ভাস্কর্য ও মূর্তি হারামের নামে বাংলাদেশে পূজা নিষিদ্ধের পায়তারা চলছে।

ভাস্কর্য ও মূর্তি হারামের নামে বাংলাদেশে পূজা নিষিদ্ধের পায়তারা চলছে।
<><><><><><><><><><><><><><><>

বাংলাদেশে বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য মূর্তি ভাঙার নামে ইসলামী মৌলবাদী শক্তি যেভাবে মিছিল মিটিং করছে, মিডিয়ায় টকশোতে ভাস্কর্য মূর্তি ভাঙার স্বপক্ষে কোরানের আয়াত উল্লেখ করে প্রোপাগাণ্ডা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ইসলামী চিন্তাবিদরা তার মূল উদ্দেশ্যই হল বাংলাদেশ থেকে মূর্তিপূজা নিষিদ্ধ করে হিন্দু-বৌদ্ধদের দেশত্যাগে 
বাধ্য করা।আমি মুসলিম আমি মূর্তি গড়তে আসিনি মূর্তি ভাঙতে এসেছি।


ইব্রাহিম(আঃ)মূর্তি ভেঙেছেন,আমাদের মুহাম্মদ(আঃ)কাবা ঘরে গিয়ে মূর্তি ভেঙ্গে খানখান করে দিয়েছেন।এই কথা বলে হুজুররা যখন ওয়াজ মাহফিলে বয়ান করেন তখন বাংলাদেশের হিন্দুরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যান।কারন বাংলাদেশে হিন্দুরাই মূর্তি পূজারী। সংখ্যালঘুরা তখন ভুলে যান যে তারা জন্মগত ভাবে এদেশের অধিবাসী।এদেশে তারা জন্মেছে, এদেশের মাটি আবহাওয়া আলো বাতাস গায়ে মেখে বড় হয়েছে।এদেশটা যে তার নিজের দেশ তা অধিকাংশ সংখ্যাগুরু মানুষ ভুলে যায় মানতে চায় না।এদেশের প্রতি তাদের অধিকারও যে সমান তা কেউ মানতেই চায় না।আর এই মনোভাবটা সংখ্যালঘুদের মনে সংক্রামিত এবং বিকশিত হয়েছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায়।সরকার চেয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা মানুষিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরুক।সারা বছর মূর্তি ভাঙার
মহোৎসব হয়।আজ পর্যন্ত এর কোন বিচার হয়নি।তাহলে প্রমান হয় হুজুরদের বয়ানই সঠিক।বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিল,ইসলামি জলসা,বাসে লঞ্চে বিভিন্ন হোটেলে অনবরত হিন্দু বিদ্বেষী, জাতি ধর্ম সংস্কৃতি বিদ্বেষী বক্তৃতা হেদায়েতুল বয়ান বাজতে থাকে কোন প্রতিকার নেই।দেলোয়ার হোসেন সাইদি আইনত সে কয়েদি।কিন্তু তার সাম্প্রদায়িক বক্তৃতা বাজারে সমান সমাদৃত।এক দিকে সরকার বলছে আপনারা নিজেকে সংখ্যালঘু মনে করবেন কেন? অপর দিকে হিন্দু বিদ্বেষী প্রপাকান্ডার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেই।সরকারের এই দ্বিচারিতা নিজেদের সম্মতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

অধিকাংশ মানুষ সংখ্যালঘুর সম্পত্তি নিজেদের সম্পত্তি বলে মনে করে।তারা ভাল করে জানে সংখ্যালঘুদের সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখতে পারলে, ভয়ভীতি,আত্মসম্মান নিয়ে টান দিলে সেই সম্পত্তি তাদের হয়ে যাবে।নইলে প্রিয়া সাহার বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার পরেও কোন বিচার হয়নি।পাকিস্তানিরা বুঝতে পেরেছিল হিন্দুদের সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারলে তাদের অস্তিত্ব বিলোপ করা সহজ হবে।তাই তারা শত্রু সম্পত্তি আইন এনেছিল।কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় সেই আইন ভিন্ন নামে আজো বহাল।বাংলাদেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে বলে আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।তাহলে অর্পিত সম্পত্তি নামে একটি সাম্প্রদায়িক আইন এখনো বাংলাদেশে বলবৎ রয়েছে কিভাবে? 

বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে? সংখ্যালঘু বিধর্মী মেয়ে বিয়ে করলে ইসলামি বিধানে অশেষ ছোয়াবের ভাগীদার হওয়া যায়।সে দেশে সংখ্যালঘুরা কেন নিরাপদ মনে করবে? 
মালাউন একটি জাতি বিদ্বেষমূলক গালি যা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক মুসলমান থেকে নেতা মন্ত্রিরাও ব্যাবহার করে থাকে।এই শব্দটি সংখ্যালঘুদের আহত করে।

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মূল লক্ষ ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।কিন্ত বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবিধানিক ভাবেই একটি সাম্প্রদায়িক দেশ।যেমন ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম সংযোজন কোন অসাম্প্রদায়িক নিদর্শন নয়।কারন দেশটি এখনো সাংবিধানিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।১৯৮৮সনে এরশাদ সরকার ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করেছে।ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ জড়িত।এসব সংশোধনী এসেছে বিএনপি এবং এরশাদ সরকারের আমলে। কিন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৭২এর সংবিধানের ফিরে যাওয়ার কথা বলা হলেও রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বহাল।সেখানে সংখ্যালঘুদের স্থান কোথায়।আসলে যে কারনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর শত্রু সম্পত্তি আইন বাতিল করেনি,যে কারনে স্বাধীনতার দুই বছরের মধ্যে শহীদের রক্তের উপর  দিয়ে হেটে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন ঠিক একই কারনে বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।বাংলাদেশ এখন একটি ধর্ম ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র ।

পূজা-অর্চনা ধর্মীয় অনুষ্ঠান শোভাযাত্রা পুলিশী পাহাড়ায় করতে হয় সংখ্যালঘুদের এইটুকুই স্বাধীনতা। আর প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর পর গনভবনে সংখ্যালঘু মোসাহেবি নেতানেতৃদের ডেকে ভাল ভাল কথা বলা হয়।এই হল  বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি সংখ্যাগুরুদের সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted