“হিন্দুরা এখন কি করবে?”—বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ
অনেকেই আমার কাছে নানা প্রশ্ন করেন, আমরা অর্থ্যাত হিন্দুরা এখন কি করবো? আমি জানি, অনেক হিন্দুরাই এখন সামান্য একটু ভাবিত যে, আমাদের অস্তিত্ব ঘোর সংকটে। এর থেকে আমরা কি করে উদ্ধার পাবো?
এই নিয়ে আমার একটা নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। আমি কোন ধর্ম গুরু নই, আমার কোনো সংগঠন নেই। বলতে গেলে ‘আমি সম্পুর্ন একা”। আমি সেটাই করি যা আমার মনে হয় বেচে থাকার এটাই একমাত্র উপায়। কিন্তু আমার ভাবনা চিন্তা অন্যের ওপরে চাপিয়ে দেবার ইচ্ছাও নেই, আর উপায় ও নেই। সংঘঠন ছাড়া কিছু হয় না। আমার তা নেই।
ইংরেজীতে একটা কথা আছে—“Offence is the best Defense”. “আত্মরক্ষার সব চেয়ে ভালো উপায় হলো আগ্রাসন”। শত্রু আমাকে শেষ করে দেবার আগে তাকে আক্রমন করা। প্রশ্ন হলো, কাকে আক্রমন করবেন এবং কেনো করবেন?
হিন্দুদের চারিদিকে যা হচ্ছে সেটা কোনো মধ্য যুগীয় বর্বরতা নয়, যে তাকে আগ্রাসনের দ্বারা ঠেকানো যাবে। যাদের জন্য সবাই, মানে হিন্দুরা আতংকিত, তারা কি ভাবে এগুচ্ছে, কবে থেকে এগুচ্ছে। কবে থেকে তা বলতে গেলে ১০০০ বছর পিছনে যেতে হয়। সে অনেক করা হয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়েছে কি? না, অনেকে মনে করেন আমার লেখা দাঙ্গায় উস্কানী দেবে। তাই সেই বর্বরতার কাহিনী তুলে ধরে কিছু লাভ নেই।
আপনারা যাদের ভয়ে ভীত, তাদের শক্তি কি? তারা একত্রিত, সংঘবদ্ধ। নিজ নিজ ধর্মকে তারা মনে প্রানে আকড়ে ধরে আছে, নিত্য উপাসনা করে, নিত্য তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করে, ধর্মীয় গুরুদের আদেশ মেনে চলে।
কিন্তু আপনি কি করেন???? কিছু না। শুধু ফেসবুকে ঝড় তোলেন। এটা করলেই কি উদ্ধার পাওয়া যাবে?????? আগে সেই প্রশ্নের উত্তর খুজুন। ইজরায়েল একটি ছোট্ট দেশ, খুব অল্প লোক সংখ্যা। কিন্তু তারা বুক উচিয়ে বেচে আছে। কারন কি? কারন তারা সংঘবদ্ধ। নিজ ধর্মের রক্ষার্থে অকুতোভয়, নিজ মাতৃভুমি ( ওদের কাছে পিতৃভুমি) রক্ষা করার জন্য জীবন বিসর্জন দিতে কোনো ভয় নেই। দেখলাম , ফেসবুকের একজন “হিন্দুত্ববাদী’ ফেসবুকে লেখা বন্ধ করেছেন। কারন কি, তিনি চাকুরী করেন। তাকে উত্তর বঙ্গে বদলীর হুমকি দেওয়া হয়েছে। সদ্য বাবা হয়েছেন। সুতরাং, এতো তাড়াতাড়ি বদলী চান না। খুজে দেখুন এই রকম কতোজন “হিন্দুত্ববাদী’ আছেন, যারা একটু বদলীর ভয়ে গুটিয়ে যান।
আপনারা ভীত, বিশৃংখল, বিভক্ত। যে হিন্দু ধর্মের কথা আপনারা বলেন, সেই বৈদিক ধর্ম বলে “বহুত্বের মধ্যে একত্ব”। অর্থ্যাত—“তিনি এক কিন্তু সৃষ্টির প্রয়োজনে বহু হয়েছেন।“ কিন্তু আপনারা, নিজের স্বার্থে সব আলাদা আলাদা হয়ে আছেন। একবার ও ভাবেন না, এই ভাবে বেশীদিন চলবে না। সংখ্যায় তো মাত্র ৬৫০ মিলিয়ন। দেশ এই একটাই। তার মধ্যে প্রকৃত হিন্দুর মতো ‘ক্ষাত্র শক্তিতে জাগরুক হয়ে ধর্ম রক্ষার্থে সংগ্রামে তৈরি কজন’।
কিসের সংগ্রাম, কার বিরুদ্ধে সংগ্রাম???? নিজ ধর্ম বাচাবার সংগ্রাম। যারা তাদের ‘একত্রিত যুথ বদ্ধ হয়ে ধর্মীয় আগ্রাসনে ব্যস্ত, তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম’। অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে এই যুদ্ধ জেতা যায় না।
আপনাদের প্রচার কই? আপনারা কি একত্রে উপাসনা করেন? নিজ ধর্ম রক্ষার্থে সারা দিনে কতো টুকু কাজ করেন?? যে সমস্ত ছোট বড়ো হিন্দু সংগঠন আছে তাদের অনুষ্ঠানে কতো টুকু তন মন ধন দিয়ে সাহায্য করেন? একজন হিন্দুর ওপরে অত্যাচার হলে কতো টূকু তার সাহায্যে এগিয়ে যান? অর্থ না দিয়ে হলেও, শস্ত্র দিয়ে না হলেও, অনুভব দিয়েই বা কতোটুকু করেন??? সেই প্রশ্ন গুলো নিজেকে করুন। মুখে বিবেকানন্দ বিবেকানন্দ বললেই তো হবে না। “মুর্খ, অছ্যুত, চন্ডাল সবাইকে কি নিজের বলে ভাবতে শিখেছেন??? না এখনো নীচু উচু এই মতে বিভক্ত হয়ে আছেন?? দিনে কতোবার ভাবেন, এই পদবী গুলো কি ভাবে হিন্দুদের বিভক্ত করে রেখেছে? সেই বিভক্তি দূর করতে কতোটুকু কাজ করছেন?
এই প্রশ্ন গুলো সঠিক ভাবে নিজের কাছে না করলে, ‘নানা ভাষা নানা মত, নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান”। এটা অন্য ধর্মীয় দের জন্য বলা নয়। সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের বিকৃত ব্যাখ্যা করবেন না। নিজের ধর্মের মধ্যেই আছে ‘নানা মত, নানা পথ, নানা ভাষা, নানা পরিধান”। কিন্তু তার মধ্যে “এক ও অদ্বিতীয়কে দেখার চেষ্টা করুন”। সংঘবদ্ধ হোন। নিজের ধর্ম কে জানুন, শিখুন, প্রচার করুন। সবাইকে (সব হিন্দুকে) নিয়ে চলুন।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................