বাংলাদেশে এখন আর বর্ণবাদ কোন সমস্যা নয়; সেখানে হামেশা মিশ্র বিবাহ হচ্ছে,শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বিদ্যমান। বাংলাদেশে মাত্র দেড় কোটি হিন্দুর বসবাস।
কিন্তু ভারতে ১১০ কোটির অধিক হিন্দু বসবাস করে। ভারতে অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের- বর্ণের ভিত্তিতে চাকরি, শিক্ষা ও অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের হিন্দুরা স্থায়ীভাবে জাতপাতে বিভক্ত হয়ে গেছে। এখন আমরা যদি বলি, বর্ণভেদ কবর দিয়ে হিন্দুদের একত্রিত হতে হবে। কেউ সেটা কানে তুলবে না; কেননা গোষ্ঠীগত রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ব্যাপার। কেউ নিজের ক্ষতি করে হিন্দুত্ববাদী হতে চাইবে না।
ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা অনেক বাড়তি রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা পায়। ফলে রাষ্ট্রীয় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত নিম্নবর্ণের হিন্দুরা, বর্ণহিন্দুদের রাষ্ট্রীয় সুবিধার বাইরে রাখতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে- নতুন পাকিস্তানের বাতাবরণ সৃষ্টি করেছে। ভারতে বর্ণহিন্দুদের সংখ্যা, মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের কাছাকাছি। প্রায় ৮৫ শতাংশ ট্যাক্স আসে বর্ণহিন্দুদের কাছ থেকে। বর্ণহিন্দুরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে, নিজেদের বিপন্ন মনে করছে এবং তাদের মেধাবী সন্তানরা রাষ্ট্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়ে, ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে সেবা দিয়ে- সেই সব দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে; কিন্তু মেধাবী প্রজন্মগুলো হারিয়ে ভারত রাষ্ট্রটি দরিদ্র-অনুন্নত অবস্থায় খাবি খাচ্ছে এবং প্রতিপক্ষের উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছে।
ভারতে বর্ণ সমস্যা অত্যন্ত জটিল। বলা হচ্ছে, বর্ণহিন্দুরা নাকি অতীতে সুযোগ সুবিধা পেয়েছে। অথচ এর কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। দীর্ঘ ইসলামী শাসনে বর্ণহিন্দুদেরও অমানবিক জিজিয়া কর দিতে হতো। সেসব না হয় বাদই দিলাম, অতীতে যদি কেউ সুযোগ-সুবিধা পেয়েও থাকে, সেজন্য তার বংশধরদের বঞ্চিত করার কোন যুক্তি নেই।
অনগ্রসর লোকদের অবশ্যই সংরক্ষণ সুবিধা দিতে হবে, তবে সেটা অর্থনীতির ভিত্তিতে, কোনভাবেই জন্মগত বর্ণের ভিত্তিতে নয়। কিন্তু কোন সরকার যদি এই বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ উঠিয়ে দিতে চায়, সে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না; সারা ভারতে আগুন জ্বলবে। উল্লেখ্য, নব্বই দশকের শেষদিকে, ভারতে যখন হিন্দুত্ববাদের প্রবল উত্থান ঘটে, তখন হিন্দুজাতিকে বিভক্ত, দুর্বল ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে, ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত সেক্যুলার প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণ প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বিজেপি, তৎকালীন কোয়ালিশন সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়। পরবর্তীতে কংগ্রেস সরকার এই সংরক্ষণ বিল আইনে পরিণত করে। ইতালিয়ান খ্রিস্টান সোনিয়া গান্ধীর সংখ্যালঘু-ডমিনেটেড সরকার, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের সুযোগ-সুবিধা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারও, কংগ্রেস সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুসলমানদের সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট বৃদ্ধি করেছে।
কে দেবে আশা! কে দেবে ভরসা!!
কৃত্তিবাস ওঝা
১২/১১/২০২০খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................