একজন ইহুদি যুবকের আবিষ্কৃত ফেসবুকের কল্যানে, হিন্দুদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে; বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। অল্প কয়েক বছর আগেও হিন্দুদের স্বার্থে কথা বললে,স্বজাতি সাম্প্রদায়িক বলে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করতো; এখন ইয়াং ছেলেমেয়েরা সিংহ বিক্রমে আত্মঘাতী সেক্যুলারদের রুখে দাঁড়ায়।
তরুণ প্রজন্মের অসংখ্য জিজ্ঞাসা। পৃথক পৃথক ভাবে সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আবার একটি পোস্টের মাধ্যমেও সমস্ত প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না।
সুবিশাল হিন্দু সাম্রাজ্যের যেটুকু ধ্বংসাবশেষ অবশিষ্ট আছে, সেটুকু যদি ধরে রাখতে হয়- হিন্দু জাতির চিন্তা-চেতনায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।
ভারত রাষ্ট্রটিতে এখনো হিন্দুরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু স্বাধীনতা উত্তর ভারতের যে অঞ্চলেই হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিনত হচ্ছে, সেখানে হিন্দু নর-নারীরা তো বটেই, হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র, ধর্মগুরু, দেবদেবী, অবতার, এমনকি ভগবানরা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারছে না।
হিন্দু জাতির সামনে দু'টি পথ খোলা আছে। প্রথমটি হচ্ছে, হয় আব্রাহামিকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে টিকে থাকা, নতুবা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া। আমাদের ভাবতে হবে - আব্রাহামিকদের সামনে আমাদের দেবদেবী, ধর্মশাস্ত্র, ধর্মগুরু, এমনকি ভগবানরা পর্যন্ত কেন অসহায়? আব্রাহামিকদের কি এমন বাড়তি যোগ্যতা ― যার দ্বারা তারা দেশে দেশে হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পেরেছে।
আব্রাহামিকদের প্রধান যোগ্যতা, তারা জন্মগত সমমর্যাদায় ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে পেরেছে, জনসংখ্যা ও ভূমি বৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে পেরেছে। হিন্দুরা অগণিত দেবদেবী-ভগবান সৃষ্টি করেছে, কিন্তু ঐক্যবদ্ধ জাতি গঠন করতে পারেনি। সমাজের লোক ধরে রাখার চেষ্টা করেনি,বা এখনো করছে না। আর জনসংখ্যা কমে গেলে কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতা হারালে- ভূমি খোয়াতে হবে, এটাই স্বাভাবিক।
বহিরাগত ধর্মের লোকেরা, একজন হিন্দুর
চোখের সামনে যখন তার মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের ধর্ষণ করে, তার সমস্ত ধনসম্পত্তি কেড়ে নিয়ে ভিটেমাটি থেকে তাড়িয়ে দেয়; তখন সেই অসহায় হিন্দুটিকে সনাতন ধর্মের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা কি বলে সান্ত্বনা দেয়, সে কথা কী শুনেছেন?
আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা তখন বলে, "ঐ ধর্ষক-লুটেরা ও তোমার মধ্যে কোন প্রভেদ নাই, তোমরা অদ্বৈত সত্তা। তুমি, সে ও তারা ― সবই অভিন্ন পরমাত্মার অংশ। তুমি বিষয় বিষে মোহাচ্ছন্ন। কামনা-বাসনার কুফলে তুমি ঈশ্বর দর্শন করতে পারছ না... তুমি ধর্ষক ও লুটেরাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াচ্ছো কেন! যত মত তত পথ, সর্বধর্ম সমন্বয়... অহিংসা পরম ধর্ম ...মেরেছিস কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না..."
অন্যদিকে, মুসলমানদের গায়ে কেউ হাত তুলে দেখুক , দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান আলেমদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে, রুখে দাঁড়াবে। হিন্দুদের হাজারো জাতপাত-অস্পৃশ্যতা। খ্রিস্টান ও মুসলিম সমাজে কোনো উঁচু-নিচু ভেদ-বিদ্বেষ নেই, জাতপাত নেই, অমানবিক অস্পৃশ্যতা নেই। আব্রাহামিকরা যেরকম জাতি গঠন করতে পেরেছে, তেমনি তারা জাতি ধরে রাখতেও জানে, এজন্যই তাদের রাষ্ট্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আব্রাহামিকরা তাদের আয়ের এর একটি অংশ জাতির কল্যাণে দান করে। আব্রাহামিক সেবাকর্মীরা, সেই দানের অর্থ একত্রিত করে- বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে, দুস্থ-অসহায় স্বজাতির কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করে, মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরিচর্যা করে।
পক্ষান্তরে হিন্দুরা কী করছে? হিন্দুরা ভ্রান্ত আধ্যাত্মিক দর্শনের প্রভাবে, হিন্দু-হত্যাকারী বহিরাগত বিধর্মী সেনাপতিদের মাজারে গিয়ে অকাতরে অর্থ দান করছে, দুর্বল ভাইটাকে বাড়িছাড়া করছে, হীনবল ভাইটা প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে, ভাইয়ের শত্রু বিধর্মীর নিকট বাড়ির অংশ জলের দামে বিক্রি করে, এলাকা বা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে...
নবীন প্রজন্মের চিন্তার দুয়ার আমি খুলে দিতে চাই। তরুণ প্রজন্মকে চিন্তা করতে হবে যে, কীভাবে হিন্দু-জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করা যায়। ধর্মশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করে কিংবা অগণিত উপাসনালয় নির্মাণ করে কিন্তু,হিন্দু জাতিকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। এলাকায় যদি হিন্দুর সংখ্যা কমে যায়, ঐ সমস্ত ধর্মগ্রন্থ ও উপসানালয়ের চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট থাকবে না।
জাতপাতহীন অস্পৃশ্যতামুক্ত ঐক্যবদ্ধ হিন্দুজাতি গঠন করতে হবে। জাতীয় স্বার্থে বিভদ-ব্যঞ্জক কুলপদবী পরিত্যাগ করে, শুধু 'হিন্দু' পরিচয় দিতে হবে। 'হিন্দু হি কেবলম্'।
ধর্মান্তর রুখতে সচ্ছল হিন্দুদের দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে- দুঃস্থ দরিদ্র অসহায় স্বজাতিকে সমাজে ধরে রাখতে- যত বেশি বেশি সম্ভব সেবামূলক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে ― সে ছোট হোক, বড় হোক, অথবা মাঝারি হোক ― যে অঞ্চলে যেটা উপযোগী। মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিতে হবে- মেধাবীরাই জাতির ভবিষ্যৎ।
আপনার বাড়ির পাশের হিন্দু পরিবারটি যদি টিকে থাকতে না পারে,আপনিও টিকে থাকতে পারবেন না। হারাধনের দশটি ছেলের মতো সবই হারিয়ে যাবে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ
নেই; প্রতিপক্ষের সন্তান জন্মহার অনেক অনেক বেশি।
কৃত্তিবাস ওঝা
২৯/১১/২০২০খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................