*আমরা খালি টিএমসি-কে দোষ দিই মুসলমানদের মাথায় তোলার জন্য।
*দেখুন, সিপিএম ক্ষমতায় থাকার সময়ে কি সাংঘাতিক সর্বনাশ করে গেছে :
১৯৮৬ সালে NPE(National Policy on Education) রুপায়ন এর ফলে শিক্ষা বিষয়টি যুগ্ম তালিকা (concurrent list) থেকে রাজ্য তালিকা তে প্রবেশ করে।অর্থাৎ রাজ্য তার ইচ্ছেমত সিলেবাস বানানোর অধিকার পায়। সুযোগ হাতে আসামাত্র রাজ্য সরকার কাজে লেগে পড়ে। হ্যাঁ এই ethically correct লেখার কাজ এবং সেই ইতিহাস ঠিক কেমন হওয়া উচিত তার একটি নমুনা আমরা ১৯৮৯ সালের তৎকালীন বামপন্থী সরকারের একটি সার্কুলার *(Circular No. SYL/89/1*) থেকে পাই। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়।
*Muslim rule should not attract any criticism. Destruction of temples by Muslim invader and rules should not be mentioned.*
কি চমকে উঠলেন?১৯৮৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক জারি হওয়া এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিকৃত *সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের নির্দেশিকা দেওয়া হয় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য কিভাবে ইতিহাস লিখতে হবে এবং এই নির্দেশিকার প্রধান শর্ত গুলি ছিল যে ভারতের মুসলমান শাসনের নেতিবাচক সমালোচনা করা যাবে না এবং মুসলমান হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছে তা কোনোভাবেই উল্লেখ করা যাবে না।*
এই বামপন্থী সরকারের শাসনে মধ্যযুগের ইতিহাস কে কতটা বিকৃত করা হয়েছে তার কিছু নমুনা দেওয়ার প্রয়াস করছি।বিকৃত তালিকার খুব সামান্যই এখানে আলোচনা করা যেতে পারে। রাধেশ্যাম ব্রহ্মচারী লেখা "মিথ্যার আবরণে দিল্লি আগ্রা ফতেপুর সিক্রি" বইটি থেকে কিছু মূল্যবান উদ্ধৃতি এখানে রাখছি।
"...... মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ যেসব ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে নবম শ্রেণীর পাঠ্য যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে সেই বইগুলোর মধ্যযুগের ইতিহাসের অধ্যায়ে কিছু কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা এই পরিবর্তনগুলো সুপারিশ করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এই কারণে নবম শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকগুলোর লেখক-প্রকাশকদের অনুরোধ করা যাচ্ছে যে তারা যেন তাদের বইয়ের ভবিষ্যৎ সংস্করণগুলোতে, নিচে যেমন দেখানো হয়েছে সেইভাবে অশুদ্ধ অংশগুলোকে শুদ্ধ করে প্রকাশ করেন।আর যেসব বই ইতিমধ্যে ছাপা হয়ে গিয়েছে তাতে নিম্নলিখিত অশুদ্ধ শুদ্ধ তালিকাটি জুড়ে দেন এবং সেইরকম একখানা বই যেন 78 নং রফি আহমেদ কোদোয়াই রোড, কলিকাতা-১৬ পর্ষদ অফিসে জমা দেন।"
শুদ্ধ অশুদ্ধ তালিকা থেকে কয়েকটি নমুনা নিম্নে দেওয়া হল--
১. পুস্তকের নাম:- *ভারত কথা*
লেখক-বর্ধমান শিক্ষা সমিতি শিক্ষা সংগঠন
*প্রকাশকের নাম-সুখময় দাস*
অশুদ্ধ (পৃঃ১৪১)-- *" চতুর্থত বলপূর্বক হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা একপ্রকার আক্রমণ। পঞ্চমত বলপূর্বক হিন্দু রমণীদের বিবাহ করা ও তাদের ইসলাম ধর্মান্তরিত করা ও উলেমাদের মৌলবাদের প্রসারের আর এক আক্রমণ মাত্র।"*
শুদ্ধিকরণ- *দ্বিতীয় অংশ থেকে উলেমা পর্যন্ত পুরো অংশটাই বাদ দিতে হবে।*
২) পুস্তকের নাম- *ভারতবর্ষের ইতিহাস*
*লেখক--ডক্টর নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য*
প্রকাশকের নাম--চক্রবর্তী এন্ড সন্স
ক)অশুদ্ধ (পৃ ৮৯)-- *সুলতান মামুদ ব্যাপক হত্যা লুণ্ঠন ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম করেছিলেন*।
শুদ্ধ:-সুলতান মামুদ ব্যাপক হত্যা লুণ্ঠন ধ্বংসাত্মক কাজকর্ম করেছিলেন তার কোন প্রমাণ নেই।
অর্থাৎ পূর্ববর্তী লাইনটি সাথে " কোন প্রমাণ নেই"কথাটি যুক্ত করে দিতে হবে।
খ) অশুদ্ধ (পৃ ৮৯)-- *সোমনাথ মন্দির লুন্ঠন করে সে প্রায় দু'কোটি দিরহাম (স্বর্ণমুদ্রা) মূল্যের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গিয়েছিলেন।সোমনাথের শিবলিঙ্গ গজনীতে নিয়ে গিয়ে সেখানকার মসজিদে তা সিঁড়ির মতো ব্যবহার করেছিলেন।*
শুদ্ধ- সোমনাথের শিবলিঙ্গ গজনীতে সিঁড়ির মতো ব্যবহার করেছিলেন লাইনটা সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে।
গ) অশুদ্ধ(পৃ ১১২)-- *মধ্যযুগের হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কের ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় ছিল। ভারতিয়দের মৃত্যু অথবা ইসলাম এই দুয়ের মধ্যে একটা বেছে নিতে হতো।*
শুদ্ধ-সম্পূর্ণটাই বাদ দিতে হবে।
৩) পুস্তকের নাম-- *ভারতের ইতিহাস*
*লেখক--শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়*
প্রকাশকের নাম-নর্মদা পাবলিশার্স
ক) অশুদ্ধ (পৃ ১৩২) *বিখ্যাত ঐতিহাসিক টড এর মতে আলাউদ্দিনের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল রানা রতন সিংহের সুন্দরী পত্নী পদ্মাবতী কে হস্তগত করা।*
শুদ্ধ-- সম্পূর্ণটা বাদ দিতে হবে।
খ) অশুদ্ধ (পৃ ১৬১) *প্রথম দিকের মুসলমান শাসকরা বলপূর্বক হিন্দুদের মুসলমান করে ইসলামের সাম্রাজ্য বাড়াতে খুবই তৎপর ছিলেন।*
শুদ্ধ-পুরোটা বাদ দিতে হবে।
৪) পুস্তকের নাম- *ভারত কথা*
লেখক- *জি ভট্টাচার্য*
প্রকাশকের নাম-বুলবুল প্রকাশন
ক) অশুদ্ধ(পৃ ৪০)- *মুসলমানরা ভারতীয়দের উপর তাদের ধর্মবিশ্বাস চাপিয়ে দিতে অকথ্য অত্যাচার ও অন্যান্য অমানবিক পন্থা গ্রহণ করত।*
শুদ্ধ-পুরোটা বাদ দিতে হবে।
কি বুঝলেন?? যে ইতিহাস আমাদের ছাত্রছাত্রীরা পাঠ করছে তা ইতিহাস এর থেকেও বেশি ethically/politically correct। বলাই বাহুল্য এই উদ্ভাবিত ইতিহাস NCERT এর সেকুলার গুন্ডি টি কেও নির্লজ্জভাবে অতিক্রম করে গেছিলো। কেবল পশ্চিমবঙ্গে নয় আরও বেশকিছু রাজ্যে অনুরূপ অভিযোগ ওঠে।
.......
..........
.............
এই কারণেই হয়তো বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়ারা রমেশচন্দ্র মজুমদার যদুনাথ সরকারের নামই শোনেননি। কিন্তু এই ভাষ্যটি কি আবহমানকাল চলবে?? *বিশ্বজুড়ে তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক কমিউনিস্ট শিবিরের পতন ক্রমবর্ধমান জিহাদি সন্ত্রাস এবং সেইসঙ্গে ফসিল ফুয়েল এর বিকল্প জোরদার হবার আবহে সমগ্র বিশ্বজুড়ে এখন একটি ইসলামবিরোধী ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী ভাষ্য তৈরি হচ্ছে।* চাপা দেওয়া সত্যগুলো প্রকাশিত হচ্ছে। ইন্টারনেট তথ্য বিপ্লবের ফলে এটা আরও দ্রুত ঘটছে। মিডিয়াকে হাতের মুঠোয় রেখে আর পছন্দের ভাষ্যটি চাপিয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার অখ্যাত কুখ্যাত বিখ্যাত হবেন। আর বিখ্যাত রা হয়তো কুখ্যাত আখ্যাত হবেন।
এমন দিন কি আসবে যখন আমরা সব সত্যকেই সহজভাবে গ্রহণ করতে শিখব? চরম অপ্রিয় হলেও বাকস্বাধীনতাকে যথোচিত সম্মান দেব। মতান্তর মনান্তর ঘটাবে না।সুনির্দিষ্ট কোনো ভাষ্যে দাসত্ব করতে গিয়ে কোন ঐতিহাসিকের উপন্যাসিক হয়ে ওঠার প্রয়োজন পড়বে না। তখনই *যদুনাথ সরকারের মত ঐতিহাসিকের পুনর্জন্ম হবে*। সোচ্চার উচ্চারণে ভেসে আসবে,"আমি পরোয়া করি না সত্য প্রিয় না অপ্রিয় অথবা প্রচলিত মতের পক্ষে না বিপক্ষে, আমার বলা স্বদেশের পক্ষে গৌরবজনক হবে কি হবে না সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র বিচলিত নই, সত্য প্রচারে প্রয়োজনে ধৈর্যশীল হয়ে বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সহ্য করবো, আমি খুঁজবো সত্যকে উপলব্ধি করব সত্যকে, গ্রহণ করব সত্যকে।
অমৃতস্য পুত্রাঃ বই থেকে সংগৃহীত।
Courtesy Binoy Chakrabarty
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................