আমি ভাগ্যিস তখন আর থাকবো না--- আবার নিরাপদ অঞ্চলের খোজে বেড়িয়ে পড়তে হবে), শহরে চলে যায়। 

 স্পেনের গ্রেনেডার চৌদ্দ শতাব্দীর লেখক লিখলেন, অবিশ্বাসীদের সম্পত্তি কেড়ে না নিতে পারলে তাদের শষ্যে, ঘর বাড়িতে আগুন লাগানো, তাদের গবাদি পশুকে মেরে ফেলা জেহাদে অনুমোদিত”। ঐতিহাসিক আল-মাক্কারী সপ্তদশ শতাব্দীতে লিখছেন, রিজিয়ার মাধ্যমে তৈরী অঞ্চল গুলোতে ‘আরবী ঘোড়ায় চড়ে আসা এবং সাগর পথে আসা জেহাদীরা ভারতের হিন্দুদের মনে ভয়ের বীজ পুতে দিলো, পরে সেই অঞ্চল থেকে ভারতে ইসলামী শাসন এবং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতে কোনো অসুবিধা হলো না। হিন্দুরা মুসলমানদের সংগে যুদ্ধ করা দূরে থাকুক তাদের ভয়ে সিটিয়ে শান্তি কামনা করলো (১৯৪৭ সালের গান্ধীর কথা মনে করুন)”।  

৭১২ সালে কাসিমের সিন্ধু জয় থেকে শুরু করে মোঘল সাম্রাজ্য স্থাপনের মধ্যে সেই জেহাদী পরিকল্পনা এবং ভারতীয় হিন্দুদের ভীত সন্ত্রস্থ পলায়নি মনোবৃত্তি (যঃ পলায়তি স্বঃ জীবতি) কাজ করে চলেছে। সেই পলায়নি মনোবৃত্তিতে আজো বিন্দু মাত্র খামতি নেই।। 

পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার এস কে মালিক , জেনারেল জিয়া উল হকের সেনাপতি, এই ‘জেহাদী পদ্ধতি’ (ভয়ংকরতা দিয়ে ভয় সৃষ্টি এবং দখল করা, ধর্ম পরিবর্তন করা) নিয়ে একখানি বই লিখেছেন। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রসিডেন্ট, জিয়া –উল –হক সেই বই এর ভুমিকা লিখেছেন। তাছাড়া পাকিস্তানের পুর্বতন এডভোকেট জেনারেল ‘আল্লা বক্স কে ব্রোহি, সেই বই এ বিস্তৃত আলোচনা লিখেছেন এই ‘জেহাদী পদ্ধতি’ নিয়ে। এই বই টি ইসলামিক দেশে বহুল প্রচারিত এবং পঠিত। ইংরেজী, উর্দু এবং আরবী ভাষায় পাওয়া যায়। কাশ্মীরের মৃত সন্ত্রাসীদের পকেটে এই বই অনেক পাওয়া গেছে। এই বই এর মুল বক্তব্য “ শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চার করা শধু একটি পদ্ধতি ই নয়,এটি একটি শেষ কাজ। এটি করা হলে আর কিছু করা বাকী থাকে না”।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted