মহাজাগতিক মিডিয়ায় ব্রহ্মা-প্রদত্ত সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ
ব্রহ্মা ― পৃথিবী থেকে আমার প্রভাব-প্রতিপত্তি সেই কবে থেকেই বিলুপ্ত। দেশে দেশে আমার অনুসারী সনাতন ধর্মাবলম্বীরা যে কেবল কনভার্ট হয়েছে; তা-ই শুধু নয়, যারা এখনো নিজেদের সনাতন পরিচয় দিচ্ছে- তারাও আমার আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্যুত ... শুধু পৃথিবী নিয়ে বসে থাকলে কি আমার চলবে! মহাজগতের অগণিত গ্রহ-উপগ্রহে অসংখ্য বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস...
... তবে হ্যাঁ। আমি হিন্দুদের-কেই সর্বপ্রথম পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলাম, মানবিক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে।
― মিস্টার ব্রহ্মা,হিন্দুরা ব্যর্থ হল কেন? যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
ব্রহ্মা ― হিন্দুরা পৃথিবীতে কীভাবে টিকে থাকবে, কীভাবে মানবিক ধর্ম প্রচার করবে- এজন্য আমি তাদের মাথায় ব্রহ্মজ্ঞান তথা জগৎ পরিচালনার যাবতীয় জ্ঞান দান করেছিলাম। যে কারণে আদিতে সমস্ত হিন্দুদের ব্রাহ্মণ বলা হতো। কিন্তু লোভী শাসকগোষ্ঠী আমার নির্দেশ অমান্য করে, ক্ষত্রিয় বর্ণ উদ্ভবের মধ্যে দিয়ে জাতিভেদ প্রথার সূচনা করে। ক্ষত্রিয় শাসকরা গোষ্ঠীস্বার্থে নিজেদের অবতার ঘোষণা করে, হিন্দু জাতির মধ্যে বিভেদ-বিদ্বেষ-ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়। পথভ্রষ্ট শক্তিবান হিন্দুরা, দুর্বল হিন্দুদের স্পর্শ করত না, ছোঁয়া খেতে না; অথচ এরা বহু ইতর প্রাণীকে ভগবান বানিয়ে সেগুলোর যেরকম পূজা-উপাসনা করেছে; অন্ধবিশ্বাসে ইতর প্রাণীর মল-মূত্র পান ভজন করেছে, এখনো করছে... আমি হিন্দুদের পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছিলাম, তোমাদের পথপ্রদর্শন করবে একমাত্র জ্ঞান, অর্থাৎ 'বেদ'। জ্ঞান হচ্ছে জানার ইচ্ছা; বোধের বিকাশ বুদ্ধি। জ্ঞান-বুদ্ধি ছাড়া পৃথিবীতে টিকে থাকা যাবে না। ক্ষমতাধর হিন্দুরা কি করলো; তারা আমার কথা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে, কতগুলো অলীক দেবদেবী, চিটিংবাজ ধর্মগুরু, মনগড়া শাস্ত্র, যত্তসব আলতুফালতু হাবিজাবি- ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করল। ফলাফল কি দেখলে, আরব তুর্কি উজবেকরা এসে হিন্দুদের সমস্ত দেবদেবী, অবতার,ধর্মগুরু, শাস্ত্রগ্রন্থ পায়ের নিচে পিষে ম্যাসাকার করে দিলো। তাতে হিন্দুদের কি কোন শিক্ষা হয়েছে? মোটেও হয়নি।
― মিস্টার ব্রহ্মা,অন্যদিকে আব্রাহামিকদের প্রভাব-প্রতিপত্তি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। এই বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাইছি।
ব্রহ্মা ― হিন্দুদের মধ্যে ছ'হাজারের বেশি জন্মগত জাত-পাত, ভয়ঙ্কর ভেদ-বৈষম্য-অস্পৃশ্যতা। পক্ষান্তরে আব্রাহামিকরা সমমর্যাদায় ঐক্যবদ্ধ। হিন্দুরা তাদের সমাজে বাইরের লোক গ্রহণ করে না; সমাজ থেকে লোক তাড়িয়ে দেয়। পক্ষান্তরে আব্রাহামিকরা তাদের সমাজে বাইরে থেকে লোক এনে খুশি হয়। আব্রাহামিকরা সেবামূলক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে, দরিদ্র স্বজাতিকে সমাজে ধরে রাখতে জানে। মরু-দস্যুদের সমাজ থেকে যদি কেউ বের হয়ে যায়, তাকে কতল করার বিধান...
... আগে হিন্দুরা বিধবা মেয়েদের জীবন্ত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা করতো, এখন কন্যা শিশু ভ্রূণ হত্যা করছে। ফলে হিন্দু সমাজে মেয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। মেয়ের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হিন্দু শিশু জন্মহার কমে গেছে। তার উপরে মরু-দস্যুরা হিন্দু মেয়েদের বাগিয়ে নিয়ে, তাদের গর্ভে যতগুলো করে সম্ভব মরু-ডাকাত জন্ম দিচ্ছে।...এই সমস্ত কারণে দেশে দেশে হিন্দুদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে, আর আব্রাহামিকদের সংখ্যা পঙ্গপালের মতো বাড়ছে।
― মিস্টার ব্রহ্মা, এই মহাজটিল সমস্যা থেকে হিন্দুদের উত্তরণের উপায় কী?
ব্রহ্মা ― উপায় তো খুবই সহজ। হিন্দুরা অতীতে সবাই ব্রাহ্মণ ছিল, আবার তারা ব্রাহ্মণ হয়ে যাক এবং জ্ঞানমুখী হোক। তাহলে তারা টিকে তো থাকবেই; এমনকি তাহলে তারা পৃথিবী পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাছাড়া আব্রাহামিকরা যে সমস্ত কৌশল অবলম্বন করে বিশ্ব জয় করেছে, সেই সমস্ত কৌশল যদি হিন্দুরা শিখতে পারে,কাজে লাগাতে পারে,তাহলে সাফল্য আসতে বাধ্য। ৫০ লক্ষ ইহুদি ব্রহ্মজ্ঞানে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করছে; ৫০ কোটি হিন্দু ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করুক, অচিরেই জগৎ পরিচালনার লাগাম- ওদের হাতের মুঠোয় চলে আসবে।
― মিস্টার ব্রহ্মা,পৃথিবীতে আব্রাহামিকদের সাফল্যের প্রধান কারণ সমূহ কি?
ব্রহ্মা ― জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, ভূমি বৃদ্ধি, জাতি রক্ষায় রাষ্ট্রশক্তির যথাযথ ব্যবহার ...
― মিস্টার ব্রহ্মা, ধর্ষকামী মরু-দস্যুরা কি মানব সভ্যতা ধ্বংস করে ফেলবে?
ব্রহ্মা ― অধিকতর যোগ্যরাই মহাজগতে টিকে থাকতে পারবে, এটাই সৃষ্টির নিয়ম...
কৃত্তিবাস ওঝা
০৯/১২/২০২০খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................