✍আমাগো একখান দ্যাশ আসিলো
🚩বাঙ্গালার সশস্ত্র বিপ্লবীদের লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ বিরোধিতার পাশাপাশি হিন্দু রাজত্বের পুনরুদ্ধার।
বিপ্লবীরা ব্রিটিশ বিরোধিতার সঙ্গে সঙ্গে হিন্দু উত্থানের লক্ষ্য নিয়েই আন্দোলন করেছিলেন। বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ হোক বা কমরেড মুজাফফর আহমেদ প্রত্যেকেই নিজ লেখনীর দ্বারা এই বক্তব্য সমর্থন করে গিয়েছেন।
🚩ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত বিপ্লবী সংগঠন 'অনুশীলন সমিতি'র সদস্যপদ নেওয়ার প্রথম শর্তই ছিল হিন্দু হওয়া। দীক্ষা নিতে হতো বুড়োশিব মন্দির, রমনা কালীমন্দিরের মতো যেকোনো মন্দিরে।
“হিন্দু নয় কিংবা যার মধ্যে হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনাে বিদ্বেষ আছে এমন কোনাে ব্যক্তিকে [ সমিতিতে ] ভর্তি করা হবে না।” [“No one is to be admitted who is a non-Hindu or who has any spite against the Hindus."]
'অনুশীলন সমিতি'র আরও একটি অনুশাসনের উল্লেখ পাই আমরা James Campbell Ker, I.C.S. (Political Trouble in India 1907-17, Printed in Calcutta, 1917.) -এর লেখায়:-
"...যদি হিন্দুরা তাঁদের দৃঢ়তা ও জাতীয় গৌরব পরিত্যাগ করে এবং মু$লমানদের সঙ্গে গলায় গলায় ভাব করে তাদের বন্ধুত্ব যাচনা করার মতাে অধঃপাতে যায় তাতে মু$লমানদের বাড় বেড়ে যাবে, আর তা থেকে ভালাে কিছু তাে বা'র হয়ে আসবেই না, শুধু মন্দই ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। যে জাতি তাদের জাতীয় গৌরব, জাতীয় মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব, আর, জাতীয় দৃঢ়তা, অচল অটল ভাব ও অহঙ্কারেব সংরক্ষণ করতে পারে না, পক্ষান্তরে, চপলতা, হীনতা ও অবাধ্যতা প্রদর্শন করে বেড়ায় সে জাতি কখনও অন্য জাতিদের দ্বারা সম্মানিত ও পূজিত হতে পারে না।…”
“...But if the Hindus then abandon their firmness and national glory, and sink so low as to court friendship with the Mahom€dans by being hand in glove with them, the Mahom€dans will be puffed up and no good but only evil will be brought about. That nation which cannot preserve its national glory, national greatness and dignity, and national firmness, steadfastness and pride, and on the contrary exhibits levity, baseness and waywardness can never be respected and worshipped by other nations…”
[বিখ্যাত বিপ্লবী সংগঠন 'অনুশীলন সমিতি' সম্পর্কে আমাদের পেজের আরও একটি লেখা পড়ুন: https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=208593067502135&id=108458550848921&sfnsn=wiwspmo ]
🚩এবং এই হিন্দু পুনরুত্থানবাদী ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবীরা অনুপ্রেরণা লাভ করেছিলেন অন্যান্য পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে সাথে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকেও। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মহাশয়ের লেখা ‛আনন্দমঠ’ হিন্দু পুনরুত্থানে বিশ্বাসী ব্রিটিশ বিরোধী এই বিপ্লবীদের কাছে ছিল এক পবিত্র গ্রন্থ। এছাড়াও বঙ্কিমের অনুশীলন তত্ত্ব প্রবল প্রভাব ফেলেছিল বিপ্লবীদের মধ্যে।
🚩এবং স্বাভাবিক ভাবেই কমিউনিস্ট তাত্ত্বিকদের দ্বেষ ছিল সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রতি।
‛মার্কসবাদী’ পত্রিকার যষ্ঠ সংকলনে (ডিসেম্বর ১৯৪৯, পৃ ১৭২-১৯৪) গণেন বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যাচার করেছেন:-
“...বঙ্কিমচন্দ্রের শিক্ষার উদ্দেশ্য ছিল বৃটিশ-বিরােধী গণতান্ত্রিক কৃষি বিপ্লবকে বানচাল করা; তার শিক্ষার ফলে তাই বৃটিশ শাসনের বুনিয়াদটাই হয়েছিল শক্তিশালী।…”
“...বঙ্কিমের আবেদন শুধু প্রগতির পথরোধ কারীদের কাছেই।…”
🚩প্রসঙ্গত উল্লেখ্য কমিউনিস্টরা এই সশস্ত্র বিপ্লবীদের হতাশাগ্রস্ত 'সন্ত্রাসবাদী' বলে উল্লেখ করতেন।
কমিউনিস্ট লেখক দ্বারা 'সন্ত্রাসবাদী' শব্দটির ব্যবহারকৌশল কিন্তু প্রণিধানযোগ্য বিষয়। ব্রিটিশদের কাছে তাঁরা 'সন্ত্রাসবাদী' হতেই পারেন। কিন্তু ভারতীয়দের কাছে তাঁরা কেন 'সন্ত্রাসবাদী' হিসেবে পরিগণিত হবেন? যদিও কমিউনিস্টরা কোনোদিনও নিজেদের ভারতীয় ভেবেছেন কিনা সেটিও প্রশ্নযোগ্য বিষয়।
🚩এদিকে বিপ্লবীদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলার জাস্টিফিকেশন দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কমরেড মুজাফফর আহমেদ অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে।
“...কিন্তু একটা বড় মুশকিল হয়েছে এই যে সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবীরা আজও মনে করেন তাঁরাই "একমাত্র বিপ্লবী", তাঁরা ছাড়া আর কেউ বিপ্লবী নন। তাঁরা যে পন্থা গ্রহণ করেছিলেন তাতে তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বিপ্লবী নামই দেওয়া যায়। আমার লেখায় আমি এই কথা ব্যবহার করি। অন্য শত শত লোক তাই লেখেন। নিজেদের একমাত্র বিপ্লবী বলা গোঁড়ামি ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন তাঁরা বৃদ্ধ হয়েছেন, একদিন তাঁদের সকলেই মরে যাবেন, তখন দেশে কি কোনাে জীবিত বিপ্লবী থাকবেন না? "বিপ্লবী" কথাটি কি শুধু তাঁদের স্মৃতিতেই ব্যবহার করতে হবে ?...”
🚩“...আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়
লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।…”
সম্ভবত কমিউনিস্টরা এই সাধারণ কথাটি জানতেন না। তাই তাঁরা যেন তেন প্রকারেন নিজেদের হোলিয়ার দ্যান দাউ প্রমাণের উদ্যেশ্য নিয়ে প্রায় সমস্ত কৃতি ভারতীয়র নামে নোংরামি করে গেছেন। তবুও আজও 'বিপ্লবী' বলতে আমরা সশস্ত্র সংগ্রামীদেরই বুঝি এবং শ্রদ্ধাসহকারে স্মরণ করি তাঁদের।
তথ্যসূত্র:
★James Campbell Ker, I.C.S. (Political Trouble in India 1907-17, Printed in Calcutta, 1917.)
★"আমার জীবন ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি”, কমরেড মুজাফফর আহমেদ (ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, অখন্ড সংস্করণ, ১৯৬০)
★'আত্মকথা', পুলিন বিহারী দাস
★জেলে ত্রিশ বছর, ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................