বাংলার কসাই নামে কুখ্যাত টিক্কা খানের বহুল আলোচিত উক্তি, "মা*লাউনকো মিটাদো" (অর্থাৎ অভিশপ্ত হিন্দুদের ধ্বংস করে দাও)।
১৯৭১সালের ৬ মার্চ টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হ'ন। তিনি ঢাকায় আসেন ৭ মার্চ। উল্লেখ্য, ১৯৬৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর গভর্নর হয়ে ঢাকা এসেছিলেন নৌবাহিনী প্রধান এস এম আহসান। ১৯৭০ সালের নির্বাচনোত্তোর উত্তাল পরিস্থিতিকে- রাজনৈতিকভাবে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। ইয়াহিয়া খান তার কথায় কর্ণপাত না করায়, পদত্যাগ করেন এস এম আহসান। এরপর ১৯৭১ সালের ৪ মার্চ সাহেবজাদা ইয়াকুব খান পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়ে ঢাকায় আসেন।
নতুন গভর্নর জেনারেল ইয়াকুব খানও পূর্বপাকিস্তানের সংকটকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য ইয়াহিয়া খানকে তাগিদ দেন। তিনিও পূর্ববর্তী গভর্নর আহসানের মতোই পদত্যাগ করতে বাধ্য হ'ন।
পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী (বদিউদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী) টিক্কা খানকে শপথ করাতে অস্বীকার করেছিলেন। বেসামরিক প্রশাসন কার্যত তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচিত বঙ্গবন্ধুর প্রতি অনুগত। পাকিস্তানের সম্ভাব্য বিরোধী দলের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো, ঢাকায় সাংবাদিকদের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আখ্যায়িত করে গিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মধ্যযুগীয় গণহত্যা ও বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পরদিন ভোরবেলা, সেই প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী গিয়ে, জেনারেল টিক্কা খানের বাসভবন গভর্নর হাউজে জড়সড় হয়ে, কাঁচুমাচু অবস্থায় বসে থাকেন। বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী ৯ এপ্রিল গভর্নর পদে কসাই টিক্কা খানকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন।
কসাই টিক্কা খান স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে গভর্নর হাউজে (আজ যা বঙ্গভবন) থাকতেন। গুরুগম্ভীর ওই লোকটার মুখ দেখে আঁচ করা যেত না যে, লোকটা এত নৃশংস প্রকৃতির। গভর্নর হাউজে তার চুল কাটার জন্য নাপিত হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন ধীরেন রায়। একদিন চুল কাটাতে বসে টিক্কা খান নাপিতের নাম জানতে চান। ভীরুকণ্ঠে ধীরেন রায় নাম বলার পর টিক্কা খান বলেন, "তোম হিন্দু হ্যায়?"
বাকরুদ্ধ ধীরেন রায়ের হাঁটুর কাঁপুনি দেখে কসাই টিক্কা খান, পুত্র খালিদকে নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, "ধীরেনের যেন কোন অসুবিধা না হয়, তুমি খেয়াল রেখো। "
সনাতন সদানন্দ দাশ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................