রাশিয়ার জারতন্ত্র ও বলশেভিক-তন্ত্র একই দানবের পাশমােড়া দেওয়া।

যে বলশেভিকরা 'বিপ্লবের স্বার্থে' ১৩ বছরের বালক এলেক্সেই এবং ১৯ বছরের মেয়ে মারিয়াকে নির্দয়ভাবে হত্যা করতে পারে তারা আর যাই হল জারদের থেকে কোনোমতেই উন্নত ছিল না। তার উদাহরণ পরবর্তীকালেও পাওয়া গেছে। বলসেভিকদের সঙ্গে কেউ সহমত পোষণ না করলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি দেওয়া হতো। অর্থাৎ, রাশিয়ায় ওই বহুলচর্চিত 'বিপ্লব' আসলে ক্ষমতার হস্তান্তর বই আর কিছু নয়। 

তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ''রাশিয়ার জারতন্ত্র ও বলশেভিক-তন্ত্র একই দানবের পাশমােড়া দেওয়া। পূর্বে যে ফোড়াটা বাঁ হাতে ছিল আজ সেটাকে ডান হাতে চালান করে দিয়ে যদি তাণ্ডব নৃত্য করা যায়, তাহলে সেটাকে বলতেই হবে পাগলামি।" 

এই ক্ষমতার হস্তান্তরকে নিয়ে মাতামাতি করা লোকজনকে ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন, "যাদের রক্তের তেজ বেশী, এক-এক সময়ে মাথায় বিপরীত রক্ত চড়ে গিয়ে তাদের পাগলামি দেখা দেয়―কিন্তু সেই দেখাদেখি নকল পাগলামি চেপে বসে অন্য লােকের, যাদের রক্তের জোর কম। তাকেই বলে হিস্টিরিয়া। আজ তাই যখন শুনে এলুম সাহিত্যে ইশারা চলছে 'মহাজনকে লাগাও বাড়ি', 'জমিদারকে ফেলাে পিষে', তখনি বুঝতে পারলুম, এই লালমুখো বুলির উৎপত্তি এদের নিজের রক্ত থেকে নয়। এ হচ্ছে বাঙালীর অসাধারণ নকল নৈপুণ্যের নাট্য, ম্যাজেন্টা রঙে ছােপানোে, এর আছে উপরে হাত-পা ছোড়া, ভিতরে চিত্তহীনতা।"

স্বাভাবিক ভাবেই কমিউনিস্টদের গাত্রদাহের কারণ এইসব লেখাগুলি। 

তাই 'মার্ক্সবাদী'র পঞ্চম সংকলনে(সেপ্টেম্বর, ১৯৪৯) রবীন্দ্র গুপ্ত ছদ্মনামে 'বাংলা প্রগতি সাহিত্যের আত্মসমালোচনা' শিরোনামে কমরেড ভবানী সেন লিখলেন: 
“...রবীন্দ্র দর্শনই ভারতীয় শাসকশ্রেণীর দর্শন। রবীন্দ্র দর্শনকে আক্রমণ করতে হবে শাসকশ্রেণীকে পরাস্ত করার জন্য। রবীন্দ্র সাহিত্যের সঙ্গে মার্কসবাদের বিরােধ এত প্রচণ্ড যে প্রগতির শিবিরে তার স্থান হতে পারে না। রবীন্দ্র সাহিত্য হােল প্রগতির শিবির থেকে মানুষ ভুলিয়ে বের করে নিয়ে যাবার মােহিনী মায়া।..”

***

তথ্যসূত্র: 
১) ধনঞ্জয় দাশ সম্পাদিত "মার্ক্সবাদী সাহিত্য বিতর্ক", প্রথম খন্ড
২) কালান্তর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লেখণী © আমাগো একখান দ্যাশ আসিলো

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted