আজকের দৈনিকের লীড খবরের শিরােনাম হচ্ছে 'বাগেরহাটের নারকীয় ঘটনায় তােলপাড়'। খবরটি সে মনযােগ দিয়ে পড়তে লাগলাে। পড়া শেষ করেই সে অস্থির হয়ে উঠলাে আগের দিনের পত্রিকা পড়ার জন্য। আজকের খবরটি গতকালের ফলােআপ। রুম বন্ধ করে সে রিসেপসনে গিয়ে গতকালের পত্রিকা পড়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে সেখান থেকে লাইব্রেরীতে যাবার পরামর্শ দেওয়া হল। লাইব্রেরীতে ঢুকে সে গতকালের একটি দৈনিক টেনে নিয়ে টেবিলে গিয়ে বসলাে। খবরটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লাে অনুরাগ। মনটা তার বেশ খারাপ হয়ে গেল। তবুও সে খবরটি আরাে একবার পড়লো।
⛔⛔"...বাগেরহাটের সদর উপজেলার যাত্রাপুর
ইউনিয়নের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কোমরপুর গ্রামে শনিবার গভীর রাতে মা মেয়েসহ তিন মহিলাকে অস্ত্রের মুখে গণধর্ষণ এবং ধর্ষিত এক মহিলার স্বামীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা নিরঞ্জন ভট্টাচার্যের বাড়িতে নজিরবিহীন পৈশাচিক ঐ ঘটনার পর স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকাসহ মালামাল লুটে নিরাপদে চলে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে নিযুক্ত হত্যাকারীরা বাড়ির গৃহকর্তা নিরঞ্জনকে না পেয়ে তার ভাই তপন ভট্টাচার্যকে খুন করে। অপর ভাই পুলিশ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্যকে পিটিয়ে আহত করে। তারা তপনের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে এবং সে বাড়ির নারী পুরুষের ওপর তাণ্ডব চালায়। নিহত তপনের বাড়িতে পরিবারের শােকাহত সকলেই বাকরুদ্ধ পাথর বনে গেছে। এমন একটি হত্যাকাণ্ড এবং এতাে বড় নারকীয় ঘটনার পর পরিবারের কারও চোখে অশ্রু দেখা যায়নি। হতবিহ্বল তারা নতুন কোন আর এক ক্ষতির আশঙ্কায় যেন শঙ্কিত।
সন্ত্রাসীরা পাকা ঘর সংলগ্ন রান্নাঘরের দরজার মাটি সরিয়ে রান্নাঘরে প্রবেশ করে। নিহত তপনের স্ত্রী মানুষের পায়ের শব্দ পেয়ে স্বামী তপনকে ডাক দেন। তপন উঠে বসেই ঘরের দরজা খুলে রান্নাঘরের ভিতর প্রবেশ করতে গেলে অস্ত্রধারীরা উপর্যুপরি কুপিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। তারা তপন ও স্বপনের দুই স্ত্রী এবং স্বপনের আটচল্লিশ বছর বয়স্ক শাশুড়িকে পাশের একটি ঘরে নিয়ে যায়। গুরুতর তপন যখন মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছিল, তখন হত্যাকারীরা পুলিশ সদস্য ছুটিতে বাড়ি আসা স্বপনকেও হত্যা করতে উদ্যত হয়। স্বপনকে পিটিয়ে আহত করার পর সন্ত্রাসীরা দুই গৃহবধূ এবং তাদের এক জনের মাকে উপর্যুপরি ধর্ষণ শুরু করে। ধর্ষিতা তপনের স্ত্রী মাত্র দশদিন আগে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন। স্বামী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। কিন্তু স্বামীর মুখে এক ফোটা জল তুলে দিতে পারছিলেন না তপনের স্ত্রী। কষ্টে তার বুক ভেঙ্গে যাচ্ছিল। আর স্বামীর খুনীরা মৃত্যু পথযাত্রী স্বামীর সম্মুখেই তার দেহ খান খান করে ভেঙ্গে নিচ্ছিল। স্বামী সে দৃশ্য দেখছেন। কিন্তু কিছুই করতে পারছেন না।..."
এ পর্যন্ত পড়ে পত্রিকার পাতা থেকে সে চোখ তুললাে। কোন কথাই বলতে পারছিল না অনুরাগ। তার কান্না পাচ্ছিল একজন অসুস্থ নারী, যিনি দশদিন আগে মৃত বাচ্চা প্রসব করেছেন তার ওপর নির্যাতনের কথা ভেবে। কষ্টে অনুরাগের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে মৃত্যু পথযাত্রী স্বামীর সামনে তারই হত্যাকারীদের দ্বারা এভাবে স্ত্রীর নির্যাতনের কথা মনে করে। আস্তে আস্তে নিজের রুমের উদ্দেশ্যে লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে গেল। বিছানায় শুয়ে সেভাবতে লাগলাে মানুষ এতােটা নির্মম হয় কিভাবে। এতো মধ্যযুগীয় তাণ্ডব। এই পরিবারটি যদি হি.ন্দুনা হয়ে মুস.লমান হতাে তাহলে কি এভাবে নির্যাতন করা হতাে? সারাদেশের হি.ন্দুদের ভয় দেখিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করা হয়েছে কিনা প্রশ্ন জাগে অনুরাগের নিজের মধ্যে।
******
⛔⛔
...বাগেরহাটের হি.ন্দু পরিবারের উপর নির্যাতনের খবর পড়ার পর অনুরাগের মানসে সব দাঙ্গার কথা আজ ঘুরে ঘুরে মনে পড়ছে ।
দাঙ্গার কথা উঠলেই ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ এবং নােয়াখালির দাঙ্গার কথা মনে পড়ে যায় অনুরাগের। কলকাতা দাঙ্গার সূত্রধর ঘটে মু.সলিম লীগ কর্তৃক প্রত্যক্ষ সংগ্রাম কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে। ১৯৪৬ সনের ১৬আগষ্ট সকালে কলকাতা শহরের মানিকতলা অঞ্চলে মুসলিম লীগের সশস্ত্র কর্মী ও সমর্থকদের দ্বারা একতরফাভাবে হি.ন্দুদের ওপর আক্রমণের সে সব ঘটনার সূত্রপাত হয়। দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিকালে ময়দানে মুস.লিম লীগ নেতাদের উত্তেজক বক্তৃতা শােনার পর কর্মীরা আরাে বেশী উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ময়দানের মিটিং শেষে ফেরার পথে শহরের বিভিন্ন জায়গায় দাঙ্গা শুরু করে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে। কলকাতায় দাঙ্গা চলে চারদিন। এই দাঙ্গা চলাকালীন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী লালবাজার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে উপস্থিত থেকে পুলিশের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব নিলেও দাঙ্গার ভয়াবহতাও বিভৎসতা কমার বদলে অনেকাংশে বৃদ্ধি
পেয়েছিল। এই দাঙ্গায় সােহরওয়ার্দী স্যাঙ্গাত ছিল এসএন ওসমান ও অন্যান্যরা।
চারদিনের কলকাতা দাঙ্গায় কমপক্ষে দশ হাজার নরনারী বৃদ্ধ শিশু নিষ্ঠুরভাবে নিহত হয়েছিল। পনেরাে হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন। কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ভস্মীভূত ও লুণ্ঠিত হয়েছিল। নারীর অমর্যাদার বহু ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তারজন্য হি.ন্দুদের স্বধর্মীয়দের এবং মুসল.মানদেরও মুস.লিম অধ্যুষিত পাড়ায় বিপুল সংখ্যায় স্থানান্তর করে উপমহাদেশ বিভাগের ভিত্তি রচনা করা হয়।…
*************
⛔⛔
...এর প্রতিক্রিয়া এসে পড়ে নােয়াখালির হিন্দু.দের ওপর। দশ অক্টোবর নােয়াখালির হি.ন্দুদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে স্থানীয় মুস.লমানরা। একতরফাভাবে এখানে হিন্দুদের
ওপর নিধন ও উৎপীড়ন শুরু করা হয়। শুধু নােয়াখালি নয়, পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা, চাঁদপুর ও সন্দীপে এই দাঙ্গার ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে। নােয়াখালীতে দাঙ্গা চলে পনেরাে দিন। কিন্তু
প্রথম এক সপ্তাহ মুস.লিম লীগ সরকার দাঙ্গার ঘটনা ব্ল্যাক আউট করে দেয়। নােয়াখালীর মানুষ যখন হতাহত হচ্ছিল, নারীর সম্ভ্রম লুষ্ঠিত হচ্ছিল সেখবর প্রথম এক সপ্তাহ দেশবাসী জানতে পারেনি। জানতে দেওয়া হয়নি। নােয়াখালীর দাঙ্গায় প্রায় পঞ্চাশ হাজার নরনারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলা বাহুল্য তারা সকলেই হি.ন্দু। বহু হি.ন্দু মন্দি.র ধ্বংস ও অপবিত্র করা হয়। অসংখ্য হি.ন্দুকে বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়। বহু হিন্দু রমণীর সম্ভ্রম লুণ্ঠন করা হয়। যেসব হিন্দুনারী দাঙ্গায় তাদের স্বামী হারিয়েছে তাদের অনেককে এবং বহু তরুণী ও বৃদ্ধাকে এক শ্রেণীর মুসল.মানের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বলাবাহুল্য তা অবশ্যই জোরপূর্বক। নােয়াখালীর এই দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছিল গােলাম সারওয়ার নামের জনৈক খুচরাে রাজনীতিক, যাকে কোন কারণে সেবার মুসলি.ম লীগ নির্বাচনে টিকিট দেয়নি। গােলাম সারওয়ার তখন ঠিক করেছিল এ অঞ্চলের সংখ্যালঘুসম্প্রদায় বিশেষ করে হিন্দু.দের হত্যা করে সে বাংলার রাজনীতিতে জায়গা করে নেবে। সে সময় তার নেতৃত্বে এক হাজার হি.ন্দুকে হত্যা করা হয়েছিল।
কিন্তু তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা সে ঘটিয়েছিল হি.ন্দু রমনীদের উপর পাশবিক নির্যাতন করে। নােয়াখালী জেলার এবং চাঁদপুর অঞ্চলের কোন হিন্দু নারীকে সে সময় গােলাম সারওয়ারগণ অধর্ষিতা রাখেনি বলেই মনে করা হয়।…
***********
...পড়ার কথা মনে হতেই অনুরাগের মনে পড়ে গেল গতকাল সন্ধ্যায় ভাগ্যকূল বাজারে নুরউল হােসেনের একজন প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ভদ্রলােক তাকে কিছু কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল। কোন বই বা পত্রিকা নয়। কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট নেওয়া। একটি ওয়েবসাইটের ঠিকানাও মুদ্রিত রয়েছে কাগজগুলির প্রতিটির নীচের দিকে ছােট করে। গতকাল সেইযে হাতব্যাগে কাগজগুলি ভরে রেখেছিল আর বের করা হয়নি। আজ তা বের করে সে পড়তে লাগলাে। পড়তে পড়তে যদি ঘুম এসে যায় সেই প্রত্যাশায়।...
⛔"রাজশাহীর পবা থানা ভারত-বাংল।দেশ সীমান্তবর্তী এলাকা সােনাইকান্দির একটি মন্দিরে একদল মাদ্র।সা ছাত্র প্রবেশ করে মূর্তি ভাঙচুর করে এবং মন্দিরে রক্ষিত মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায় যার মূল্য দু'লাখ টাকার ওপরে। স্থানীয় হি.ন্দুদের এই মন্দিরটি হামলা করায় এবং প্রতিমা ভাঙচুর করায় তারা নিজেদের বিপন্ন বােধ করছে। কারণ ধর্মপ্রাণ হি.ন্দুরা নিজেদের ক্রান্তিকালে, নিজেকে যখন বিপন্ন বােধ করে তখনইম ন্দিরে গিয়ে দেবতার কাছে আশ্রয় ও অবলম্বন প্রার্থনা করে। আর সেই দেবতাকে যখন ভূলুণ্ঠিত, করা হয়, তখন তাদের আর জায়গা থাকে কই? নিজেদের তখন তারা সবচেয়ে অসহায় বােধ করে। এই অসহায় বােধ থেকেই তারা আশ্রয়ের সন্ধানে, নিরাপত্তার সন্ধানে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে বেড়ায়। বাংল।দেশের হি.ন্দুদের জন্য তিনটি পথ এখন খােলা।
এক, ধর্মবদল করে মুস.লমান হয়ে যাওয়া—যা ধর্মপ্রাণ হি.ন্দুর কাছে মৃত্যুর সমতুল্য।
দুই,আত্মহত্যা করা।
তিন, দেশত্যাগকরে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যাওয়া।
যার কোনটিই একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য সহজ কাজ নয়। এর বাইরে হিন্দুদের জন্য আর কোন পথ খােলা নেই। একটি শেষ চেষ্টা অবশ্যকরা যেতে পারে তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপপ্রয়ােগ করা। যদি তা কার্যকরীভাবে
করা যায় তাহলে হয়তাে বাংল।দেশে হিন্দুরা তাদের নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাস করতে পারবে। তারপরেও পুরােপুরি নাগরিক অধিকার তারা ভােগ করতে পারবে না। কারণ বাংল।দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা বিবর্জিত যে সংবিধান তাতে বাংলদেশের সব অমুস.লিমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আর রাষ্ট্রধর্ম ইস.লাম প্রবর্তন করায় দেশটির অমুস.লিম নাগরিকরা তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। দেশটি যেভাবে ইস.লামী মৌলবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে তাতে ভবিষ্যতে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর রাষ্ট্র ধর্ম ইস.লাম বাতিল হওয়ারও কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বরং নতুন করে আর কি কি ইসলামীকরণ করা যায় তার প্রচেষ্টা চলছে।"
⛔"শীলা বর্মণ নামেএকটি মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে পরে কেসস্টাডিতে।
চৌদ্দবছরের এই হি.ন্দু মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে এইজন্য যে, সে স্থানীয় একটি মুস.লিম ছেলে দ্বারা নির্যাতিত হয়। স্কুল থেকে ফেরার পথে তার মুখে কাপড়চাপা দিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে নিয়ে মুসলেউদ্দিন আহমেদ নামে এই ছেলেটি তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনের
বিচার চাইতে সে তার বাবার কাছে দাবী জানালে বাবা শীলাকে ঘটনাটি ভুলে যাবার পরামর্শ দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। পরে শীলা নিজেই স্থানীয় থানায় বিচার প্রার্থী হলে থানা কোন মামলা
না নিয়ে মুসলেউদ্দিনকে খবর দেয়। মুসলেউদ্দিন স্থানীয় মাদ্রাসার উঁচু ক্লাসের একজন ছাত্র। সে সদলবলে থানায় এসে বিচার প্রার্থী শীলাকে থানা থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং তিনজন মিলে আবার শীলার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরদিন শীলা আত্মহত্যা করে।"
⛔"গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার ভরতখালী কালীমন্দির ইতিহাস প্রসিদ্ধ একটি মন্দির। এই ঐতিহাসিক মন্দিরের কালী মূর্তিটি ধূলিসাৎ করে দিয়েছে স্থানীয় জামাতে ইসল।মীর
নেতাকর্মীরা। মন্দিরের পুরােহিত দুলাল চক্রবর্তী এবং মন্দির কমিটির সভাপতিকে তারা বেদম মারপিট করেছে। হামলাকারীদের অভিযােগ হচ্ছে সন্ধ্যায় নাম।জের সময় এই মন্দির থেকে পূজা করার শব্দ তাদের নাম।জের পবিত্রতা নষ্ট করে। বার বার নিষেধ করা সত্ত্বেও পূজা বন্ধ না করায় তারা মূর্তি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ঘটনার পর স্থানীয় হি.ন্দু নাগরিকরা নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন বােধ করছে। "
⛔গাইবান্ধার ঘটনার পরেই বগুড়ার একটি ম.ন্দির ভাঙ্গার খবর রয়েছে।
"বগুড়ার শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ মন্দির পনেরাে সদস্যের একটি ইসল।মী দল গভীর রাতে হামলা করে মন্দির ভেঙ্গে ফেলে এবং মন্দিরে রক্ষিত নগদ অর্থও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। স্থানীয় শেরপুর থানায় এ ব্যাপারে মন্দিরের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোেগ জানালেও পুলিশ মালামাল উদ্ধার কিংবা হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং থানা প্রশাসন থেকে মন্দির কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে তা তুলে নিয়ে আপােষ করার জন্য।
এই আপােষ ফয়সালায় থানা কর্তৃপক্ষ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সর্বাগ্রে মামলা তুলে নিতে হবে।"
এরপরের ঘটনাটি ময়মনসিংহের ত্রিশালের। ত্রিশাল নামটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনুরাগের ভেতরে একটি বিদ্যুতের চমক খেলে গেল। ত্রিশাল কবি নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজড়িত।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূর্ত প্রতীক তিনি। নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত অনুরাগ মন্ত্রমুগ্ধের মতাে শোনে। কি তার কথা, যেন মরমে মরমে পশিয়া যায়। নজরুল এই বাংল।দেশের জাতীয় কবি। নজরুলকে আদর্শ করেও যদি এদেশের সংস্কৃতির ধারা পুরােপুরি প্রবাহিত হতাে তাহলেও বাংল।দেশে এ সব ঘটতে পারে না। অনুরাগ এখন যা পড়ছে তা ঘটার কথা নয়।
⛔"ত্রিশালে চড়ক উৎসবে হি.ন্দুরা চড়ক পূজা করতে গেলে একদল ইস.লামী মৌলবাদী তাতে বাধা দেয়। তাদের বাধার কারণে ধর্মপ্রাণ হিন্দু.রা কিছুটা পিছিয়ে গেলেও পূজা করা থেকে নিজেদের বিরত না রাখায় মৌলবাদী দলটি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পূজা করে স্থানীয় পরিবেশ কলুষিত করা হচ্ছে এই অভিযােগ তুলে উপস্থিত নারীপুরুষের ওপর তারা ঝাপিয়ে পড়ে চড়ক উৎসব উপলক্ষ্যে যে সব দোকান ও ষ্টল বসেছিল তা মুহূর্তে গুড়িয়ে দেয় এবং উৎসবে আসা শত শত নারীপুরুষ শিশুর ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। প্রাণ রক্ষার্থে এ সব হি.ন্দু নারী পুরুষ শিশুরা দিকবিকিহারা হয়ে দৌড়াতে থাকে। এই অবস্থায়ও তাদের ওপর হামলা করে তারা।
ত্রিশাল থানায় হি.ন্দুরা মামলা করতে গেলে পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।"
মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার উত্তরপাড়ার পঞ্চান্ন বছর বয়স্ক একজন বিধবা মহিলার খবরে এসে অনুরাগের চোখ আটকে যায়।
⛔" কমলা রাণী নামের উক্ত বিধবা মহিলার স্বামী হরিপদ প্রামাণিক মারা যায় একদল স্থানীয় সন্ত্রাসীর হাতে। হরিপদ প্রামাণিকের নিজের জমি বাড়ি ছাড়াও স্থানীয় বাজারে একটি ঔষধের দোকান ছিল। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুণ অল রশিদ হরিপদকে অনেকদিন থেকেই চাপ প্রয়ােগ করে আসছিল সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য। কিন্তু হরিপদ রাজী না হওয়ায় একদিন রাতে বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হারুণ অল রশিদের লেলিয়ে দেওয়া গুণ্ডারা হরিপদকে হত্যা করে। হত্যার পরে তার লাশটিও গুম করে ফেলে তারা। তবে লাশ পাওয়া না গেলেও যে টর্চ লাইটটি নিয়ে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিল তা রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। স্থানীয় থানায় কমলা রাণী মামলা করতে গেলে থানা প্রশাসন কোন মামলা না নিয়ে কমলা রাণীকে উল্টা হুমকি দেয় এই বলে যে, হরিপদ প্রামাণিক রাতের অন্ধকারে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছে। কমলা রাণী থানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাজারে দেখতে পায় তার স্বামীর ঔষধের দোকান দখল করে
নিয়েছে উক্ত হারুণ অল রশিদ। সে বাজার ব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে হরিপদ গতরাতে ভারত চলে যাবার সময় এই দোকান তাকে লিখে দিয়ে গেছে। কমলা রাণী শােকে, কষ্টে, দুঃখে মুখে
আঁচল চাপা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এই ঘটনার কয়েকদিন পরে একদিন রাতে হারুণ অল রশিদ তার বাড়িতে আসে।কমলা রাণী তখন স্বামী আসন্ন শ্রাদ্ধের আয়ােজন কিভাবে করবে তা নিয়ে ভাবছিল। হারুণ অল রশিদ পাঞ্জাবীর পকেট থেকে একটি স্ট্যাম্প বের করে তাতে কমলা রাণীকে সই দিতে বলে। সে তাতে সই দিতে রাজী না হলে হারুণ অল রশিদ কমলা রাণীর শরীরের কাপড় টেনে খুলে নেয়। তাকে বিবস্ত্র করে। এরপরেও যখন কমলা রাণী সই দিতে রাজী হয় না, তখন তার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।"
কমলারাণীর প্রতি এই অমানবিক আচরণের খবরটি পাঠ করে অনুরাগ মুষড়ে পড়ে। সে আর পড়তে চায় না এসব খবর। কিন্তু পড়তে না চাইলেও আরাে একটি খবরে তার চোখ আটকে যায়।
⛔" চট্টগ্রামের ডাবল মুরিং ষ্টেশনে এসে নেমেছিল কাজল রাণী দেবনাথ নামের ছত্রিশ বছরের এক হি.ন্দুরমণী। সঙ্গে তার তেরাে বছরের কন্যা। কাজল রাণীর স্বামী স্থানীয় একটি সওদাগরী প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষকের চাকরি করে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাে রাজা মিয়া। তার অর্থ কেলেংকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজল রাণীর স্বামীর কাছে ধরা পড়ে গেলে কর্তৃপক্ষকে সে জানায়। রাজা মিয়ার চাকরি চলে যায় সওদাগরী প্রতিষ্ঠানের কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপরাধে। চাকরিচলে যাওয়ার জন্য রাজামিয়া নিজের অসততাকে দায়ী না করে কাজল রাণীর স্বামীকে দায়ী করে এবং সেই থেকে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ডাবল মুরিং স্টেশনে নেমে সে যখন রিক্সা খুঁজছিল বাড়িতে যাওয়ার জন্য, তখন একটি প্রাইভেট গাড়ি এসে তার সামনে ব্রেক করে। রাজা মিয়াকে পূর্ব থেকে কাজল রাণী চিনত। গাড়ির বন্ধ কালাে গ্লাসের ভেতর থেকে দরজা খুলে রাজা মিয়া ছোঁ মেরে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় মা ও মেয়েকে। একজন প্রত্যক্ষদশী রিক্সাচালকের কাছ থেকে এই খবর শুনে কাজল রাণীর স্বামী কিশাের দেবনাথ পাগল প্রায়। উক্ত সওদাগরী প্রতিষ্ঠানের মালিক আবদুল ওহাবের সহযােগিতায় কিশাের তার স্ত্রী ও কন্যার সন্ধান পায় প্রায় এক মাস পরে। পুলিশ রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করে। রিমান্ডে নেওয়ার পর রাজা মিয়া স্বীকার করে কাজল রাণী দেবনাথ এবং তেরাে বছরের মেয়েকে এক লাখ টাকায় সে বিক্রি করে দিয়েছে দালালের কাছে।
কিশাের দেবনাথ এ খবর শুনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে।"
⛔এইরকম অসংখ্য কেস স্টাডিতে পাতাগুলি ভরে রয়েছে। প্রতিটি খবরের সঙ্গে সূত্র উল্লেখ রয়েছে। স্থান কাল সময় এমনকি ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। এসব খবরের সত্যতা নিয়ে কোন সংশয় আছে বলে অনুরাগ মনে করেনা। কিন্তু একটি সম্প্রদায়ের উপর এভাবে যে নির্যাতন হচ্ছে তা রােধকল্পে এদেশের প্রশাসন, এদেশের সরকার কি করছে?
নাকি সরকারের মদতেই এসব হচ্ছে? অনুরাগ ঠিক বুঝতে পারছে না। ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল অনুরাগের মনটি। সে এরকম মাইজপাড়া, এরকম বাংল।দেশ দেখতে আসতে চায়নি। কিছুকিছু ঘটনা সে খবরের কাগজে পড়েছে বটে, কিন্তু তার চিত্র যে এতটা ভয়াবহ তা তার জানা ছিল না।
~(ভাঙা মঠ, সালাম আজাদ)
সত্যি লেখার অপরাধে বইটি বাংল।দেশে নিষিদ্ধ।
হ্যাঁ। আমরা প্রায় সবাই উল্লিখিত অনুরাগের মতোই। আজন্মলালিত সুশীল 'ভাইচারা' জনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে সত্যিকে স্বীকার করতেই ভয় পাই। প্রচন্ড শকড হই এইসব ঘটনার বিবরণ পড়েই। বিস্মিত হই যাদের আমরা 'এক বৃন্তের দুইটি…' ভাই ভেবে এসেছি তারা অবলীলায় এসব করেছে কিভাবে!
আমরা বিস্মিত হই, কারণ আমাদের মধ্যে আবেগটা বেশি। যুক্তিবোধ বা জ্ঞানের অভাব প্রচুর। কতজন পড়েছি আমাদের প্রতিবেশীর ধর্মগ্রন্থ? কতজন জানতে চেয়েছি ওদের কয়েক শতক ধরে চলে আসা আগ্রাসনের ইতিহাস?
নিদেনপক্ষে ক'জন পড়েছি 'পাক সার জমিন সার বাদ' , '১০০০০ এবং আরো একটি ধর্ষণ', 'ভাঙা মঠ', 'বাংলাদেশের নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়: প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ', 'লজ্জা' টাইপের নির্মোহ লেখা?
পড়তে হবে। তবেই জানবেন আমাদের প্রতিবেশীর চরিত্র। তবেই বুঝবেন আরব এবং মানুষদের মধ্যে কোনোদিন বন্ধুত্ব হয় না।
পড়ুন। জ্ঞানার্জন করুন।
আপনাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হউক।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................